টিপ ও সিঁদুর প্রচলনের ইতিহাস এবং এ
ব্যাপারে মুসলমানদের মিথ্যাচারের জবাব :
বর্তমান থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর
আগে, যখন সবেমাত্র পৃথিবীর প্রথম প্রাচীন একটা সভ্যতা, সিন্ধু
সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করেছে, যখন মানুষ সবে বন্যদশা থেকে বেরিয়ে
কৃষিকাজের মাধ্যমে সভ্য হতে শুরু করেছে,
যখন দলবদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে মানুষের
ব্যক্তিগত সম্পত্তি জমা হতে শুরু করেছে,
তখন সেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির সঠিক
উত্তরাধিকার নির্ণয়ের জন্য জরুরী হয়ে পড়ে কার সন্তান কে, তা
নির্ণয় করার। এজন্যই সেই সময় এক মহিলার সাথে এক পুরুষের বিবাহ ব্যবস্থার প্রবর্তন
করা হয়।
এর আগে যখন মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির
ব্যাপার ছিলো না, তখন এক গোত্রের এক বা একাধিক মেয়ের এক সাথে বিয়ে হতো অন্য আর
এক গোত্রের পুরো দলের সাথে, এই গোত্র ব্যবস্থায় কারো কোনো ব্যক্তিগত স্ত্রীর ব্যবস্থা ছিলো
না; যেহেতু একটি মেয়ের বিয়ে হতো পুরো দলের সাথে, সেহেতু
ঐ দলের সকল প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষই ছিলো তার স্বামী এবং পালাক্রমে সব পুরুষ, সব
নারীর সাথে সেক্স করতে পারতো এবং এভাবে যেসব সন্তান জন্ম নিতো, সেই
সন্তান কারো ব্যক্তিগত সন্তান হতো না,
হতো দলের সন্তান।
প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে যাদের
পড়াশুনা নেই, তারা আমার এই ইতিহাস পড়ে ধাক্কা খেতে পারেন; যারা
এমন ধাক্কা খেয়েছেন, তাদের বলছি, আমাকে গালাগালি না করে বা আমার জ্ঞান
বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন না তুলে প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে একটু পড়াশুনা করুন, তাহলে
বুঝতে পারবেন আমার কথার সত্যতা। কারণ,
আমি এটা বিশ্বাস করি যে, আমি
যা লিখি, তার যেমন এক বর্ণও মিথ্যা লিখি না, তেমনি
আমি যা লিখবো, তার উপর দিয়ে কলম ঘোরানোর ক্ষমতাও কারো নেই।
যা হোক,
যখন থেকে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি
জমা হতে শুরু করেছে, তখন থেকে মানুষ দলবদ্ধ অবস্থায় বসবাস করা থেকে দূরে সরে গিয়ে
এক পুরুষকেন্দ্রিক পরিবার ব্যবস্থায় চলে গিয়েছে এবং পরিবারের সম্পত্তির
উত্তরাধিকার নির্ণয়ে একজন নারীর জন্য একজন পুরুষের ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়ে গিয়েছে
এবং এই এক পুরুষকেন্দ্রিক পরিবার ব্যবস্থার শুরুর জন্য বিবাহ ব্যবস্থার চালু হয়ে
গিয়েছে।
কিন্তু সেই সময়, নারী
পুরুষের বিবাহের কোনো চিহ্ন না থাকায়,
বিশেষ করে নারীদের বিয়ের কোনো চিহ্ন না
থাকায়, নানা ধরণের সামাজিক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে; যেমন-
না জেনে কোনো পুরুষ হয়তো কোনো বিবাহিতা নারীকে পছন্দ করে ফেললো এবং একতরফা মন দিয়ে
ফেললো বা পছন্দ হওয়ায় কেউ হয়তো কোনো নারীকে জোর করে উঠিয়েই নিয়ে গেলো, উঠিয়ে
নিয়ে যাওয়ার পর হয়তো সে জানতো পারলো যে সে বিবাহতা;
তারপর বিবাহিতা জেনে অপহরণকারীও হয়তো
তাকে আর গ্রহণ করলো না, আবার অন্যদিকে অপহৃতা হওয়ায় তার স্বামীও তাকে আর গ্রহন করলো না, এরকম
নানা সামাজিক সমস্যা ঘটছিলো শুধু বিবাহের চিহ্ন না থাকায়। এই সমস্যা সমাধানে
সিন্ধু সভ্যতার মুনি ঋষিরা, বেদ এ বর্ণিত জ্যোতিষ শাস্ত্রের আলোকে, সংসারের
সুখ, স্বামীর কল্যাণ ইত্যাদি সকল কিছু বিবেচনা করে, বিবাহিত
হিন্দু নারীদের জন্য বের করে কিছু বিশেষ চিহ্ন,
যে চিহ্নগুলো হলো- শাঁখা, সিঁদুর, খারু, পলা
এবং ক্ষেত্র বিশেষে মঙ্গলসূত্র।
পৃথিবীর সকল জাতি ধর্মের মানুষের মধ্যে
হিন্দু বিবাহের স্থায়িত্ব বর্তমানে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। কারণ, হিন্দুদের
মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ বলে কিছু নেই;
শাঁখা,
খারু,
পলার পাশাপাশি এর মূল কারণ হলো সিঁদুর।
কেননা, একজন হিন্দু বিবাহিতা মহিলাকে প্রতিদিন স্নান করার পর দিনে
অন্তত একবার তার স্বামীকে স্মরণ করে সিঁথিতে সিঁদুর পরতে হয়, এই
যে স্বামীকে ভালোবেসে, তাকে স্মরণ কর প্রতিদিন তাকে সিঁদুর রূপে মাথায় তুল রাখা, এই
বিষয়টিই একটি হিন্দু মেয়ের সংসারকে কোনো দিন ভাঙতে দেয় না। এর বিপরীতে পৃথিবীর আর
কোন ধর্মের বিবাহিতা মেয়ে তার স্বামীকে স্মরণ করে কি প্রতিদিন কোনো কিছু করে ? করে
না। তাহলে, তাদের সংসার, লাইফ টাইম টিকে থাকবে কিভাবে ? বর্তমানে, লাখে
২/১ জন হিন্দু মেয়ের সংসার যে ভাঙছে না,
তা নয়;
ভাঙছে,
এটা ঘটছে অতি আধুনিকতার ফলে; খেয়াল
করে দেখবেন, যে সব হিন্দু মেয়ের সংসার ভাঙছে,
শাঁখা সিঁদুর সহ, হিন্দু
কালচারের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি তার অতটা শ্রদ্ধাশীল নয় ব’লেই তাদের সংসার
ভাঙছে।
যা হোক,
হিন্দু বিবাহিতা নারীকে আলাদা করে চেনার
জন্য- শাঁখা, খারু, পলার সাথে সাথে তাদেরকে সিঁদুর পড়ানো হয়। সিঁদুর হচ্ছে পৃথিবীর
সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিস। এখন আর দেখা না গেলেও,
ছোট বেলায় দেখেছি, আমার
মা কাকীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরার পাশাপাশি কপালে সিঁদুরেরই লাল টিপ পড়তো, এতে
যে কোনো মহিলাকে আরো সুন্দর দেখাতো বা দেখায়। সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া খুব কঠিন এবং
বেশি সময় সাপেক্ষ না হলেও কপালে বৃত্তের আকারে সিঁদুর দিয়ে লাল টিপ দেওয়া ছিলো বেশ
সময় সাপেক্ষ এবং কঠিন, পরে কসমেটিক কোম্পানিগুলো যখন টিপ আবিষ্কার করে, তখন
হিন্দু বিবাহিত মহিলারা কপালে সিঁদুর পরার কঠিন কার্য করার পরিবর্তে লাল টিপ কিনে
পরা শুরু করে।
লাল রং ই হচ্ছে সৌন্দর্য এবং আকর্ষণের
প্রতীক। তাই যেকোনো মেয়ে লাল ড্রেস পরলে আপনি তার দিকে দুবার তাকাতে বাধ্য। যেসব
মেয়ের আমার এই কথা বিশ্বাস হচ্ছে না,
তাদেরকে বলছি, পরীক্ষা
করার জন্য একদিন লাল ড্রেস আর একদিন সাদা ড্রেস পরে রাস্তায় বের হবেন, আর
এই দুইদিনের রাস্তার লোকের চাহনিকে খেয়াল করবেন,
তাহলেই বুঝতে পারবেন আমার কথার সত্যতা
কতটুকু।
যা হোক,
সিঁদুর এবং লাল টিপে এবং অনেক ক্ষেত্রে
শুধু লালটিপেই মেয়েদেরকে বেশ খানিকটা সুন্দর দেখায়। অবিবাহিত যুবতী মেয়েরা তো
সবসময় নিজেদেরকে সুন্দর দেখানোতেই ব্যস্ত থাকে,
তারা যখন বিবাহিত হিন্দু মহিলাদেরকে
দেখে এটা আবিষ্কার করে যে, লালটিপে মেয়েদেরকে সুন্দর দেখায়,
তখন তারা নিজেরাও লাল টিপ পরা শুরু করে।
এভাবেই এই আধুনিক যুগে কসমেটিক কোম্পানিগুলোর কল্যানে অবিবাহিত মেয়েদের লাল টিপ বা
টিপ পরা শুরু হয়, কসমেটিক কোম্পানি আবিষ্কার হওয়ার আগে সিঁদুর দিয়েই লাল টিপ
দেওয়া হোত ব’লে কোনো অবিবাহিত মেয়ে সিঁদুর দিয়ে লাল টিপ দেওয়ার কথা
স্বপ্নেও ভাবতো না। এই তথ্য মাথায় রেখে এটা মনে রাখবেন যে, টিপ
বা লালটিপ নিয়ে যে যতোই প্রাচীন কালের কাহিনী আপনাকে শোনাক না কেনো, সব
ডাহা মিথ্যা।
খুব কম সংখ্যক মুসলিম মেয়ে আছে, যারা
টিপ পরতে বা লাল টিপ পরতে পছন্দ করে না। এই পছন্দ করার ব্যাপারটা তারা জন্মসূত্রেই
বহন করে আনে, তাই ইসলামি নোংরা মাথায় ঢোকানোর আগে তারা অনায়াসেই এটা অনেক
হিন্দু মেয়ে বা মহিলার কাছে প্রকাশ করে বলে যে,
সিঁদুর বা লাল টিপে আপনাদেরকে অনেক
সুন্দর দেখায়। এই প্রকাশটাই বলে দেয় যে,
তারাও সিঁদুর বা লাল টিপ পরতে আগ্রহী। কিন্তু বাড়ির মুসলমান পুরুষদের ভয়ে তারা
তা পরতে পারে না। এমনকি আমার কাছেও অনেক মুসলিম মেয়ে বলেছে, বিয়ের
পর তারা সিঁদুর পড়তে আগ্রহী; কারণ,
সিঁদুর তাদের ভালো লাগে, এজন্য
তারা হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু মুসলিম সমাজ এটাকে পছন্দ করে না বলে, তাদের
এই চাওয়া চাওয়া ই থেকে যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা পূরণ হয় না।
ফ্রেশ,
অবিবাহিত মুসলিম মেয়ে, যাদের অ্নেকের কাছে সিঁদুর ও লাল টিপ খুব পছন্দের। এই পছন্দের কারণে
তারা যে এক সময় ইসলাম ত্যাগ কর হিন্দু সমাজে গিয়ে উঠার চেষ্টা করবে না, আর
হিন্দু কালচার পালন করার চেষ্টা করবে না,
তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই; তাই
এই প্রবণতা ঠেকাতে মুসলিম সমাজের প্রয়োজন হয়ে পড়ে কিছু গল্পের, এখন
সেই গল্পই শোনাবো আপনাদেরকে ।
ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের থেকে দখল করা
ইসলামের ইতিহাসে বাদশাহ নমরুদ ও নবী ইব্রাহিমের সংঘর্ষের কিছু কাহিনী আছে। যদিও আর
কোনো ইতিহাসে নমরুদ নামের কোনো বাদশাহর অস্তিত্ব নাই এবং নাই নবী ইব্রাহিমের, এককথায়
এই চরিত্রগুলো অনৈতিহাসিক, তবু ধর্ম পুস্তকে যেহেতু তাদের গালগল্প আছে, সেই
গল্পের সূত্র ধরেই এগোবো।
রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করায়, বাদশাহ
নমরুদ, ইব্রাহিমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এই মৃত্যুদণ্ডের কার্যকর নানাভাবে
হতে পারতো, কিন্তু কেনো আগুনের কুণ্ডলীর মধ্যে ফেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, সেটা
এক প্রশ্ন এবং একই সাথে রহস্যের, সেই রহস্যের পর্দার উন্মোচন হবে আজকের
এই পোস্টে।
যা হোক,
বাদশাহ নমরুদ নাকি নিজেকে খোদা দাবী
করেছিলো এবং ইব্রাহিম তার বিরোধিতা করেছিলো এবং ইব্রাহিম নাকি নমরুদের রাজ্যের এক
মন্দিরের বেশ কিছু মূর্তিও ভেঙেছিলো,
এই দুই অপরাধেই হয়েছিলো ইব্রাহিমের
মৃত্যুদণ্ড। আগেই বলেছি, এই মৃত্যদণ্ড কার্যকর নানাভাবে হতে পারতো, কিন্তু
সব পদ্ধতি বাদ দিয়ে অগ্নিকুণ্ডে ফেলে কেনো ?
এর মধ্যেই লুকিয়ে ছিলো ইব্রাহিমের
বাঁচার ষড়যন্ত্র, যা করেছিলো ইব্রাহিমের বাপ এবং ইব্রাহিমের একত্ববাদের প্রতি
অনুগত নমরুদের বেশ কিছু রাজকর্মচারী,
যারা প্রকাশ্যে নমরুদের বিরোধিতা করতে
পারছিলো, কিন্তু চাইছিলো যে কোনো মূল্যে বাদশাহকে ধোকা দিয়ে ইব্রাহিমকে
বাঁচাতে।
আমার ধারণা, নমরুদ
ও ইব্রাহিমের ঘটনা সম্পূর্ণভাবে একটি বানানো কাল্পনিক ঘটনা, মুসা
নবীর সময় কোনো কারণে জনগণকে ধোকা দেওয়ার জন্য এই ধরণের অলৌকিক কাহিনী বানিয়ে
প্রচার করার দরকার হয়ে পড়েছিলো। যদি ধরে নিই যে,
এই ঘটনা সত্য, তাহলে
ইব্রাহিমের মতবাদের প্রতি অনুগত রাজকর্মচারীদের বুদ্ধিতে নমরুদ, ইব্রাহিমকে
আগুনে পুড়িয়ে মারার প্ল্যানকে সমর্থন করে এবং তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজেই তাদের
ষড়যন্ত্রে পড়ে ধরা খায়।
চিতায় আমরা একটি মৃত মানুষকে পোড়াতে
হরহামেশায় দেখি, এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে একটি জীবিত মানুষকে পোড়াতে আর কত
বড় অগ্নিকুণ্ডের প্রয়োজন হবে ? একটা ৮/১০ ফুট ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে
তার মধ্যে ইব্রাহিমকে ফেলে দিলেই তো তার কেল্লাফতে। কিন্তু না, তার
জন্য খোলামাঠে এত বড় অগ্নিকুণ্ড জ্বালানো হয়,
যার মধ্যে ইব্রাহিমকে ছুঁড়ে মারার জন্য-
পার্কে বাচ্চাদের খেলার জন্য যেমন সরল দোলক থাকে,
যার একপ্রান্তে চাপ দিলে অন্য প্রান্ত
উঠে যায় আবার সেই প্রান্তে চাপ দিলে অপর প্রান্ত উঠে যায়, এমন
যন্ত্র বানানো হয়েছিলো, কারণ আগুনের তাপে অগ্নিকুণ্ডের কাছে গিয়ে নাকি ইব্রাহিমকে
অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছিলো না!
যা হোক,
শেষ পর্যন্ত ঐ ছুঁড়ে মারা যন্ত্রের
সাহায্যে ইব্রাহিমকে ঐ আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়,
কিন্তু আল্লার নির্দেশে ঐ অগ্নিকুণ্ডের
মাঝখানে ফুলের বাগানের মতো তৈরি হয় এবং আগুন নিভে দেখা গেলো বালক ইব্রাহিম ঐখানে
বসে খেলা করছে!
এটা কিভাবে সম্ভব হলো ?
যত বড় অগ্নিকুণ্ডের কথা বলা হয় আর তাতে
যেভাবে ইব্রাহিমকে ছুঁড়ে মারা কথা বলা হয়,
এটা সত্য হলে, আগুনের
দরকার ছিলোই না, ইব্রাহিম অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে
এমনিই মারা যেতো। আর কোরানের সূরা ইব্রাহিমে এই ঘটনার বর্ণনা দিতে
গিয়ে যে বলা হয়েছে, আল্লার নির্দেশে আগুন সেখানে ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছিলো, সেই
সময় আল্লা বলে কেউ ছিলোই না, এমন কি আল্লা বলতে কোনো শব্দও ছিলো না; ইব্রাহিম, মুসার
পূর্ববর্তী নবী এবং সেই সময় সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বলা হতো জিহোবা বা জেহোবাকে, তাহলে
তখন আল্লা এলো কোথা থেকে ? ইসলামের ইতিহাস তো দখলের ইতিহাস,
মুহম্মদ প্রথমে তার আল্লাকে বানিয়েছে, তারপর
সেই আল্লার নামে আগের সবকিছুকে দখল করেছে।
ধরা যাক,
ইব্রাহিমকে অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ফেলা
হয়েছিলো, তারপরও ইব্রাহিম সেখানে জীবিত থাকলো কিভাবে ?
একটু আগেই আপনাদেরকে বলেছি, ইব্রাহিমের
বাপ এবং রাজকর্মচারীদের ষড়যন্ত্রের কথা,
ইব্রাহিমের জীবিত থাকার পেছনে কাজ করেছিলো
সেই ষড়যন্ত্র।
পিতা হিসেবে ইব্রাহিমের বাপ তো চাইবেই
ইব্রাহিম বেঁচে থাক, সেই সাথে কিছু রাজকর্মচারী,
যারা ইব্রাহিমের বাপের কাছ থেকে ঘুষ
খেয়েই হোক বা ইব্রাহিমের একত্ববাদের প্রতি আনুগত্য থেকেই হোক, তারা
চাইছিলো ইব্রাহিম বেঁচে থাক। এদের পরামর্শ এবং পীড়াপীড়িতেই বাদশাহ নমরুদ, ইব্রাহিমকে
আগুনে পুড়িয়ে মারার প্ল্যান করে, যে কথা আগেও একবার বলেছি।
রাজা বাদশাহ তো আর কোনো কাজ নিজের হাতে
করে না, তাদের সকল কাজ তাদের কর্মচারীর উপর নির্ভরশীল। কর্মচারীরা এস
বলে, জাঁহাপনা, এত বড় অগ্নিকুণ্ডলী প্রস্তুত করা হয়েছে
যে, ইব্রাহিম কিছুতেই সেখন থেকে বেঁচে বেরোতে পারবে না। তখন বাদশাহ
মনে করেছে যে, হ্যাঁ তার কাজ ঠিক মতোই এগোচ্ছে।
এবার আপনাদেরকে একটা ধাঁধাঁ দিই, যদি
এই ধাঁধার ব্যাপারটা বুঝতে পারেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন, ইব্রাহিম
কিভাবে ঐ অগ্নিকুণ্ডলীর মধ্যে জীবিত ছিলো।
এক লোক গাড়ীর ট্যাংকি ভর্তি করে পেট্রোল
বা ডিজেল নিয়ে এক বন দেখতে ঢুকেছে,
বনের মধ্যে পৌঁছার পর সে জানতে পারে, বনের
এক প্রান্তে আগুন লেগেছে এবং সেই আগুন দ্রুত পুরো বনকে গ্রাস করছে, যাতে
তার মৃত্যু নিশ্চিত। তার আত্মীয় স্বজন তাকে দ্রুত বনের বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য ফোন
করে বলছে, কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় সে একই সাথে দিক ও পথ ভুলে গেছে, তাহলে
কিভাবে সে এই আগুন থেকে বাঁচবে ?
এই পরিস্থিতি লোকটি নিজেকে বাঁচাতে পারে
শুধু একটি ই উপায়ে, আর সেটা হলো, তার গাড়ীতে যে পেট্রোল বা ডিজেল আছে, তার
থেকে কিছু পরিমান বের করে নিয়ে, তার আশে পাশে নিরাপদ দূরত্বের
গাছপালাগুলোতে আগুন লাগাতে হবে, সেই আগুনে সেই নির্দিষ্ট স্থানের
গাছপালাগুলো পুড়ে গেলে সেখানে আর পরে আগুন লাগবে না;
কারণ, আগুন লাগার মতো গাছপালা সেখানে
আর থাকবে না; তারপর সেখানে নিজের গাড়িকে নিয়ে গিয়ে অবস্থান করতে হবে, এরপর
মূল দাবানল যখন সেখানে আসবে, সেখানে কোনো জ্বালানী
না থাকায়, আগুন সেখানে আর বিস্তার করতে পারবে না, ফলে
ঐ লোক এবং তার গাড়ী রক্ষা পাবে। বিশাল অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ইব্রাহিমও রক্ষা
পেয়েছিলো ঠিক এই ভাবে।
যখন অগ্নিকুণ্ডলী প্রস্তুত করা হয়, তখন
ইচ্ছা করেই তা বিশাল ক’রে করা হয় এবং তার মধ্যে অনেক পরিমান জায়গায় কোনো কাঠ রাখা হয়
না, ইব্রাহিমকে ছুঁড়ে মারা হয় ঠিক অগ্নিকুণ্ডের মাঝখানে যেখানে
আগুন জ্বলার মতো কোনো কাঠই ছিলো না,
ফলে অগ্নিকুণ্ডের চারেদিকের আগুন নিভে
গেলে, দেখো গেলো ইব্রাহিম জীবিতই আছে। এভাবেই চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রে
ইব্রাহিমের প্রা্ণ রক্ষা পায় এবং ইব্রাহিম যার নামে একত্বাবাদ প্রচার করছিলো, এটাকে
তার কাজ হিসেবে চালানো হয় এবং তখন তার মহিমা ফুলে ফেঁপে উঠে।
এই হলো অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহিমের
বাঁচার কাহিনী, কিন্তু সিঁদুর প্রসঙ্গে এই কাহিনীর অবতারণা করলাম কেনো
?
একটু আগেই বলেছি, অবিবাহিত
অনেক মুসলিম মেয়ে সিঁদুর বা লাল টিপ পছন্দ করে এবং এজন্য তারা মনে মনে হিন্দু
ছেলেদেরকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করে বা স্বপ্নও দেখে। মুসলিম থিঙ্ক ট্যাংক যখন এই
বিষয়টি জানতে পার বা বুঝতে পারে, তখন সিঁদুর ও টিপের প্রতি মুসলিম
মেয়েদের ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য তারা একটি পরিকল্পনা করে এবং ইব্রাহিমকে
অগ্নিকুণ্ডে ফেলার কাহিনীর মধ্যে একটা টুইস্ট সৃষ্টি করে টিপের কাহিনী ঢোকায়, ঘটনাটি
এরকম :
সরল দোলক জাতীয় যন্ত্রের মাধ্যমে
ইব্রাহিমকে যখন বাদশাহ নমরুদের লোকজন অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা
করছিলো, তখন ইব্রাহিম যে প্রান্তে বসেছিলো, সেই
প্রান্তে নাকি কিছু ফেরেশতা এসে চাপ দিয়ে ধরেছিলো,
ফলে নমরুদের লোকজন তা্কে আর ছুঁড়ে ফেলতে
পারছিলো না। শয়তান নাকি এই ঘটনা খেয়াল
করে এবং নমরুদকে এই বুদ্ধি দেয় যে,
ছুঁড়ে ফেলা যন্ত্রের কাছে কিছু অসতী
মেয়ে অর্থাৎ পতিতা বা বেশ্যাকে এনে রাখতে,
নমরুদ তাই করে, এর
ফলে সেখানে ফেরেশতারা আর থাকতে পারে না এবং ইব্রাহিমকে সফলভাবে অগ্নিকুণ্ডে
নিক্ষেপ করা সম্ভব হয়। পতিতা বা বেশ্যা মেয়েদের কারণে এই কাজ করা সম্ভব হয়েছে বলে, তাদেরকে
নমরুদ বিশেষ পুরস্কার দেয় এবং তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের কপালে লাল রং
দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, সেই থেকে বেশ্যা মেয়েরা নাকি কপালে লাল রং দিয়ে টিপ ব্যবহার
করে !
এই কাহিনীর প্রভাবে মুসলমানরা মনে করা
শুরু করেছে যে, যেহেতু হিন্দু মেয়েরা কপালে এবং সিঁথিতে লাল চিহ্ন ব্যবহার করে, তাই
তারা ঐ ঘটনার সাক্ষী স্বরূপ নিজেদেরকে বেশ্যা বলেই সমাজে পরিচিত করছে!
মূলে এই ধরণের কোনো ঘটনা না থাকলেও
বাঙ্গালি মুসলমানদের তৈরি করা নমরুদ-ইব্রাহিমের কাহিনীতে এই ধরণের ঘটনা যুক্ত করার
কারণ হলো, মুসলিম মেয়েরা যাতে টিপ বা লাল টিপ এবং সিঁদুরের প্রতি আকর্ষণ
হারায় এবং তারা যেন হিন্দু ছেলেদের প্রেমে না পড়ে।
এবার আবার একটু নতুন কাহিনীর বিশ্লেষণে
ঢোকা যাক, যে আল্লার এক আদেশে অগ্নিকুণ্ড,
ফুলের বাগানে রূপান্তরিত হতে পারে, ফেরেশতা
পাঠিয়ে সেই আল্লার, ছুঁড়ে মারার যন্ত্র ধরে রাখার দরকার কী
বা ফেরেশতা পাঠানোরই বা দরকার কী ?
আল্লা যদি না চাইতো, তাহলে
তো কেউ ইব্রাহিমকে ছুঁড়ে মারতেই পারতে না। এ থেকে প্রমান হয়, নমরুদ-ইব্রাহিমের
কাহিনীতে বেশ্যা সম্পর্কিত উপাখ্যান সম্পূর্ণ মিথ্যা, মুসলিম
মেয়েদেরকে হিন্দু কালচার থেকে দূরে রাখার জন্য এবং হিন্দু মেয়েদেরকে
মেন্টাল চাপে ফেলে হিন্দু কালচার থেকে দূরে সরে থাকতে বাধ্য করে আস্তে আস্তে
তাদেরকে ইসলামিক কালচারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যই মুসলমানরা এধরণের কাহিনীর
আবির্ভাব ঘটিয়েছে।
আবার,
পতিতা মেয়েরা, ছুঁড়ে
ফেলা যন্ত্রের কাছে এলে নাকি ফেরেশতারা সেখানে থাকতে না পেরে দূরে সরে যায়; এই
ঘটনা এটা প্রমান করে যে, খারাপ কারো সাথে ফেরেশতারা থাকে না। যদি তাই হয়, তাহলে
তো এটা প্রমানিত যে, মানুষের পাপ পুন্যের হিসেব লেখক দুই ফেরেশতা যারা নাকি দুই
কাঁধে বসে থাকে, তারা তো খারাপ লোক বা পতিতাদের সাথে থাকে না, তাহলে
ঐ খারাপ লোকদের বিচার আল্লা কিভাবে করবে ?
আর যদি এটা বলা হয় যে, আল্লা
সবকিছুই জানে, তাহলে মানুষের পাপ পুন্যের হিসেব লেখার জন্য, ইসলামে
কেরামান ও কাতেবিন নামক দুই ফেরেশতার গল্প ফাঁদার দরকারটা কী ?
বিবাহিতা হিন্দু মেয়েদেরকে আলাদা করে
চেনার জন্য প্রথমে সিঁথিতে সিঁদুর এবং সেই সিঁদুর দিয়ে কপালে বৃত্তাকার টিপ পরার
প্রচলন হয়, এটা সামাজিক নানা সমস্যা থেকে বাঁচতে আমাদেরকে সাহায্য করে, তাই
নিঃসন্দেহ বলা যায় এটি একটি ভালো ব্যাপার। এখন অজ্ঞতা ও মূর্খতার কারণে মুসলিম
সমাজে এই ভালো ব্যাপারটি নেই; নিজেদের নেই ব’লে অন্যের ভালো
ব্যাপারগুলোকে নানা মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে তাকে খারাপভাবে উপস্থাপন করতে হবে বা তাকে
খারাপ বলতে হবে, এটা কোন ধরণের মানসিকতা
?
হাদিসে বলা আছে, “যে
ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখলো,
সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হলো।”- আবু
দাউদ ৩৫১৪
এখানে অন্য কোনো সম্প্রদায় বলতে বোঝানো হচ্ছে কাফের সম্প্রদায় যারা ইসলাম মানে না।
মুসলমানদেরকে জিজ্ঞেস করছি, আপনারা
প্রতিদিনের জীবন যাপনে কোন কাজটা করেন,
যেটা কাফেরদের অনুকরণ নয় ? ইসলামি
জীবন যাপন বলে কি বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় কিছু আছে ?
গান বাজনা, নাচ, কবিতা, ছবি, টিভি, সিনেমাসহ
শিল্পকলার সকল কিছু হিন্দু কালচার;
এগুলোর চর্চা বা পালন করেন আর
নিজেদেরকে মুসলমান মনে করেন ? কোরান হাদিস খুলে দেখেন, ইসলামে
এগুলো সম্পর্কে কী বলা আছে ? আজকের যে আধুনিক জীবন ব্যবস্থা, তার
সবকিছু ইহুদি ও খ্রিষ্টান কালচারের অন্তর্ভূক্ত,
এভাবে জীবন যাপন করেন আর নিজেকে মুসলমান
ভাবেন ?
ইউরোপীয় ব্যবস্থার যে টয়লেটে বসে হাগেন, জানেন, সেটা
নবীর সুন্নাত নয় ? নবী এবং তার স্ত্রীদের সুন্নাত হলো ফাঁকা মাঠে গিয়ে পায়খানা
করা। সেটা মেনে চলেন না কেনো ? টেবিলে বসে ভাত খাওয়া কি নবীর সুন্নত ? তাহলে
ডাইনিং টেবিলের প্রচলন বাংলাদেশের মতো ৯০% মুসলমানের দেশে হয় কিভাবে ? খুব
ইসলাম পালন করেন আর নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দেন, তাই
না ?
আপনাদের এসব ভণ্ডামী নিয়ে বহু কথা বলতে
পারি, আর বললাম না। নিজেরা ইসলামের কিছুই পালন করতে পারেন না, তবু
জোর করে নিজেদেরক মুসলিম বলে পরিচয় দেন,
আর অন্যের যা কিছু ভালো সেগুলোর প্রশংসা
না করে সেগুলো নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে বেড়ান! এসব ভণ্ডামী ছেড়ে মানুষ হন, না
হলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সাথে আপনদের যে নেট-ফেসবুক যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা
কোনো দিন বন্ধ হবে না; আর একটা কথা মনে রাখবেন,
আপনারা চাপাতির জোরে সম্মুখ যুদ্ধে জয়ী
হতে পারেন, কিন্তু এই নেট যুদ্ধে কখনোই জয়ী হতে পারবেন না, আমি
মরে গেলে আমার মতো হাজারটা তৈরি হবে, কয়টাকে
সামলাবেন আপনারা ?
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন