১৫ নভেম্বর, দেশপ্রেমিক হিন্দু বীর, নাথুরাম গডসের বলিদান দিবস
:
(নাথুরাম গডসের সেই ঐতিহাসিক
জবানবন্দী সম্বলিত এই লেখাটি পড়তে
পড়তে যখন শেষ হয়ে
আসবে, তখন আপনার অন্তরাত্মা
নিশ্চয় ডুকরে কেঁদে উঠবে।)
অব্যাহত মুসলিম তোষণ; এর
ফলে ভারত মাতার দ্বিখণ্ডন
এবং এর ফলে মুসলমানদের
দ্বারা প্রায় ২০ লক্ষ
হিন্দু ও শিখের মৃত্যু
এবং কয়েক লক্ষ হিন্দু
ও শিখ মেয়ের মুসলমান
কর্তৃক ধর্ষিতা হওয়ার ঘটনার জন্য
প্রত্যক্ষভাবে দায়ী মোহনদাস করমচাঁদ
গান্ধীকে, নাথুরাম গডসে, ১৯৪৮ সালের
৩০ জানুয়ারি, বিকেল ৫ টায়
দিল্লির বিড়লা ভবনের সামনে
গুলি করে হত্যা করে। সেই
সময় গান্ধী তার দুই
নগ্ন শয্যাসঙ্গিনী মানু ও কানু
গান্ধীর কাঁধে ভর করে,
১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট
থেকে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক
হানাহানি বন্ধে বিভিন্ন মন্দিরে
মন্দিরে গান্ধীর আয়োজনে যে প্রার্থনা
সভা চলছিলো, তাতে যোগ দেওয়ার
জন্য বিড়লা ভবন থেকে
বের হচ্ছিলো। খেয়াল
করুন, মুসলমানরা যখন পুর্ব ও
পশ্চিম পাকিস্তানে, তরোয়াল দিয়ে হিন্দু
ও শিখদের হত্যা করছিলো,
মেয়েদের ধর্ষণ করছিলো, হিন্দু
ও শিখদের বাড়ি-ঘর
পুড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে দেশ
থেকে তাড়াচ্ছিলো, সেই সময় গান্ধী
মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে এই হানাহানি
বন্ধে প্রার্থনা সভার আয়োজন করে
যাচ্ছিলো আর সেই প্রার্থনা
সভায় কোরানের আয়াত পাঠ করে
শোনাচ্ছিলো, যার শ্রোতা একমাত্র
হিন্দুরা। মুসলমানরা
হিন্দুদের হত্যা করছে, আর
গান্ধী কোরানের আয়াত শোনাচ্ছে সেই
সব হিন্দুদের, যে হিন্দুরা নিজেরাই
কিনা কোরানের আয়াত অনুসারে মুসলমানদের
দ্বারা আক্রান্ত। এই
অপদার্থ, মুসলিমতোষক ও নপুসংক গান্ধীর
হাত থেকে হিন্দুজাতি তথা
ভারতকে বাঁচানোর জন্য, গডসে পয়েন্ট
ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে পর
পর তিনটি গুলি করে। সাথে
সাথে গান্ধী মাটিতে লুটিয়ে
পড়ে। পিস্তলের
গুলিতে যাতে অন্য কেউ
ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য
গডসে হাত উঁচু করে,
এক পাও না নড়ে,
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। প্রকৃত
বীর কাকে বলে, সেটা
একবার চিন্তা করুন।
গুলি করার পর গডসে
পালায় নি, পালানোর চেষ্টা
করে নি এমনকি সে
সেকথা ভাবেও নি।
কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে
গডসেকে নিয়ে যায়।
পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত এই একমাত্র
আসামী, যাকে খুনের ঘটনাস্থল
থেকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে বিন্দু
মাত্র কষ্ট স্বীকার করতে
হয় নি। ৬৫৫
দিন ধরে গডসের বিচার
চলে। বিচারে
গডসে তার পক্ষে কোনো
উকিল নিয়োগ করেন নি। আত্মপক্ষ
সমর্থন করে গডসে যে
