সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপবাস কী ও কেনো এবং উপবাস ও রোযা পালনের লাভ-ক্ষতিগুলো কী ?

উপবাস কী ও কেনো এবং উপবাস ও রোযা পালনের লাভ-ক্ষতিগুলো কী ?



"রোযার মধ্যে আবার খাওয়া কেনো ? তাহলে এটা আবার কেমন ধর্ম ?" উপবাস সম্পর্কে মুসলমানদের মুখে এই ধরণের কথা হয়তো অনেক হিন্দুই শুনে থাকবেন, কিন্তু না জানার কারণে তখন মুসলামানদের মুখের উপর সঠিক জবাবটা দিতে পারেন নি বলে মুসলমানদের কাছে হেয় হয়েছেন এবং হয়তো হিন্দু ধর্মের বিধি-বিধান নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগেছেন। এই পোস্টটি পড়লে জানতে পারবেন এর উপযুক্ত জবাব এবং আপনার সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, রোযা নয়- উপবাস পালনই সর্বোত্তম ।

হিন্দু শাস্ত্রে একাদশী তিথি এবং পূর্ণিমা ও অমাবস্যা ছাড়াও বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজার বিশেষ দিনগুলোতে উপবাসব্রত পালনের নিয়ম রয়েছে। এছাড়াও অনেকে সপ্তাহের বারের দিনগুলোতে তাদের আরাধ্য দেবতা, যেমন- মহাদেব শিবের জন্য সোম বারে, বজরংবলী অর্থাৎ হনুমানের জন্য মঙ্গল বারে, বিষ্ণু বা লক্ষ্মীর জন্য বৃহস্পতি বারে উপবাস পালন করেন। তাছাড়াও প্রত্যেক হিন্দুকে বিয়ের দিন উপবাস থাকতে হয় যেহেতু হিন্দু বিবাহ একটি ধর্মানুষ্ঠান, অন্যান্য জাতির বিয়ের মতো দেহভোগের চুক্তি নয়। কূলের সমীপে মানে যেমন উপকূলবা কূলের কাছে, তেমনি উপবাস" শব্দের অর্থ হলো নিকটে বাস”, কা্র নিকট ? ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের নিকট। এই ভাবে হিন্দুরা উপবাসের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকার বা তার কাছে পৌঁছার চেষ্টা করে।

প্রতি বাংলা মাসে সাধারণত দুইটি একাদশী এবং একটি পূর্ণিমা ও একটি অমাবস্যা পড়ে; কিন্তু বছরে দুই একটি মাসে, দুইটি একাদশী এবং দুইটি পূর্ণিমা বা দুইটি অমাবস্যাও পড়তে পারে। এই একাদশী ও পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা সম্পূর্ণ তিথি নির্ভর হিসেব, এরা নিজেরাও এক একটি তিথি। আর এক একটি তিথির দৈর্ঘ ২৬/২৭ ঘন্টা। তো যখন কোনো উপলক্ষ্যে হিন্দুদেরকে এই উপবাস রাখতে হয়, তখন রোযার মতো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের হিসেবে উপবাস না রেখে, রাখতে হয় তিথির শুরু ও শেষের হিসেবে। যে তিথির যে উপবাস, সেই উপবাসের নিয়ম, সেই তিথির সময়ে মেনে চলতে হয়। এছাড়াও কিছু সাধারণ নিয়ম আছে, যেটা সব উপবাসেই পালন করতে হয়।

উপবাস চলাকালীন, হিন্দু শাস্ত্রে- ধান, গম, যব বা ভুট্টা, ডাল এবং তৈল- এই পাঁচ ধরণের শস্যজাত কোনো খাদ্য খেতে নিষেধ করা হয়েছে। আর এগুলো খেতে না বলার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, একাদশী তিথিতে যাবতীয় রোগ-ব্যাধি এই ৫ প্রকার শস্যজাত খাদ্যের মধ্যে জমা হয়, ফলে ঐ সময় খাবারগুলো খেলে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই ৫ প্রকার রবিশস্য না খাওয়ার কারণ সম্পর্কে একটি সুন্দর গল্প আছে, যুক্তি বিজ্ঞানের আলোকে পদ্মপুরাণের এ্ই গল্পটির একবিংশ শতাব্দীর ভার্সনটি হলো এরকম :

পরমেশ্বর ব্রহ্ম, বিশ্ব সৃষ্টির প্রারম্ভে পৃথিবীতে সৃষ্ট মানুষের পাপের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন প্রকার পাপের সমন্বয়ে একটি পাপপুরুষনির্মান করেন। তারপর পাপিষ্ঠ মানুষদের ঠিকানা নরক দর্শনে যান এবং পাপের ফল হিসেবে শাস্তি স্বরূপ পাপি মানুষদের আর্ত চিৎকার শুনতে পান এবং ভাবেন মানুষ ভুলবশত কোনো পাপ করলেও অনুতপ্ত হলে সেই পাপের শাস্তি যাতে তারা না পায়, সেজন্য কোনো একটি উপায় থাকা উচিত; তারপর তিনি ভুলবশত করা পাপের শাস্তি নিরসনে একাদশী দেবী নামে এক দেবীর জন্ম দেন, যে দেবী মাসের নির্দিষ্ট দুটি দিনে, তার শরণে আসা সমস্ত পাপীদের পাপ শোষণ করে তাদেরকে ভালো থাকার পথ দেখাবে।

এই বিষয়টি জানার পর পাপপুরুষ পরমেশ্বরের কাছে গিয়ে বলে, আপনি একাদশী দেবীকে দিয়ে যদি সমস্ত মানুষের পাপ শোষণের ব্যবস্থা করেন ই তাহলে আমার আর দরকার কী ? আমি থাকবো কোথায় ? তাছাড়া দেবী একাদশী মানুষের পাপ মোচন করতে গিয়ে পাপের কারণ এই আমাকে কী ক্ষমা করবে? আমাকেও তো ধ্বংস করে দেবে। তার চেয়ে আপনই আমাকে এখনই ধ্বংস করে দিন। পরমেশ্বর বলে, মানুষ পাপ করে ভ্রান্তিতে পড়ে, তাদের সেই পাপ মোচনের ব্যবস্থা থাকা উচিত, তাই আমি একাদশীকে সৃষ্টি করেছি, যারা একাদশী তিথিতে একাদশী দেবীর স্মরণ নেবে শুধু তারাই তাদের পাপ থেকে মুক্ত হবে। এই একাদশীর দিন মানুষ ভক্ষণযোগ্য অন্য সব কিছু খেলেও পাঁচ প্রকার রবিশস্য খাবে না, তুমি সেই একদশী তিথিতে সেই পাঁচপ্রকার রবিশস্যের মধ্যে লুকাবে, নিষিদ্ধদ্রব্যের মধ্যে অবস্থান নেওয়ায় একাদশী তোমায় কিছু বলবে না, এইভাবে পৃথিবীতে তোমার অস্তিত্ব তুমি রক্ষা করতে পারবে। পৃথিবীতে মানুষ পাপও করবে গোপনে বা লুকিয়ে লুকিয়ে, তাই একাদশী তিথিতে পঞ্চশস্যের মধ্যে তোমারও লুকিয়ে থাকতে আশা করি তোমার কোনো আপত্তি নেই বা অসুবিধা হবে না।

এটা শুধুই গল্প। উপরে উল্লেখ করেছি্ একাদশী তিথিতে পাঁচ প্রকার রবিশস্যের মধ্যে রোগ ব্যাধি জমা হয়, তাই সেগুলো খাওয়া নিষেধ। কিন্তু এই গল্পে আবার বললাম পাঁচ প্রকার রবিশস্যের মধ্যে পাপ লুকিয়ে থাকার কথা। আসলে রোগ ব্যাধি ও পাপ আলাদা কিছু নয়। যা মানুষকে কষ্ট দেয়, শাস্তি দেয়- তাই পাপ। তো রোগ ব্যাধি হলেও তো মানুষ কষ্টই পায়, সেই হিসেবেই এটাকে বলা হয়েছে পাপ। কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, একাদশী তিথিতে পঞ্চশস্যের ভেতরে রোগ ব্যাধি লুকিয়ে থাকে, এটাকে নিছক গাল গল্প মনে হলেও পোস্টটি পড়া শেষ হলে বুঝতে পারবেন আসলে রোগ-ব্যাধিটা কোথায় এবং দেবী নামের একাদশী তিথিটি কিভাবে মানুষকে রোগমুক্ত রেখে পাপস্বরূপ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয় বা মুক্ত রাখে ?

যা হোক, উপবাসের সময় কিন্তু ফল বা মূল জাতীয় খাবার এবং জল, খুব প্রয়োজন হলে খাওয়ার বিধান রয়েছে। এটা নিয়েই মুসলমানদের ছিঃ ছিক্কারের অভাব নেই। তাদের প্রশ্ন হচ্ছে, উপবাসের মধ্যে, তাদের ভাষায় রোযার মধ্যে আবার খাওয়া কেনো ? তাহলে এটা কেমন ধর্ম ?

গোঁড়া মুসলমানদের কাছে ইসলাম ছাড়া সকল ধর্মই ভুয়া, তাই অন্য ধর্মের কোনো বিধি বিধানই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু কিছুটা উদার মুসলমানরা মনে করে, ওরা ওদের ধর্ম পালন করবে ঠিক আছে, কিন্তু সেই ধর্মীয় নিয়মগুলো যেন ইসলামের সাথে কিছুটা সাদৃশ্যপূ্র্ণ হয়।

মুসলমানরা সারাদিন না খেয়ে থাকে। হিন্দুরাও উপবাসে কিছু না খেলে মুসলমানদের মনে হয় কোনো প্রশ্ন ছিলো না। মুসলমানরা জবাই করে গরুর মাংস খায়, হিন্দুরা রাক্ষসের মতো তা না খেয়ে, গরুকে কেনো শ্রদ্ধা ভক্তি করে, সেটা নিয়েই মুসলমানদের যত প্রশ্ন আর মাথা ব্যথা।

এখন দেখা যাক, রোযা ও উপবাসের মধ্যে পার্থক্য মূলত কী ?

রোযার জন্য খেতে হবে ভোরের আযানের ঠিক পূর্বে। কিন্তু ঠিক পূর্বেই কেনো ? ঠিক পূর্বে এজন্যই যে, পেট ভরে খেয়ে, নামাজের নামে সামরিক কুচকাওয়াজ সেরে তবেই না দিনভর ক্লান্তহীনভাবে অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করা যাবে। নামাজের পর সেহরি খাবারের নিয়ম থাকলে, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে, আবার খাবার খাওয়ার জন্য বাড়িতে এলে মুসলমানদের সংঘবদ্ধতায় ব্যাঘাত ঘটতো না ? কেউ কেউ হয়তো খাবার খেয়ে বাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়তো বা কেউ ইচ্ছা করেই যেতো না, তখন মুহম্মদের জিহাদ লাঠে উঠতো। যাদের কাছে এই তথ্যটি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, তাদের জন্য তুলে দিচ্ছি, মুসলিম শরীফের এই ৭৪৫ নং হাদিস-

মুহম্মদ যখন কোনো জনপদ আক্রমন করতো, তখন ভোরবেলায় করতো।

এখন ভোরের নামাজের সাথে হাদিসের এই বাণীটিকে মিলিয়ে দেখুন।

যা হোক, মুসলমানদের এই রোযা শেষ হয় সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে, আর তখনই শুরু হয় গরুর মতো খাওয়া। মাঝখানে মুসলমানরা খায় না গড়ে ১৩/১৪ ঘণ্টা। শীতকালে এই সময় কমে দাঁড়ায় ১১ ঘন্টায় এবং গ্রীষ্মকালে ১৫/১৬ ঘণ্টা।

আগেই বলেছি, এক একটি তিথির দৈর্ঘ ২৬/২৭ ঘন্টা। যখন কোনো হিন্দু উপবাস রাখে, তখন তাকে এই পুরো সময়, উপরে উল্লেখ করা ৫ প্রকার শস্যজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। আবার হিন্দুরা, মুসলমানদের মতো, রোযা শুরুর ঠিক আগে কোনো খাবার খায় না, তিথি যখনই শুরু হোক, সাধারণভাবে দিনে বা রাতে যে খাবার তারা খায়, সেই খাবার খেয়েই পরবর্তী তিথি থেকে উপবাস রাখা শুরু করে। ধরা যাক, তিথি শুরু হবে রাত ১০ টায়, এর আগে সে রাতের খাবার খেয়ে নিলো, সাধারণভাবে এই তিথি শেষ হবে পরদিন রাত ১২/১ টায়; এই সময়ের মধ্যে সে উপরে উল্লখে করা কোনো পঞ্চশস্যজাত খাবার গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু তিথি যদি শুরু হয়, ভোর ৫ টা বা ৬ টায়, তাহলে তাকে রাতের ঐ স্বাভাবিক খাবার খেয়েই পরবর্তী একটানা ৩৩/৩৪ ঘন্টা ঐ পঞ্চশস্যজাত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে এই লোকটা বাঁচবে কিভাবে ?

২৬/২৭ বা ৩৩/৩৪ ঘণ্টা কেউ যদি সম্পূর্ণ পানাহার থেকে বিরত থাকে, মরে না গেলেও সে অসুস্থ হতে বাধ্য এবং তার দিনের কাজকর্ম ব্যাহত হতে বাধ্য। ইসলামের মতো হিন্দু ধর্ম- মানুষকে মরতে ন, বাঁচতে শেখায়। তাই হিন্দুশাস্ত্রে বিধান দেওয়া হয়েছে উপবাস চলাকালীন পঞ্চশস্যজাত কোনো খাদ্য গ্রহণ না করা গেলেও ফল-মূল জাতীয় খাবার এবং জল গ্রহন করা যাবে, তবে তা স্বল্প বা পরিমিত মাত্রায়। কিন্তু নির্জলা উপবাসে জল গ্রহন করাও নিষেধ। জল পর্যন্ত গ্রহণ নিষেধ বলেই এর নাম নির্জলা। নিঃসন্দেহে একদিন রোযা রাখার চেয়ে এই উপবাস পালন করা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু কেনো এই রকম উপবাসের ব্যবস্থা এবং কেনোই বা তা এত কঠোর, তা জানার জন্য পড়ুন নিচের এই গল্পটি -

নির্জলা একাদশীর অপর নাম পাণ্ডব বা পাণ্ডবা একাদশীর উপবাস। পাণ্ডব নাম দেখেই বুঝতে পারছেন এর সাথে পাণ্ডবদের কোনো কাহিনী জড়িত আছে। নির্জলা একাদশী সেই সমস্ত লোকদের জন্য যারা পাণ্ডু পুত্র ভীমের মতো না খেয়ে একবেলাও থাকতে পারে না। তাই তাদের জন্য সারা বছরের সমস্ত একাদশীতে ছাড় থাকলেও এই নির্জলা একাদশীতে নেই, আর এজন্যই এটা এত কঠোর এবং কঠিন, জল পর্যন্ত স্পর্শ করা নিষেধ, এক কথায় সারা বছরের কষ্ট একদিনে।

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের এই গল্পটা এরকম : একদিন যুধিষ্ঠির, শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন একাদশী মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ মহর্ষি ব্যাসদেবকে এই তথ্যটি জানানোর জন্য বললেন। ব্যাসদেব বললেন, উভয় পক্ষের অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের ও শুক্লপক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত পালন করবে। দ্বাদশীর দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত্য সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে খা্দ্য গ্রহণ করবে। এরপর সাধুসজ্জন ও দরিদ্রদের ভোজন করাবে। যে সকল ব্যক্তি নরকে যেতে চায় না, তাদের সারা জীবন এই একাদশী ব্রত পালন করা উচিত। পাপকর্মে রত ও ধর্মহীন ব্যক্তিরাও যদি এই একাদশী দিনে ভোজন না করে, তবে তারা নরকযন্ত্রণা থেকে রক্ষা পায়।

মহর্ষি ব্যাসদেবের মুখে এসব কথা শুনে গদাধর ভীম ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, হে মহর্ষি- মাতা কুন্তী, দ্রৌপদী, ভ্রাতা যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকূল ও সহদেব এরা কেউই একাদশীর দিন ভোজন করে না। আমাকেও অন্ন গ্রহণ করতে নিষেধ করে। কিন্তু দু:সহ ক্ষুধা যন্ত্রণার জন্য আমি উপবাস থাকতে পারি না। ভীমের এই কথা শুনে ব্যাসদেব বললেন, যদি দিব্যধাম লাভে তোমার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করো না। উত্তরে ভীম বললো, আমার নিবেদন এই যে, উপবাস তো দূরের কথা, দিনে একবার ভোজন না করে থাকাও আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই প্রতিটি একাদশী পালনে আমি একেবারেই অপারগ। হে মহর্ষি, বছরে একটি মাত্র একাদশী পালন করে যাতে আমি দিব্যধাম লাভ করতে পারি এরকম কোন একাদশীর কথা আমাকে বলুন। তখন ব্যাসদেব বললেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে। একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশীর দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলপান বর্জন করলে অনায়াসে বারোটি একাদশীর ফল লাভ হবে। বছরের অন্যান্য একাদশী পালনের সময় অজান্তে যদি কখনও ব্রতভঙ্গ হয়ে যায, তা হলে এই একটি মাত্র একাদশী পালনে সেই সব দোষ দূর হয়। এরূপ একাদশী ব্রত পালনে যে প্রকার পুণ্য সঞ্চিত হয়, এখন তা শ্রবণ কর। সারা বছরের সমস্ত একাদশীর ফলই এই একটি মাত্র ব্রত উপবাসে লাভ করা যায়। ব্যাসদেব আরও বললেন, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাকে বলেছেন,

বৈদিক ও লৌকিক সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে যারা একমাত্র আমার শরণাপন্ন হয়ে এই নির্জলা একাদশী ব্রত পালন করে তারা সর্বপাপ মুক্ত হবে।

এই একাদশী ব্রত ধনধান্য ও পুন্যদায়িনী। যমদূতগণ এই ব্রত পালনকারীকে মৃত্যুর পরও স্পর্শ করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিষ্ণুদূতগণ তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান। ভীম ঐদিন থেকে নির্জলা একাদশী পালন করতে থাকায় এই একাদশী পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী একাদশীনামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। এই নির্জলা একাদশীতে পবিত্র তীর্থে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ইত্যাদি যা কিছু মানুষ করে তা অক্ষয় হয়ে যায়। যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে এই একাদশী মাহাত্ম পাঠ বা শ্রবণ করেন তাঁরও স্থান হয় বৈকুন্ঠধামে ।
এই নির্জলা একাদশীকে জৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের একাদশী বলা হলেও, তিথির ফেরে এটি ২ বছর পর একবার আষাঢ় মাসে গিয়ে পড়ে, যেমন আশ্বিন মাসের দুর্গাপুজা কোনো কোনো বছর কার্তিক মাসে গিয়ে হয়।

যারা বেশি যুক্তি তর্কে না গিয়ে শুধু শাস্ত্রের কথা মেনে প্রথা পালন করতে চায় এবং তা থেকে উপকৃত হতে চায়, শাস্ত্রের এই সব গল্পকথা তাদের জন্য। কিন্তু আপনি যদি খুবই বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী হন, শাস্ত্রের এই সব গল্প যদি আপনার কাছে শুধুই গালগল্প মনে হয়, তাহলেও কোনো প্রব্লেম নেই; বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়েই আপনাকে বোঝানো হবে যে আসলেই ধর্মীয় বিধির আড়ালে থাকা এই একাদশী পালনের কোনো বাস্তব উপকারিতা আছে কি না।

যারা শাস্ত্রের কথা বিশ্বাস করে না, তারা বিজ্ঞানের কথা বিশ্বাস করে। তো দেখুন বাংলাদেশের মানবকন্ঠ নামের এই দৈনিক পত্রিকাটি স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে উপবাস সম্পর্কে কী বলেছে-

মাঝে মধ্যে উপোস করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানা যায়, মাঝে মধ্যে উপোস করা শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য বেশ উপকারী। যেমন-

ওজন কমায়: না খেয়ে থাকা ওজন কমানোর কোনো উপায় না হলেও মাঝে মধ্যে উপোস করা এই প্রক্রিয়ার জন্য বেশ উপযোগী। ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হরমোনগুলো দ্রুত কাজ করা এবং হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হওয়া জরুরি। আর উপোস করলে এই দুই প্রক্রিয়াই এক সঙ্গে কাজ করে। এতে প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয়।

চিনির পরিমাণ কমায়: কিছু দিন পরপর যদি উপোস করা হয় তাহলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে আনেফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। এতে নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি কমে আসে।

হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী: মাঝে মধ্যে উপোস করলে তা রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তা ছাড়া ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি লিপোপ্রোটিনের ঘনত্ব কমায়। এই দুটি উপাদানই বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ।

কোষ গঠন: যখন উপোস করা হয় তখন শরীরের কোষগুলো ভেঙে পুনর্গঠিত হতে থাকে। বিপাক প্রক্রিয়া ভাঙে এবং অকার্যকর প্রোটিন কার্যকর হয়ে ভেতর থেকে অতিরিক্ত সময় ধরে কোষ গঠন করে।

যাদের কাছে মনে হবে এগুলো আমার মনগড়া, তাদের জন্য এই প্রতিবেদনটির ওয়েব লিঙ্ক :
http://www.manobkantha.com/2016/07/16/141323.php

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আরো বলছে,

সপ্তাহে একদিন না খেয়ে থাকতে বা কমপক্ষে একবেলা না খেয়ে থাকতে, এতে দেহের কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ হয়, হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও হ্রাস পায় এবং দীর্ঘ জীবনের সম্ভাবনাও বাড়ে।

আমার কথাও বিশ্বাস না হলে ফক্স নিউজের বরাত দিয়ে করা বাংলাদেশের আরেকটি দৈনিক কালের কণ্ঠের করা এই প্রতিবেদনটি দেখে আসুন নিচের এই লিঙ্কে ক্লিক করে।

http://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2015/03/22/201596

উপরের এই দুটি প্রতিবেদনে, একটা কথা বেশ জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, উপবাস করতে হবে মাঝে মাঝে বা কিছুদিন পর পর, তাহলেই কেবল এই উপকারগুলো পাওয়া যাবে। এখন আপনিই ভাবুন, একটানা উপবাস না করে মাঝে মাঝে উপবাস করার কথা কোন ধর্মের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, হিন্দুধর্মে, না ইসলাম ধর্মে ?

ইসলামে মুসলমানদের রোযা বছরে একবার লাগাতার ২৯/৩০ দিন; এর বাইরেও তারা সারা বছরের মধ্যে আরো ২/১টি রোযা রাখে, কিন্তু সেগুলো কোনো উল্লেখযোগ্য নয়, আর সেটা বিজ্ঞানের মাঝে মাঝেথিয়োরিকেও সম্পূর্ণ সাপোর্ট করে না। কিন্তু প্রতিমাসে সাধারণভাবে হিন্দুদের উপবাস মিনিমাম ৪টি, এর মধ্যে ২ টি একাদশী এবং একটি পূর্ণিমা ও একটি অমাবস্যা; এভাবে এক বছরে একাদশী ২৬টি এবং অমাবস্যা ও পূর্ণিমাও ২৬টি, বছরে মোট ৫২টি, অর্থাৎ বছরের ৫২ সপ্তাহের জন্য উপবাস ৫২টি, মানে গড়ে প্রতি সপ্তাহে একটি, যা বিজ্ঞানের মাঝে মাঝেথিয়োরির সাথে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণএর বাইরে পূজার বিশেষ দিনগুলোতও হিন্দুরা উপবাস রাখে বা রাখতে পারে, যা রাখা সবার জন্য রাখার বাধ্যতামূলক নয়।

উপবাসের আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য যা ই থাক, এটা পালন করে ঈশ্বরের কাছে যাওয়া যাক বা নরক থেকে মুক্তিলাভ হোক বা না হোক, এর পার্থিব উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য রক্ষা যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত। শাস্ত্র মতেও, হিন্দুদের এই উপবাসের পেছনে আধ্যাত্মিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যরক্ষা ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই।

আমরা জানি যে স্বাস্থ্যরক্ষার পেছনে প্রকৃতির দান, ফল-মূলের একটা বিশাল অবদান রয়েছে। দারিদ্রতা বা বিভিন্ন কারণে যে সব মানুষ প্রতিদিন ফল মূল কিনে খেতে পারে না বা প্রতিদিন যাদের ফল খাওয়া হয় না, তারাও এই উপবাস উপলক্ষ্যে ফল-মূল খায় বা খেতে পারে, এভাবে হিন্দুরা উপবাসের মাধ্যমে নিজের শরীর-স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে বা করতে পারে।

কিন্তু মুসলমানদের রোযার মূল উদ্দেশ্য হলো সারাদিন না খেয়ে থাকার প্র্যাকটিস করা; যাতে অভূক্ত থেকেও যদি যুদ্ধ করতে হয়, তবুও জিহাদে যাতে টিকে থাকা যায় এবং বিরামহীনভাবে অমুসলিমদের হত্যা করে তাদের ধন-সম্পদ ও নারীদেরকে লুট করে এনে গনিমতের মাল হিসেবে তাদেরকে ধর্ষণ করা বা ভোগ করা যায়।

এবার দেখা যাক উপবাস ও রোযার অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতিগুলো কী কী :

হিন্দুদের উপবাসের ফলে নিজের বা কারো ঘুমের ক্ষতি হয় না, কোনো কর্মদিন নষ্ট হয় না, কোনো কর্মঘন্টা নষ্ট হয় না, সংসারে বাড়তি আর্থিক চাপ পড়ে না, বরং উপবাসে প্রকৃত অর্থে সংযম পালন করা হয় বলে খাবারের খরচ কমে এবং এটা সারাবছরের হিসেবে প্রায় একমাসের খাই-খরচার সমান এবং উপবাস মানুষকে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে বলে চিকিৎসা খরচও কিছুটা বেঁচে যায়, যেটাও মিনিমাম বছরের হিসেবে এক মাসের খাবারের খরচের সমান। তার মানে উপবাস করলে আপনার আর্থিক লাভ মাসে কমপক্ষে ১৭%, এর অর্থ হলো আপনার পরিবারের মাসিক খাবার খরচ ১০ হাজার টাকা হলে আপনি অনায়াসে উপবাস পালন করে মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা সেভ করতে পারেন।

উপবাস করে টাকা বাঁচানো, এই থিয়োরি যদি আপনার প্রেস্টিজে লাগে, তাহলে এটা ভাবুন যে, উপবাস না করলে আমার দেহে রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধবে, সেই রোগ আমাকে শুধু কষ্টই দেবে না, পকেটও ফাঁকা করবে; রোগ এবং তার জন্য খরচ, এই দুটোই যেকোনো মানুষের জন্য খুবই কষ্টের, উপবাস করে যদি আপনি এই দুটো কষ্ট থেকে মুক্তি পান তাহলে ক্ষতি কী, শাস্ত্রের কথা মেনে ঈশ্বরের ধার আপনি না হয় না ই বা ধারলেন।

উপবাস না করলে মানুষ নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, এই থিয়োরিতে যদি আপনার বিশ্বাস না থাকে, তাহলে নিচের এই কথাগুলো আপনার জন্য-

রোগের উৎপত্তি সম্পর্কে পৃথিবীর প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র আয়ুর্বেদ এর রেফারেন্স দিয়ে উ্ইকিপিডিয়া বলছে-

আয়ুর্বেদের মতে মানব দেহের চারটি মূল উপাদান হোল দোষ, ধাতু, মল এবং অগ্নি।… ‘দোষএর তিনটি মৌলিক উপাদান হল- বাত, পিত্ত এবং কফ- যেগুলি সব একসাথে শরীরের ক্যাটাবোলিক ও এ্যানাবোলিক রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই তিনটি দোষের প্রধান কাজ হল শরীরের হজম হওয়া পুষ্টির উপজাত দ্রব্য শরীরের সমস্ত স্থানে পৌঁছে কোষ পেশী ইত্যাদি তৈরীতে সাহায্য করা। এই দোষগুলির জন্য কোন গোলযোগ হলেই তা হয় রোগের কারণ।

এই কথাই বলা হয়েছে পৃথিবীর প্রথম চিকিৎসা বিজ্ঞান আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এই শ্লোকে-

অপক্বামরসং দোষবৈষম্যং রোগকারণম্।

এর অর্থ হলো অপক্ক আমরস দ্বারাই দেহে দোষবৈষম্য ঘটে অর্থাৎ বায়ু-পিত্ত-কফ, এই ত্রিদোষের বৈষম্যে দেহে অসামঞ্জস্যের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ রোগের সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও আমরা যা ই খাই, সেটা আমিষ হোক বা নিরামিষ, তা ভালোভাবে হজম না হলেই আমাদের দেহে রোগের জন্ম হয়। এখন কেউ কেউ বলতে পারেন উপবাস না রাখাই যদি সব রোগের কারণ হয়, তাহলে- কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হার্টের রোগ থেকেও কি উপবাসের মাধ্যমে রক্ষা পাওয়া যাবে ?

যাদের মাথায় এই প্রশ্ন দেখ দিয়েছে, তাদেরকে বলছি, এখানে রোগ বলতে সাধারণ রোগের কথা বলা হয়েছে, আর এটা তো সত্য যে সাধারণ রোগ থেকেই অসাধারন রোগের সৃষ্টি হয়। আপনি যদি শুরুতেই সাধারণ সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে পারেন, তাহলে কি অসাধারণ সমস্যা আপনাকে এ্যাটাক করতে পারবে ? তারপরও রাশিগত বৈশিষ্ট্যের কারণে জন্মসূত্রেই কিছু কিছু রোগ প্রত্যেকটা মানুষ বহন করে আনে এবং জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে তা প্রকাশ পায়, যেমন- সারাজীবন বিড়ি সিগারেট না খেয়েও ক্যানসার, এই ধরনের রাশিগত রোগের প্রতিকারের ক্ষেত্রে উপবাস কেনো পৃথিবীর সেরা ডা্ক্তারেরও ক্ষমতা নেই আপনার দেহ থেকে সেই রোগ নির্মূল করার।

এখন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রের তথ্যে যাদের ভরসা নেই, তারা দেখতে পারেন এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র রোগের সৃষ্টির ব্যাপারে কী বলছে-

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং প্যারাসাইট এককথায়, বিভিন্নরকম জীবানুর আক্রমন হলো বিভিন্ন রকম রোগ সৃষ্টির কারণ।

এখন প্রশ্ন হলো, এই জীবানুগুলো তো আমাদের দেহের ভেতরে বা বাইরে থেকে অনবরত আমাদেরকে আক্রমন করেই যাচ্ছে, তাহলে আমরা সব সময় রোগাক্রান্ত থাকি না কেনো ?

উত্তর হলো- আমাদের দেহ, তার অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে জীবানুর সেই আক্রমনগুলোকে প্রতিনিয়ত প্রতিরোধ করে জয়ী হচ্ছে বলেই আমরা সব সময় অসুস্থ হই না বা সুস্থ আছি।

তাহলে আমরা কেনো অসুস্থ হয়ে পড়ি?

যখন আমাদের দেহ কোনো কারণে দুর্বল হওয়ায় এর আভ্যন্তরীণ শক্তি আর ঠিক মতো কাজ করতে পারে না, তখন লড়াইয়ে জীবানুগুলো জিতে যায় এবং আমরা রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ হয়ে পড়ি।

আমাদের দেহ দুর্বল হয় কেনো ?

দুর্বল হয় খাদ্যদ্রব্য সঠিক সময়, সঠিক মাত্রায় না খাওয়ায়, এককথায় অপুষ্টিজনিত কারণে।

অপুষ্টির কারণ কী?

অপুষ্টির কারণ হলো, দেহের জন্য যা প্রয়োজন তা খাচ্ছি না বা বা যা খাচ্ছি তা হজম হচ্ছে না।

টাকার বা জ্ঞানের অভাবে দেহের জন্য যা যে মাত্রায় প্রয়োজন তা না খেয়ে থাকতে পারি, কিন্তু যা খাচ্ছি তা হজম হচ্ছে না কেনো ?

হজম একারণেই হচ্ছে না যে, দীর্ঘদিন অপুষ্টিতে ভোগার ফলে পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এখন স্মরণ করুন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের সেই শ্লোক,

অপক্বামরসং দোষবৈষম্যং রোগকারণম্।

এর সরল অর্থ- খাদ্যদ্রব্য পেটে ঠিক মতো হজম না হওয়াই হলো রোগের কারণ।

খাদ্যদ্রব্য পেটে ঠিক মতো হজম হয় না পরিপাক তন্ত্রের দোষে, আর পরিপাক তন্ত্রের দোষের কারণ হলো বায়ু-পিত্ত-কফ এর ডিসব্যালান্স। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মত হচ্ছে, বায়ু, পিত্ত, কফ এর অসামঞ্জস্যের জন্য যখন পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়বে বা ঠিক মতো কাজ করবে না, তখন তাকে মাঝে মাঝে বিশ্রামে রাথতে হবে। এই বিশ্রাম আর কিছুই নয়, এই বিশ্রামই হলো উপবাস, যেটা গড়ে সপ্তাহে ১ দিন, যেমন সাপ্তাহিক ছুটি।

বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে ঘরকে আলোকিত করার জন্য যেমন টমাস আলভা এডিসন কিভাবে বাল্ব আবিষ্কার করেছে সেই ইতিহাস জানার প্রয়োজন নেই, শুধু সুইচ টিপতে জানলেই আলো পাওয়া যায়; তেমনি শারীরিক উপকারিতা পাওয়ার জন্য, সাধারণ লোকের উপবাস সম্পর্কে এত থিয়োরি জানারও দরকার নেই, শুধু সুইচ টেপার মতো করে উপবাস পালন করলেই হয় বা হবে।

কারো কারো মাথায় এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, শরীর রক্ষাই যদি উপবাসের মূল কথা হয় তাহলে এর সাথে ধর্ম কেনো ?

মানুষের জীবন ধারণ ও সংসার ধর্ম পালনের জন্য শরীর রক্ষাটা সবচেয়ে জরুরী, এজন্যই বলা হয়- স্বাস্থ্যই সম্পদ। ঋষিরা উপলব্ধি করেছিলেন যে, ধর্মের মোড়কে না বলে সাধারণ ভাবে বলা হলে সেটা সব লোক মানবে না, আর পরম্পরাও থাকবে না এবং সেই বিধান সমাজ থেকে একসময় হারিয়ে যাবে; কিন্তু এই বিধানগুলো মানুষের জন্য চিরন্তন উপকারী। আপনারা অনেকে হয়তো আমার এই পোস্ট পড়ার পর একাদশী পালন শুরু করবেন এবং তার উপকারিতা পেতে শুরু করবেন, কিন্তু গ্রামের যে বৃদ্ধা অশিক্ষিতা মহিলা এর কিছু না জেনেই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উপবাস পালন করে আসছে বা পালন করবে সেও কিন্তু আপনার মতো একই ফল পেয়ে আসছে বা পাবে। গূঢ়তত্ত্ব জনে জনে বলে বোঝানো সম্ভব নয়, আর সেই জ্ঞান সবার পক্ষে ধারণ করাও সম্ভব নয় বলে মুনি-ঋষিরা, তাদের গুরু শিষ্য পরম্পরায়, শত শত বা হাজার হাজার বছরের সঞ্চিত জ্ঞান সাধারণ ভাবে প্রকাশ না করে ধর্মের মোড়কে প্রকাশ করেছেন, যাতে সেই জ্ঞান পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত না হয়ে যায়, যাতে তার পরম্পরা ঠিক থাকে এবং মানুষ অনন্তকাল ধরে তার উপকারিতা পেতে থাকে।

উপবাসের এইসব তত্ত্বকে স্বীকার করেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলতে বাধ্য হচ্ছে যে,

উপবাসে আহারে রুচি বৰ্দ্ধিত হয়, আহার্য্যের আস্বাদ মধুরতর বোধ হয়, শরীর লঘু অর্থাৎ রঝরেহয় এবং উহা প্রাণদঅর্থাৎ জীবনীশক্তির বর্দ্ধক।

উপবাসের অর্থনৈতিক লাভ সম্পর্কে এতক্ষণ অনেক কথা শুনলেন, এখন দেখুন রোযা রাখার লাভ-ক্ষতিটা আসলে কী:

নামাজ, রোযা করার ফলে মুসলমানদের যে- কোনো আধ্যাত্মিক উন্নতি কখনো হয় না সেটা বোঝা যায়, হুজুররা যখন কোরান পড়াতে পড়াতে মসজিদের মধ্যেই ছোট ছোট মেয়েদের ধর্ষণ ও খুন করে। হিন্দুরা তো কাফের আর হিন্দুদের সম্পত্তি তো গনিমতে মাল; সুতরাং হিন্দুদেরকে খুন করা, তাদের উপর অত্যাচার করা, তাদের সম্পত্তি দখল করা, তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা- সেগুলো না হয় আর না ই বা বললাম।

আধ্যাত্মিক দিক বাদ দিয়ে হিন্দুদের উপবাসের উপকারিতার বিপরীতে মুসলমানদের রোযা রাখার ফলে কী কী অপকার বা ক্ষতি হয়, সে বিষয়ে এবার একটু দেখে নিন:

মধ্যরাত ঘুম থেকে উঠে খাবার খেতে গিয়ে গড়ে ১/২ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়, ফলে সকালের কাজ শুরু করতে দেরি, অফিস যেতে দেরী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে দেরী হয়। রোযা ও ইফতারের অজুহাতে দ্রুত অফিস ত্যাগ করে বা ছুটি হয় বলে অফিসের কাজের ক্ষতি হয়। স্বাভাবিকভাবে মুসলমানদের প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের জন্য গড়ে দেড়/দুই ঘন্টা সময় ব্যয় হয়, কিন্তু রমজান মাসে তারাবীর নামাজ যোগ হওয়ায় এই সময়ের অপচয় হয় প্রায় ৪ ঘন্টাপ্রকৃতপক্ষে রমজানের এক মাসে কোনো অফিসে ৮ ঘন্টার স্থলে ২/৩ ঘন্টার বেশি কাজ হয় না; অন্যদিকে বেশি খাবার খাওয়ায় প্রতিটি ফ্যামিলির খাবারের খরচ বাড়ে এর প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রের আমদানী নীতির উপর ফলে দেশের আমদানী ব্যয় বাড়ে। এছাড়াও প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ উল্টা পাল্টা নিয়মে খাবার খাওয়া এবং বেশি ভাজা-পোড়া খাওয়ার ফলে মুসলমানরা এই সময় নানারকম রোগ-ব্যাধিতে ভুগে, ফলে চিকিৎসা খরচ বাড়ে। এক কথায় রমজানের এই এক মাস পুরাই বেকার। একদিকে পুরা কাজ হয় না বলে উৎপাদন কমে, অন্য দিকে বেশি খাবার খাওয়ায় খরচ হয় বেশি। ফলে মুসলমানদের বছর, ১২ মাসে না হয়ে হয় ১১ মাসে এবং প্রতিবছর এই একমাস করে পিছিয়ে যাওয়ার ফলে প্রায় সব মুসলিম দেশ অশিক্ষা-কুশিক্ষায় ভর্তি এবং দারিদ্রতায় পূর্ণ।

এই হলো রোযার চরম নিয়ামত মুসলমানদের উপর।

উপরে উপবাসের যেসব শারীরিক উপকারিতার কথা বলেছি, সেগুলো লোকজনের কাছে আসলে অনেকটা বিশ্বাসের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় এই কারণে যে, উপবাস- রোগের কোনো ওষুধ নয়, প্রতিকার। জ্যোতিষীর পরামর্শ বা প্রতিকার নিয়ে চলে যখন কোনো বিপদ হয় না বা খারাপ সময় পেরিয়ে যায়, তখন যেমন লোকজন মনে করে, ধূর আমার এমনিই কিছু হতো না। ধর্মীয় বিশ্বাস ছাড়া উপবাস পালন করে নিরোগ থাকা লোকজনেরও বিশ্বাস হয় বা হবে ঠিক এই রকম। এই ধরণের লোকজনের জন্য এবার কিছু প্র্যাকটিক্যাল থিয়োরি

যদি আপনার হাই ব্লাড প্রেসারের কোনো প্রব্লেম থাকে, আপনি খেয়াল করবেন, প্রতিটা অমাবস্যা/পূর্ণিমায় আপনার ব্লাড প্রসার বেড়ে যাবে এবং ওষুধ খেয়েই তা আপনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আপনার যদি কোনো বাতের ব্যথা থাকে তাহলে খেয়াল করবেন অমাবস্যা/পূর্ণিমায় তা আপনাকে কিছু না কিছু শারীরিক কষ্ট দেবেই। এখানে মাত্র দুটো শারীরিক সমস্যার কথা বললাম, কিন্ত আমাদের দেহের এরকম বহু শারীরিক সমস্যা আছে যেগুলো পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় আমাদেরকে কষ্ট দেয়। বাড়িতে বা আশে পাশে যদি কোনো মানসিক রোগী থাকে তার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করে দেখবেন, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় তার রোগের তীব্রতা বাড়বে। কিন্তু মূল তত্ত্ব না জানার কারণে সেগুলো আমরা বুঝতে পারি না। ভাবি, ভালোই তো ছিলাম বা ছিলো, কেনো হঠাৎ এমন হলো বা মাঝে মাঝে কেনো এমন হয় ?
হিন্দু শাস্ত্রে, অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় উপবাস পালনের বিধানের কারণই হলো এটা। ঐ তিথিতে যদি আপনি উপবাস পালন করেন নিশ্চিতভাবে আপনার শরীর আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং আপনি উপরোল্লিখিত ঐ ধরণের শারীরিক সমস্যায় পড়বেন না বা সেগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এইভাবে এখানে শত্রুকে আপনি আক্রমনের সময়ই পরাস্ত করতে পারবেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে অমাবস্যা, পূর্ণিমায় উপবাস পালনের প্র্যাকটিক্যাল কারণ না হয় বুঝলাম, কিন্তু একাদশী তিথিতে উপবাস পালনের কারণটা কী ?

এটা হলো আক্রমনের পূর্বেই শত্রুকে দুর্বল করে দেওয়া, যাতে সে রণক্ষেত্র অর্থাৎ পূর্ণিমা বা অমাবস্যায় গিয়ে আর পূর্ণশক্তি নিয়ে লড়াই করতে না পারে। খেয়াল করুন, একাদশীর তিন দিন পরেই আসে পূর্ণিমা বা অমাবস্যা। তো একাদশীর দিন উপবাস পালন করেই কিন্তু আপনি আপনার শরীরকে মোটামুটি ফিট রাখছেন এবং রোগ নামক শত্রুগুলোকে দমন করে রাখতে পারছেন, এরপর অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় গিয়ে আবার যদি আপনি উপবাস পালন করেন, তাহলে আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ শত্রুরা কি আরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে ?

উত্তর হচ্ছে, না।

এজন্যই পূজা বা অন্যা্ন্য কারণে উপবাস পালন করা অনেকটা ঐচ্ছিক হলেও কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষ মিলিয়ে দুই একাদশী এবং পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় প্রতিটি হিন্দুর জন্য উপবাস পালন করা বাধ্যতামূলক। একাদশীর উপবাসকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, শাস্ত্রে বলা আছে,

একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নিজে নরকবাসী হবে অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে।

একাদশীর উপবাসকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ বোধ হয় এটাই যে, যুদ্ধ শুরুর আগেই যদি শত্রুকে দুর্বল করে দেওয়া যায়, তাহলে সে তো আর যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমন করার জন্য ঠিক মতো মাথা তুল দাঁড়াতেই পারবে না।

যুক্তিবাদীরা এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, দেবী নামের একাদশী তিথিটির শরণ নিলে কিভাবে সে আপনাকে সুস্থ রাখবে বা সুস্থ রাখতে পারে ?

কর্মের ফল উভেয়র ক্ষেত্রে এক হলেও- যারা, শিক্ষিত ও জ্ঞানী, তাদের জন্য যুক্তি-বিজ্ঞান-তথ্য-প্রমান; আর যারা সাধারণ লোক, তাদের জন্য বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস বলছে, “ধৰ্ম্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষএই চতুৰ্ব্বৰ্গ সাধনের প্রধান উপায় হলো উপবাস। অতএব নিয়মিত উপবাস করতে হবে। উপবাসেই জীবন, উপবাসেই আমাদের সর্ব্বার্থ-সাধন। শাস্ত্র, ত্রিকালদর্শী ঋষিদের বাক্য বলেই তা স্বতঃসিদ্ধ আপ্তপ্রমাণ। সেই শাস্ত্রে বলা হয়েছে

সর্ব্বার্থদং তপশ্চর্য্যং উপবাসং কলৌযুগে।

অর্থাৎ, কলিযুগে উপবাসই সৰ্ব্বার্থসাধন তপস্যা।

অন্নগত প্রাণবলে একটা কথা বাংলায় প্রচলিত আছে। এটা কলিযুগের মানুষের খাওয়াকে ব্যঙ্গের মাধ্যমে নির্দেশ করে। শাস্ত্রমতে, সেই বেশি খাওয়ার জন্যই জীবনী শক্তিরূপ অন্নের এত অপব্যবহার, সেজন্যই উপবাসরূপ সাময়িক অনাহার বা অল্পাহার কলির মানবের অবশ্য কর্তব্য বলে শাস্ত্রীয় নির্দেশ ।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রী রাম।জয় শ্রী কৃষ্ণ।
-----------------------------------------------------------------------
জেনে নিন ২৬টি একাদশীর নাম:

উৎপন্না, মোক্ষদা, সফলা, পুত্রদা, ষটতিলা, ভৈমী, বিজয়া,,আমলকী, পাপ মোচনী, কামদা, বরার্থিনী, মোহিনী, অপরা, পাণ্ডব, যোগিনী, দেবশয়নী, কামিকা, পবিত্রা, অজা, পরিবর্তিনী, ইন্দিরা, পাশাংকুশা, রমা, দেবযানী, পদ্মিনী এবং পরমা।

পরিশিষ্ট : পঞ্জিকায় সাধারণত একাদশীর উপবাসের দিন বলে যা লিখা থাকে, তার কোনো ভিত্তি নেই; কারণ, একাদশী বা আমাবস্যা-পূর্ণিমার উপবাস মুসলমানদের মতো দিন নির্ভর নয়, এটা তিথি নির্ভর, যেটা উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন; তাই উপবাস রাখতে হলে তিথির শুরু ও শেষ দেখে উপবাস থাকবেন এবং এই তিথির শুরু ও শেষের সময়ের মধ্যে উপবাসের সকল নিয়ম কানুন মেনে চলবেন।


আবার একাদশীর পারণ বলে একটা কথা আছে, অনেকে একাদশী পালন শেষে, সেই পারণের সময় একবারে সাধারণ খাবার খায়, এটারও কোনো ভিত্তি নেই। তিথি শেষ হলেই উপবাস শেষ। এখন তিথি শেষ হওয়ার পরে- সকাল, দুপুর বা রাত্রি, যে বেলাতেই খাওয়া হোক না কেনো, সেটাই একাদশীর পারণ। তবে এই পারণের মধ্যে একটি সামাজিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে, সেটা হলো, পারণ উপলক্ষে দু একজন গরীব লোক বা ব্রাহ্মণকে খাওয়ানো, এটা খারাপ কিছু নয়, এটা চলতে পারে; কারণ, এর মাধ্যমে যেমন সমাজ সেবা হয়, তেমনি সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব ফটো হিসেবে এই প্রবন্ধের সাথে যেটা যুক্ত করেছি , তার জবাব দেওয়া ই আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য। তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক: ফটোপোস্টের শুরুতেই লিখা হয়েছে , “ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই , কোন প্রতিমূর্তি নেই , কোন প্রতিকৃতি নেই , কোন রূপক নেই , কোন ফটোগ্রাফ নেই , তাঁর কোন ভাস্কর্য নেই। ” এর রেফারেন্স হিসেবে লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ , অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ এবং যযুর্বেদ অধ্যায় ৩২ , অনুচ্ছেদ ১৯। ” এবার দেখা যাক , সত্যিই সেখানে কী লিখা আছে এবং তার প্রকৃত অনুবাদটা কী ? রেফারেন্স হিসেবে প্রথম বইয়ের নাম লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ ”, কিন্তু এর নাম প্রকৃতপক্ষে “ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ”, লিখেছে তো কোনো এক মুসলমান , তার কাছ থেকে আপনি আর কত শুদ্ধ বানান আশা করতে পারেন ? রেফারেন্সের বাকি অংশে লিখা হয়েছে- “ অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ ”, অধ্যায় ৪ ঠিক থাকলেও এই উপনিষদে অনুচ্ছেদ বলে কিছু হয় না , এটি হবে আসলে শ্লোক নং ১৯। শুধু এই রেফারেন্সেই নয় , প্রতিটি রেফারেন্সেই দেখবেন কিছু না কিছ

হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় ?

হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? এবং ইসলাম নাকি সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম ! উপরের এই দুটো প্রসঙ্গসহ মুসলমানদের করা আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে জানতে চেয়ে ছিলো Pritam Das নামের আমার এক ফেসবুক বন্ধু। শুরুতেই দেখে নিন সেই প্রসঙ্গগুলো- মুসলমানরা বলে যে , একটা হাতির মুখ মানুষের শরীরে কি করে বসানো যায় ? কী যুক্তি আছে এটার পেছনে ? আর সেইটাকে তোমরা হিন্দুরা আবার পূজাও করো! আবার সেই গনেশের একটা কলা গাছ বউও আছে। তারপর হুনুমান কী করে উড়তে পারে ? কী করে একাই একটা লংকা জ্বালিয়ে দিতে পারে ? এছাড়াও বলে যে ইসলাম নাকি পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম , হিন্দু ধর্ম অনেক পরে এসেছে। পৃথিবী কবে শেষ হবে তা নাকি ওদের কোরানে লেখা আছে। আর মাঝে মধ্যে প্রায় জিজ্ঞেস করে হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? কোনো না কোনো তো একটা বড় দেবতা হয়েই যায়। সবাই তো এক দেবতা পূজা করে না। কেউ কেউ তো আলাদা পূজা করে , তাহলে হিন্দুদের মধ্যে দেবতা নিয়ে একতার অভাব। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি... এবার দেখুন আমার জবাব: মুসলমানরা হিন্দুদেরকে ধর্ম বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে বিব্রত করে , ঠিকঠাক সেই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে না

বেদ এ ‘‘পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত’’- =>এছাড়া মা- ছেলে দূষ্কর্ম, এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?”

“ রিগবেদ ---- অধ্যায় - ৩ , খন্ড - ৩১ , শ্লোক : ১ - ২ ‘‘ পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত ’’- => এছাড়া মা - ছেলে দূষ্কর্ম , এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?” ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছে Md Alhaz Hosain নামের এক মুসলমান আমার এক পোস্টের কমেন্ট বক্সে। বেদ এ্রর এই বাণীতে আসলেই কী বলা হয়েছে , সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন আমার এই পোস্টে : ফেসবুকে মুসলমানদের কমেন্ট মানেই গালাগালি , খিস্তি। এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে , মুসলমানরা যুক্তি বোঝে না। কারণ , যারা যুক্তি বোঝে তারা যুক্তি দিয়ে কথা বলে , প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে তাদের গালি - গালাজের প্রয়োজন হয় না। এজন্য তথ্য রেফারেন্স দিয়ে লেখার পরও যারা সেসবে নজর না দিয়ে গালাগালি করে তাদের কমন্টেকে আমি রাস্তার পাগলা কুত্তার ঘেউ ঘেউ বলেই মনে করি , তাই সেগুলোকে কোনো গুরুত্বই দিই না। কিন্তু আজকে যে কমেন্টটির উত্তর দিচ্ছি , সে বেশ ভদ্রভাবেই কথাগুলো তুলে ধরেছে ; তাই তার লেখার জবাব দিচ্ছি , যদিও পাগলা