বক্তব্য প্রদান করে, তা
ই "নাথুরাম গডসের জবানবন্দী" নামে
পরিচিত। গান্ধী
খুনের ঘটনায়, নাথুরাম গডসের
সাথে ষড়যন্ত্রকারী ও সহযোগী হিসেবে
নাথুর ভাই গোপাল গডসে
সহ আরও সাতজনকে আসামী
করা হয়। কিন্তু
আদালতে, গডসে, কোনোরকম সংঘবদ্ধ
ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করে
এবং নিজেই গান্ধী হত্যার
সম্পূর্ণ দায় নিজের কাঁধে
নেয়, ফলে অন্যান্যরা এই
মামলা থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু
আদালতে দেওয়া গডসের ভাষণ,
জনসম্মুখে যাতে প্রকাশ না
হয়, সেজন্য নেহেরুর কংগ্রেস
সরকার তা প্রকাশ না
করার বাধ্যবাধকতা করে আইন পাশ
করে। ফলে
দীর্ঘদিন ভারতবাসী, গান্ধী হত্যার প্রকৃত
কারণ সম্পর্কে, গডসে কী বলেছে,
সে সম্পর্কে অন্ধকারেই থেকে যায়।
কিন্তু ১৯৬৮ সালে বোম্বে
হাইকোর্টে দায়ের করা একটি
জনস্বার্থ মামলায়, আদালত, গডসের জবানবন্দী
প্রকাশের পক্ষে রায় দেয়
এবং তারপরই ভারতবাসীসহ সারা
পৃথিবীর জানতে পারে, গান্ধী
হত্যার প্রকৃত কারণ।
এরপর ১৯৭৭ সালে গান্ধী
হত্যার আপিল মামলার একজন
বিচারপতি, জি.ডি খোসলা,
নাথুরামের জবানবন্দী এবং বিচার সম্পর্কিত
নানা বিষয় নিয়ে একটি
বই লিখেন এবং তারপরে
নাথুর ভাই গোপাল গডসেও,
কেনো নাথুরাম, গান্ধীকে হত্যা করেছে, তার
বিষদ বর্ণনা দিয়ে একটি
বই প্রকাশ করে, এই
দুটি বইয়ের মাধ্যমেই মূলত
ভারতবাসীসহ সারা পৃথিবীর সচেতন
লোকজন এখন মোটামুটি জানে
যে, নাথুরাম গডসে, কেনো নিজেকে
বলি দিয়ে গান্ধীকে হত্যা
করেছিলো।
আদালতের বিচারপতিরা গডসেকে প্রশ্ন করেছিলো,
কেনো গান্ধীকে হত্যা করলেন ? এই
প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে
গডসে যা বলেছিলো, সেটাই
নাথুরাম গডেসের জবানবন্দী হিসেবে
এখন পরিচিত ও বিখ্যাত। এতে
গডসে, গান্ধীকে হত্যার কারণ সম্পর্কে
যা বলেছিলো, তার সেই বক্তৃতার
মধ্যেই গান্ধী হত্যার সকল
কারণ, সংক্ষেপে মোটামুটি বর্ণনা করা আছে। সেই
জবানবন্দীটি এখানে উল্লেখ করছি
:
"একটি নিবেদিতপ্রাণ ব্রাহ্মণ
পরিবারে জন্ম নেয়ায় আমি
স্বাভাবিকভাবে হিন্দু ধর্ম, হিন্দু
ইতিহাস ও হিন্দু সংস্কৃতির
প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি;
হিন্দুত্বের প্রতি আমার গভীর
মমত্ববোধ জেগে উঠে।বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমার
মধ্যে কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত
স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটে।যে জন্য আমি
অচ্ছুত প্রথা ও জন্মগত
বর্ণভেদ উচ্ছেদে নিজেকে নিয়োজিত করি। আমি
খোলাখুলি জাতপাত বিরোধী আন্দোলনে
যোগদান করি এবং বিশ্বাস
করতে শুরু করি,সামাজিক
ও ধর্মীয় অধিকারের প্রশ্নে
প্রতিটি হিন্দুর মর্যাদা সমান।শুধু
যোগ্যতার ভিত্তিতেই উচ্চ-নিচ ভেদাভেদ
হতে পারে।এ
ভেদাভেদ জন্মগতভাবে কোনো বিশেষ বর্ণের
বা পেশার কারণে হতে
পারে না।আমি
প্রকাশ্যে বর্ণবাদ বিরোধী ভোজে অংশ
নেই।এসব
ভোজে হাজার হাজার হিন্দু
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, কায়স্থ, বৈশ্য, চামার ও
বাঙ্গি যোগ দেয়।আমরা বর্ণভেদ প্রথা
ভেঙ্গে দেই এবং একে
অপরের সঙ্গে খাবার খাই।
আমি প্রাচীন ও
আধুনিক ভারতের ইতিহাস পাঠ
করেছি।ইংল্যান্ড,
আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো
কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ সম্পর্কেও পড়াশোনা
করেছি।তাছাড়া
দাদাভাই নওরোজি, স্বামী বিবেকানন্দ, গোখলে
ও তিলকের লেখা বই-পুস্তক ও বক্তৃতাও
প্রচুর পাঠ করেছি।
শুধু তাই নয়, আমি
সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদের মূল
বিষয়বস্তুও পাঠ করেছি।তবে আমি বিশেষভাবে
পাঠ করেছি বীর সাভারকার
ও গান্ধীজীর লেখা বই-পুস্তক
ও তাদের বক্তৃতা।
আমি বিশ্বাস করি, বিগত ত্রিশ
বছর যাবৎ এ দু'ব্যক্তির চিন্তা ও কার্যকলাপ
ভারতীয়দের যতদূর প্রভাবিত করেছে
অন্য কোনো ব্যক্তির চিন্তা
ও আদর্শ ততটুকু প্রভাব
বিস্তারে সক্ষম হয়নি।
এসব পড়াশোনা ও চিন্তা-ভাবনা
থেকে আমি ভাবতে শুরু
করি, একজন দেশপ্রেমিক ও
বিশ্ব নাগরিক হিসাবে হিন্দুরাজ
ও হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠা করাই আমার প্রথম
কাজ।৩০
কোটি হিন্দুর (১৯৪৮ সালে) ন্যায়সঙ্গত
স্বার্থরক্ষা এবং তাদের স্বাধীনতা
নিশ্চিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানবজাতির
এক-পঞ্চমাংশের স্বাধীনতা ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত
হবে। এ
বিশ্বাস আমাকে হিন্দু সনাতনী
আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতি
আত্মনিয়োগে অনুপ্রাণিত করে। আমি
আরো বিশ্বাস করতে শুরু করি,
হিন্দু সনাতনী আদর্শই কেবল
আমার মাতৃভূমি হিন্দুস্তানের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন
ও সংরক্ষণ করতে পারে।
১৯২০ সালে লোকমান্য
তিলকের মৃত্যুর পর থেকে প্রথমবার
কংগ্রেসে গান্ধীজীর প্রভাব বৃদ্ধি পায়
এবং পরে কংগ্রেসে তার
প্রভাব নিরংকুশ হয়ে দাঁড়ায়।
জনগণকে সচেতন করে তোলার
জন্য গান্ধী যে ভূমিকা
পালন করেছেন, তা ছিল তাদের
কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
গান্ধীর অহিংস ও সত্যাগ্রহ
স্নোগানের ফলে জনগণের মধ্যে
তার প্রভাব আরো বৃদ্ধি
পায়।কোনো
সচেতন ও শিক্ষিত লোক
এ শ্লোগানের বিরোধিতা করেনি। এসব
শ্লোগানে কোনো নতুনত্ব ছিল
না। যে
কোনো গণআন্দোলনেই এসব শ্লোগান দেয়া
হয়। তবে
কখনো কখনো দেশ আমাদেরকে
অহিংসার পথ অগ্রাহ্য করতে
এবং শক্তি প্রয়োগে বাধ্য
করে। আমি
কখনো এ কথা চিন্তা
করিনি যে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে
সশস্ত্র প্রতিরোধ অন্যায়। আমি
আগ্রাসী শত্রুকে শক্তি প্রয়োগে পরাভূত
করা এবং প্রতিরোধ করা
আমার ধর্মীয় ও নৈতিক
কর্তব্য বলে মনে করেছি।রামায়ণের
বর্ণনা অনুযায়ী রাম সীতাকে উদ্ধারে
রাজা রাবনের সঙ্গে লড়াই
করেছিলেন। মহাভারতের
বর্ণনানুযায়ী কৃষ্ণ কংসের পাপাচারের
অবসান ঘটাতে তাকে হত্যা
করেছিলেন এবং অর্জুনকে তার
আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে
লড়াই করে তাদেরকে হত্যা
করতে হয়েছে।শুধু
তাই নয়, তাকে পরম
পূজিত কর্ণের সঙ্গেও লড়াই
করতে হয়েছে।কারণ
কর্ণ ছিলেন আগ্রাসীদের পক্ষে।আমার
দৃঢ় বিশ্বাস, রাম, কৃষ্ণ ও
অর্জুনকে সহিংসতার অবতার হিসাবে অভিযুক্ত
করে মহাত্মা গান্ধী মানুষের স্বাভাবিক
আচরণের প্রতি চরম অজ্ঞতা
প্রদর্শন করেছেন।
নিকট অতীতে ছত্রপতি
শিবাজিই প্রথম মুসলিম আগ্রাসনের
বিরুদ্ধে বীরোচিত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং
ভারতে মুসলিম উৎপীড়নের মূলোৎপাটন
করেন।আগ্রাসী
আফজাল খানকে হত্যা করা
ছিল শিবাজির জন্য অবশ্য কর্তব্য।নয়তো
তিনি নিজেই নিহত হতেন।শিবাজি,
রানা প্রতাপ ও গুরু
গোবিন্দের মতো ঐতিহাসিক বীর
যোদ্ধাদের বিপথগামী দেশপ্রেমিক হিসাবে নিন্দা করে
গান্ধীজী নিজের আত্মম্ভরিতা প্রকাশ
করেছেন। গান্ধীজী
অহিংস ও সত্যাগ্রহ নীতির
নামে দেশে অবর্ণনীয় দুর্দশা
ডেকে এনেছেন।পক্ষান্তরে,
রানা প্রতাপ, শিবাজি ও গুরুগোবিন্দ
তাদের জাতিকে যে মুক্তি
এনে দিয়েছিলেন সেজন্য তারা জাতির
হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে থাকবেন।
গান্ধীজী বিগত ৩২ বছর
ধরে যে বাগাড়ম্বর করেছেন
সেটা তার মুসলিমপন্থি আমরণ
অনশনে পূর্ণতা লাভ করে।গান্ধীর এ অনশন আমাকে
এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে
যে, দ্রুত তার অস্তিত্ব
নাশ করতে হবে।তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায়
ভারতীয়দের অধিকার ও কল্যাণে
যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।
কিন্তু ভারতে প্রত্যাবর্তন করার
পর তার মধ্যে রাজানুগত্যের
একটি মনোভাব জন্ম নেয়। তিনি
এমন এক পরিস্থিতিতে কাজ
করতে থাকেন যেখানে তার
কাজকর্মের ভালোমন্দের বিচার করতেন শুধু
তিনি নিজে।দেশ
যদি তার নেতৃত্ব চেয়ে
থাকে তাহলে দেশকে তার
অভ্রান্ততাও গ্রহণ করতে হবে।আর
যদি তা না হয়ে
থাকে তাহলে তাকে কংগ্রেস
থেকে দূরে সরে যেতে
হবে এবং নিজের পথে
চলতে হবে। এ
অবস্থায় কোনো মাঝামাঝি পথ
নেই।
হয়তো কংগ্রেসকে তার
পাগলামি, খামখেয়ালি ও পুরনো ধ্যানধারণা
গ্রহণ করতে হবে নয়তো
কংগ্রেসকে গান্ধীকে বাদ দিয়ে চলতে
হবে।অসহযোগ
আন্দোলন হচ্ছে গান্ধীর মস্তিষ্কপ্রসূত
চিন্তা। এ
আন্দোলনের কৌশল কারো জানা
ছিল না। কখন
আন্দোলন শুরু করতে হবে
এবং এ আন্দোলনে বিরতি
দিতে হবে সবই ছিল
গান্ধীর একক সিদ্ধান্ত।
এ আন্দোলন ব্যর্থ কিংবা সফল
হোক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই দাঁড়াক তাতে
গান্ধীর কিছুই আসতো যেতো
না। তার
ইচ্ছাই ছিল চূড়ান্ত।
একজন সত্যাগ্রহী কখনো ব্যর্থ হতে
পারে না' এটাই ছিল
তার মূলমন্ত্র। কিন্তু
সত্যাগ্রহ বলতে কি বুঝায়
তিনি ছাড়া তা আর
কারো জানা ছিল না। এভাবে
গান্ধী নিজেই নিজের কাজকর্মের
বিচারক ও জুরি দু'টিই হয়ে দাঁড়ান। কঠোর
কৃচ্ছতা, নিরবচ্ছিন্ন কাজ ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ
চরিত্রের সঙ্গে উন্মত্ততা ও
ছেলেমানুষীর সংমিশ্রণে গান্ধী এক অপ্রতিরোধ্য
ও অপরিবর্তনযোগ্য নেতায় পরিণত হন। অনেকেই
মনে করতেন, তার রাজনীতি
ভুল। কিন্তু
এদেরকে হয়তো কংগ্রেস ছাড়তে
হয়েছে নয়তো তার খামখেয়ালির
কাছে নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে জলাঞ্জলি
দিতে হয়েছে।চরম
দায়িত্বহীনতার একটি পর্যায়ে গান্ধী
একটির পর একটি ভুল
করে গেছেন।একটির
পর একটি ব্যর্থতা তাকে
গ্রাস করছিল। তার
নেতৃত্বে উপর্যুপরি দুর্যোগ আসছিল।
গান্ধীর মুসলিমপ্রীতির পরিচয় ফুটে উঠে
ভারতের জাতীয় ভাষার প্রশ্নে
তার বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিতে।
এটা সর্বজনবিদিত যে, জাতীয় ভাষা
হিসাবে হিন্দির দাবি ছিল সর্বাগ্রে।ভারতে
তার ক্যারিয়ারের শুরুতে গান্ধী হিন্দির
প্রতি অতীব গুরুত্ব দিয়েছিলেন।কিন্তু
যখন তিনি দেখতে পেলেন,
মুসলমানরা হিন্দি পছন্দ করে
না তখন তিনি হিন্দুস্তানী
ভাষা হিসাবে আখ্যায়িত অন্য
একটি ভাষার প্রবক্তা সাজেন। ভারতের
প্রত্যেকেই এ কথা জানে,
হিন্দুস্তানী নামে কোনো ভাষা
নেই। এ
ভাষার কোনো ব্যাকরণ অথবা
কোনো শব্দ ভাণ্ডারও নেই।হিন্দুস্তানী
ভাষা হচ্ছে একটি কথ্য
ভাষা।তবে
লিখিত ভাষা নয়।এটা হচ্ছে হিন্দি
ও উর্দুর সংমিশ্রণে একটি
জারজ ভাষা। গান্ধীর
প্রচারণা সত্ত্বেও এটি জনপ্রিয় হতে
পারেনি। তিনি
মুসলমানদের তুষ্ট করার জন্য
বলেছিলেন, হিন্দুস্তানী হবে ভারতের জাতীয়
ভাষা।তার
অন্ধ অনুসারীরা তাকে অনুসরণ করে
এবং তথাকথিত এ ভাষা ব্যবহার
করতে শুরু করে।
মুসলমানদের সন্তুষ্ট করার জন্য হিন্দি
ভাষার সৌকর্য ও মাধুর্য বিসর্জন
দেয়া হয়। গান্ধী
এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন হিন্দু স্বার্থকে বলি
দিয়ে।
১৯৪৬ সালের আগস্ট
থেকে মুসলিম ভাড়াটিয়া বাহিনী
হিন্দু নিধনে মেতে উঠে।তদানীন্তন
লর্ড ওয়াভেল এসব ঘটনায়
মর্মাহত হলেও তিনি ১৯৩৫
সালের ভারত শাসন আইন
অনুযায়ী ধর্ষণ, হত্যা ও
অগ্নিকান্ড বন্ধে তার কতৃত্ব
প্রয়োগ করেননি।বাংলা
থেকে করাচি পর্যন্ত হিন্দুর
রক্তে রঞ্জিত হয়।কোথাও কোথাও হিন্দুরা
প্রতিশোধ গ্রহণে হামলা চালায়। ১৯৪৬
সালের সেপ্টেম্বরে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়।কিন্তু
শুরু থেকে এ সরকারের
মুসলিম সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতে লিপ্ত হয়।
মুসলমানরা যে সরকারের অংশ
ছিল সে সরকারের বিরুদ্ধে
তারা যত বেশি আনুগত্যহীন
ও উদ্ধত হয়ে উঠছিল,
গান্ধী তত বেশি তাদের
প্রতি মোহাবিষ্ট হচ্ছিলেন।সংকট
নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হয়ে লর্ড
ওয়াভেল পদত্যাগ করেন এবং লর্ড
মাউন্টব্যাটেন তার স্থলাভিষিক্ত হন। কংগ্রেস
জাতীয়তা ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস
করতো।কিন্তু
তারা বেয়নেটের মুখে গোপনে পাকিস্তান
দাবি মেনে নেয় এবং
জিন্নাহর কাছে নির্লজ্জভাবে আত্মসর্মপণ
করে।ভারত
বিভক্ত হয় এবং ১৯৪৭
সালের ১৫ আগস্ট থেকে
ভারতের ভূখণ্ড আমাদের কাছে
বিদেশী ভূখণ্ড হিসাবে পরিগণিত
হয়। লর্ড
মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস সার্কেলে ভারতের শ্রেষ্ঠতম ভাইসরয়
ও গভর্নর জেনারেল হিসাবে
বিবেচিত হচ্ছিলেন। ১৯৪৮
সালের ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে
ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।কিন্তু
ঘোষিত সময়ের ১০ মাস
আগে মাউন্টব্যাটেন আমাদেরকে একটি খণ্ডিত ভারত
উপহার দেন। এটা
ছিল গান্ধীর ৩০ বছরের একনায়কতান্ত্রিক
নেতৃত্বের ফসল এবং কংগ্রেস
এটাকে বলছে স্বাধীনতা ও
ক্ষমতা হস্তান্তর।অবশেষে
হিন্দু- মুসলিম ঐক্যের ফানুস
এক সময় ফেটে যায়
এবং নেহরু ও তার
সাঙ্গ-পাঙ্গদের সম্মতিতে ধর্মভিত্তিক একটি রাষ্ট্র কায়েম
হয়। নেহরু
ও তার দোসররা তাদের
ত্যাগের এই ফসলকে স্বাধীনতা
হিসাবে আখ্যায়িত করেন।কার
ত্যাগ? গান্ধীর সম্মতিতে যখন কংগ্রেসের শীর্ষ
নেতৃবৃন্দ দেশকে বিভক্ত করে
ফেলে তখন আমার মন
ভয়ানক ক্রোধে ফেটে পড়তে
থাকে।
দিল্লির কয়েকটি মসজিদ হিন্দুরা
দখল করে নিলে গান্ধী
আমরণ অনশন শুরু করেন। তিনি
শর্ত দেন, এসব মসজিদ
খালি করে দেয়া না
হলে তিনি অনশন ভঙ্গ
করবেন না।কিন্তু
যখন পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর ভয়াবহ হামলা
চালানো হয় সে সময়
গান্ধী টু শব্দটি পর্যন্ত
উচ্চারণ করেননি এবং তিনি
নিন্দাও করেননি।গান্ধী
খুব ধূর্ত।তিনি
পাকিস্তানি মুসলমানদের উপর কোনো শর্ত
আরোপ করেননি।তিনি
জানতেন, অনশন করে মরে
গেলেও কোনো পাকিস্তানি মুসলমান
তার জন্য দুঃখ পাবে
না। এ
কারণে তিনি পাকিস্তানি মুসলমানদের
উপর কোনো শর্ত আরোপ
করেননি। অভিজ্ঞতা
থেকে তিনি জানতেন, জিন্নাহ
তার অনশনে বিচলিত হবেন
না এবং মুসলিম লিগ
তার অন্তরাত্মার প্রতি খুব কমই
গুরুত্ব আরোপ করে।
গান্ধীকে জাতির পিতা হিসাবে
আখ্যায়িত করা হয়।যদি তাই হয়
তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশকে ভাঙ্গার
সম্মতি দিয়ে তিনি তার
পিতৃসুলভ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।আমি
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গান্ধী তার
কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি
নিজেকে পাকিস্তানের জাতির পিতা হিসাবে
প্রমাণ করেছেন। জিন্নাহর
বজ্র কঠিন ইচ্ছাশক্তির কাছে
তার অন্তরাত্মা,আধ্যাত্মিক শক্তি ও অহিংস
মতবাদ সবই পরাজিত এবং
ক্ষমতাহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে আমি
আপন মনে ভেবেছি এবং
দেখতে পেয়েছি, আমি পুরোপুরি নিঃশেষ
হয়ে গেছি।গান্ধীকে
হত্যা করলে আমি জনগণের
কাছ থেকে ঘৃণা ছাড়া
আর কিছুই আশা করতে
পারি না এবং আমাকে
আমার সকল সম্মান হারাতে
হবে।তবে
আমি একই সঙ্গে এ
কথাও ভেবেছি, গান্ধীর অবর্তমানে ভারতের রাজনীতি নিঃসন্দেহে
বাস্তবভিত্তিক বলে প্রমাণিত হবে,
প্রতিশোধ গ্রহণের যোগ্য হবে এবং
সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে শক্তিশালী হবে।কোনো
সন্দেহ নেই, আমার ভবিষ্যৎ
হবে পুরোপুরি ধ্বংস। তবে
জাতি পাকিস্তানি আগ্রাসন থেকে নিরাপদ হবে।মানুষ
আমাকে বোকা কিংবা মাথামোটা
বলে উপহাস করতে পারে।তবে
জাতি যুক্তির পথ খুঁজে পাবে
যা একটি স্বাধীন ও
বলিষ্ঠ জাতি গঠনের জন্য
অপরিহার্য বলে মনে করি। এসব
বিষয় চিন্তা করে গান্ধীকে
হত্যার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করি।কিন্তু
এ কথা আমি কারো
কাছে প্রকাশ করিনি।
আমি আমার দু'হাতে
শক্তি সঞ্চয় করি এবং
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি
বিড়লা হাউসে প্রার্থনা সভায়
গান্ধীকে গুলি করি।
আমি বলতে চাই যে,
আমি এমন এক ব্যক্তির
প্রতি গুলিবর্ষণ করেছি যার নীতি
ও কার্যকলাপ কোটি কোটি হিন্দুর
দুঃখ, দুর্দশা ও ধ্বংস ডেকে
এনেছে।দেশে
এমন কোনো আইন নেই
যার আওতায় এমন এক
অপরাধীর বিচার হতে পারে।তাই
আমি তার প্রতি মৃত্যুবাণ
নিক্ষেপ করেছি।'
ব্যক্তিগতভাবে কারো প্রতি আমার
কোনো বিদ্বেষ নেই।তবে
আমি বলতে চাই, এ
সরকারের নীতির কারণে তাদের
প্রতি আমার কোনো শ্রদ্ধা
নেই।এ
সরকারের নীতি হচ্ছে দৃষ্টিকটুভাবে
মুসলিম ঘেঁষা।একই
সঙ্গে আমি বিশ্বাস করি,
সরকারের এ মুসলিম ঘেঁষা
নীতির মূলে রয়েছে গান্ধীর
উপস্থিতি।আমাকে
দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে,
প্রধানমন্ত্রী নেহরু পুরোপুরি অনবহিত
যে, তিনি প্রায়ই যখন
ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র
হিসাবে উল্লেখ করেন তখন
তার কথা ও কাজের
গরমিল স্পষ্ট ধরা পড়ে। এটা
উল্লেখ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,
ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র কায়েমে নেহরু নেতৃস্থানীয়
ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং
গান্ধীর মুসলিম তোষণ নীতির
কারণে তার কাজ সহজতর
হয়ে গিয়েছিল। আমি
যা করেছি তার দায়-দায়িত্ব আমার।তাই
আমি আমার দায়ের পরিণতি
গ্রহণ করার জন্য আদালতে
দাঁড়িয়েছি এবং বিচারক আমার
প্রাপ্য শাস্তি আমাকে দেবেন।আমি
আরো বলতে চাই, করুণার
জন্য আমি প্রার্থনা করছি
না।আমি
এটাও চাই না কেউ
আমার পক্ষ থেকে করুণা
ভিক্ষা করুক।আমি
যা করেছি সে জন্য
সকল মহল থেকে আমাকে
ভর্ৎসনা করা হচ্ছে।
এতে আমার আস্থায় বিন্দুমাত্র
ফাটল ধরেনি। আমার
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ
নেই, সৎ ইতিহাসবিদগণ আমার
কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন
এবং ভবিষ্যতে একদিন প্রকৃত সত্যের
মূল্য দেবেন।
যদি দেশভক্তি পাপ
হয় তবে আমি পাপ
করেছি, যদি প্রশংসাযোগ্য হয়
তো আমি নিজেকে সেই
প্রশংসার অধিকারী বলে মনে করি। আমি
এও বিশ্বাস করি যে মনুষ্য
দ্বারা স্থাপিত বিচারালয়ের উপর যদি কোন
বিচারালয় থাকে সেখানে আমার
কাজ অপরাধ বলে গণ্য
হবেনা। আমি
দেশ আর জাতির ভালোর
জন্য এই কাজ করেছি।আমি
ওই ব্যক্তির উপর গুলি চালিয়েছি
যার নীতির জন্য হিন্দুদের
উপর ঘোর সংকট এসেছে
আর হিন্দুরা নষ্ট হয়েছে।
আমার অস্থি ভষ্ম
পবিত্র সিন্ধু নদে সেইদিন
প্রবাহিত করো, যেদিন সিন্ধু
নদ এক স্বতন্ত্র নদ
রূপে ভারতীয় ধ্বজার তলা
দিয়ে বয়ে যাবে; তাতে
যত বছর সময় লাগে
লাগুক না কেনো, যত
বংশধর জন্ম নেওয়ার প্রয়োজন
হোক না কেনো, কিন্তু
তত দিন পর্যন্ত আমার
অস্থি ভষ্ম বিসর্জন করবে
না।"
গডসের শেষ ইচ্ছা
অনুসারে, তার অস্থি ভষ্ম,
এখনও তার পরিবারের কাছে
রক্ষিত আছে। প্রতিবছর
তার বলিদান দিবসে- উৎসাহী
তরুন, যুবক ও প্রকৃতদেশপ্রেমিকরা
সেই অস্থিভষ্ম সামনে রেখে নাথুরাম
গডসেকে স্মরণ করে।
নাথুরাম যেদিন তার এই
জবানবন্দী আদালতে দেয়, সেদিন
আদালতের এজলাস ছিলো লোকে
ভর্তি । কিন্তু
এরা কেউ সাধারণ লোক
ছিলেন না, সবাই ছিলেন
জজ-ব্যারিষ্টার-উকিলের স্ত্রী।
বিচারপতিরা দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন করে
নি এবং কারো কোনো
হস্তক্ষেপ বা কোনো রকম
বিরতি ছাড়াই গডসের অনলবর্ষী
বক্তৃতা আদালতে উপস্থিত সবাই
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছিলো।
গডসে যখন বক্তৃতা শেষ
করে, তখন সবাই চোখের
জল মুছতেছিলো। জি.ডি খোসলা তার
বইয়ে লিখেছেন, এই চোখের জল
গান্ধীর জন্য নয়, গডসের
জন্য। যদি
উপস্থিত সবার মতের ভিত্তিতে
রায় দেওয়া হতো, তাহলে
নিশ্চয় গডসে সেদিন মুক্তি
পেয়ে যেতো।
এরপর ১৫ নভেম্বর,
১৯৪৮; নেহেরুর সরকার, গডসের ফাঁসি
কার্যকর করে। বলিদানের
ঠিক আগে, গডসে, সোমনাথ
মন্দিরের জন্য ১০০ রুপী
দান করে যান এবং
ফাঁসীর মঞ্চে চড়ার পর
গডসের শেষ উক্তি ছিলো,
"অখণ্ড ভারত, অমর রহে।"
অশুভ শক্তিকে বিনাশ
করার জন্য ভগবান শ্রীরাম
চন্দ্র, রাবনকে বিনাশ করেছিলো;
হিন্দুদের মুক্তির জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলো,
কংসকে হত্যা করেছিলো; তাহলে
কমপক্ষে ২০ লক্ষ হিন্দু
ও শিখ হত্যা এবং
কয়েক লক্ষ হিন্দু ও
শিখ নারীর ধর্ষিতা হওয়ার
ও ভারত মাতাকে বিভক্ত
করার প্রত্যক্ষ কারণ যে পাপাত্মা
গান্ধী, সেই গান্ধীকে বিনাশকারী,
নাথুরাম গডসেকে কেনো আপনি
শ্রদ্ধা না করে ঘৃণা
করবেন ? গডসে কি গান্ধী
নামের এক অশুভ শক্তির
হাত থেকে হিন্দুদের মুক্তি
দিয়ে যায় নি ?
নিজের বিবেকের কাছে
আজ এই প্রশ্নটি করুন।
জয় হিন্দ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন