কোন হিন্দু মেয়ের পক্ষে কোন মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করা কখনোই উচিত নয়।
[ প্রিয়াঙ্কা টোডি নামের এক হিন্দু মেয়ের সাথে রিজোয়ানূর নামের এক মুসলমান ছেলের প্রেম ; অতঃপর রিজোয়ানূরের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে এই
লেখাটি লিখেছিলেন শ্রদ্ধেয় ড. রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী।]
মুসলমান যুবক শ্রী রিজোয়ানূর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যু যে
এক ঘোরতর বিতর্কের সৃষ্টি করেছে তা
বলাই বাহুল্য। পুলিশের মতে
রিজোয়ানুর আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম বরকতি এক সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলেছেন যে, এই মৃত্যুর পেছনে আরএসএস এর হাত
আছে। অথচ
ঘটনার ঘাত
প্রতিঘাত পর্যালোচনা করলে মনে
হয় এর
পেছনে কোনো ইসলামি জঙ্গী সংঘঠনের হাত
থাকাই স্বাভাবিক| কোনো এক বেসরকারী সংস্থাকে লেখা এক চিঠি থেকে জানা যায় যে, রিজোয়ানূর হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো। ওই চিঠির একটি কপি স্থানীয় তৃণমুল কংগ্রেস এমএলএ জাভেদ খাঁর কাছে আছে বলেও সংবাদে প্রকাশ।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, কোনো মুসলমানের পক্ষে ইসলাম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহন একটি মারাত্মক পাপ, যার নাম মুরতাদ। এই মুরতাদের শাস্তি হলো মৃত্যু। কাজেই এটা কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয় যে, বুঝিয়ে সুঝিয়ে রিজোয়ানুরকে এই পাপকর্ম থেকে বিরত করতে না পেরে কোনো ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন রিজোয়ানূরকে হত্যা করেছে। তবে এসব কথা আজ অবান্তর। কারণ, সিবিআই এর মতে রিজোয়ানূর আত্মহত্যা করেছে।
যাই
হোক, প্রিয়াংকা
টোডি ও রিজওয়ানুরের বিবাহের ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে একটি হিন্দু মেয়ের পক্ষে একটি মুসলমান যুবককে বিয়ে করা কতখানি যুক্তিসঙ্গত তা খতিয়ে দেখা বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ভারতের সংবিধান একজন প্রাপ্তবয়স্কা নারীকে এই অধিকার দিয়েছে যে, সে তার নিজের পছন্দ মত জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারে। তাই ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব কোন হিন্দু মেয়ে যদি ২১ বছর বা তদূর্ধ্ব কোন মুসলমান যুবককে বিয়ে করে তবে আইনের দিক থেকে তাকে বাধা দেওয়া সম্ভব নয়। অন্য দিক দিয়ে বিচার করলেও কোন হিন্দু মেয়ে যখন কোন মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে, তখন সেই মেয়েটিকে কোন ভাবেই দোষ দেওয়া চলে না। ছোটবেলা থেকেইমেয়েটি শুনে আসছে, সব ধর্মই সমান। সব ধর্মের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব। সর্বোপরি, শ্রীরামকৃষ্ণনা কি বলে গেছেন যে, সব ধর্মই এক বা যত মত তত পথ। কাজেইএই সব ভুল কথা শুনে শুনে কোন হিন্দু মেয়ে যদি কোন মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে তবে দোষ দিতে হবে তাদের, যারা ওই সব ভুল এবং মিথ্যা কথা প্রচার করে চলেছেন।
এই প্রসঙ্গে বলা উচিত হবে, যে শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, ১৯ এ রাজা রাজকৃষ্ণ স্ট্রিট, কলকাতা ৬ থেকে স্বামীঅভেদানন্দের লেখা মহাত্মা মহম্মদ ও তাঁর উপদেশ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে, যা পড়লে পাঠকের মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, ধর্ম হিসাবে ইসলাম হিন্দু ধর্ম থেকেও উৎকৃষ্ট। তাতে লেখা হয়েছে, শিশু বয়স থেকেই মহম্মদ অত্যন্ত আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ ছিলেন এবং সেই বাল্যকাল থেকেই তিনি সমাধিতে নিমগ্ন হতেন। বাল্যবয়সে মেষ চড়াতে চড়াতে না কি তাঁর জ্যোতি দর্শন হত।আরবের নিষ্ঠুর পশুপালক সমাজের একজন মানুষ সমাধিতে নিমগ্ন হতেন, এই সমস্ত সংবাদ লেখক কোথা থেকে পেলেন তা এক আশ্চর্যের ব্যাপার।
অথচ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মহম্মদ কি করেছিলেন তার এক বর্ণও লেখক কোথাও লেখেন নি। তিনি লিখলেন না যে ৫২ বছর বয়সে মহম্মদ ৬ বছরের শিশু আয়েশাকে নিকা করেছিলেন। এবং শেষ বয়সে ১২ (মতান্তরে ২২) জন রমণীকে বিয়ে করে একটি হারেম তৈরি করেছিলেন। সেপুস্তকে লেখা হল না যে ৬০৬ খ্রীষ্টাব্দে মদিনার কুরাইজা উপজাতির ইহুদিদের মহম্মদ কচুকাটা করেছিলেন। ৮০০ সক্ষম পুরুষ ইহুদিকে তরোয়াল দিয়ে ধড় মুন্ড আলাদা করা হয়েছিল এবং ১০০০ নারী ও শিশুকে নিজেদের মধ্যে ভোগের সামগ্রী হিসাবে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছিল। বয়স্ক মহিলাদের ক্রীতদাসী হিসেবে নেজেদের হাটে বিক্রি করা হয়েছিল। সব থেকে অল্পবয়স্কা সুন্দরী রিহানাকে মহম্মদ নিজের জন্য পছন্দ করে রাখলেন এবং ৮০০ মানুষকে গলা কেটে হত্যা করার পর সেই রাত্রেই মহম্মদ সেই রিহানা সুন্দরীর সঙ্গে শয়ন করলেন। সমাধিতে নিমগ্ন হওয়া একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি কি করে এই সব কাজ করলেন তা সেই পুস্তকে কেন স্থান পেল না ?
সকলেরই স্মরণ আছে যে গত কয়েকবছর আগে পন্ডিত মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহাশয়ের জন্মশতাব্দী মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়েছে। সেই পন্ডিতপ্রবর তাঁর একটি রচনায় লিখেছেন কথার ISLAM অর্থ হল I SHALL LOVE
ALL MEN বা আমি সব মানুষকে ভালোবাসব। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল ইসলাম কখনও সব মানুষকে ভালোবাসার কথাবলে না। ইসলামের মতে মানুষ দুই রকমের ১ মুসলমান ও ২ অমুসলমান অর্থাৎ কাফের। ইসলাম এই কাফেরদের ভালোবাসার কথা বলে না। কোরাণ মতে একজন মুসলমানের সব থেকে পুণ্যের কাজ হল কাফেরদের হত্যা করা। তাই কোরাণের নির্দেশ হল, কাফেরদের যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা কর, তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দাও, তাদের যথাসর্বস্বলুট কর, তাদের মহিলাদের ধর্ষণ কর, তাদের শিশুদের আছাড় দিয়ে মেরে ফেল, ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, ইসলাম সম্বন্ধে এই সব মিথ্যা কথা তিনি লিখলেন কেন। তাঁর এই মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে হিন্দুঘরের কত মেয়ে যে মুসলমানকে বিয়ে করে নরকযন্ত্রণা ভোগকরেছে, তার খবর কে রাখে?
বর্তমানে লোকনাথ বাবা কলকাতা তথা সারা পশ্চিমবঙ্গে খুবই জনপ্রিয় ও জাগ্রত হয়েছেন। আর এই জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে তাঁর আশ্বাস, যে কোন হিন্দু রণে, বনে, জলে জঙ্গলে, যেখানেই হোক না কেন, বিপদে পড়ে লোকনাথ বাবাকে স্মরণ করলে বাবা তাকে রক্ষা করবেন। কিন্তু লোকনাথ বাবার ভক্তদের এটুকু বিবেচনা করার শক্তি নেই যে, দেশভাগের প্রাক্কালে যে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমানদের দ্বারা নিহত হয়েছিল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় পাইকারী হারে যে হিন্দু হত্যা হয়েছিল, অথবা ১৯৯২ সালে অযোধ্যার মন্দির পুনর্নির্মাণের সময় বাংলাদেশে যে হিন্দু হত্যা ও হিন্দু নারী ধর্ষণ হয়েছিল, বাবা লোকনাথ তাদের রক্ষা করেন নি কেন? দেশভাগের সময়, ১৯৪৮ সালে লোকনাথ বাবার জন্মস্থান বারদি থেকে ২৫/৩০ মেইল দূরে ভৈরব পুলের উপর এক ট্রেন ভর্তি হিন্দুকে কেটে নদীর জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। লোকনাথ বাবা সেই অসহায় হিন্দুদের রক্ষা করেন নি কেন? আজও বাংলাদেশে যে সব হিন্দুরা মুসলমানদের দ্বারা অত্যাচারিত ও নিগৃহীত হচ্ছেন, তাদের রক্ষা করার জন্য লোকনাথ বাবার কোন আগ্রহ নেই কেন? আসল কথা হল হিন্দুরা আজ পরিনত হয়েছে একটা ক্লীব জাতিতে। তাই তারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির কথা ভাবছে না, ভাবছে অন্য কেউ তাদের রক্ষা করবে।
লোকনাথ বাবার এই সব ক্লীব ভক্তের দল একটা চলচ্চিত্র তৈরি করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে বাবা যোগবলে মক্কায় চলে গেছেন। মক্কায় বাবা এক মৌলভীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেই মৌলভীকে তিনি বলছেন “আমি তোমার কাছ থেকে নেব কোরাণ আর তুমি আমার কাছ থেকে নেবে পুরাণ”। অর্থাৎ কোরান আর পুরাণ একই জিনিস। এর পর সর্বাপেক্ষাক্ষতিকর
যে অংশটা দেখানো হচ্ছে তা হল, দেশে ফিরে বাবাতাঁর শিষ্যদের বলছেন যে, তিনি তাঁর জীবনে তিনজন খাঁটি বিপ্র দেখেছেন, যাদের মধ্যে মক্কার ওই মৌলভীটি একজন। অত্যন্ত মৌলবাদী মক্কার একজন মৌলভীকে একজন সাত্ত্বিক ও সৎকর্মশীল ব্রাহ্মণের সঙ্গে তুলনা করার মধ্য দিয়ে ওই ছবিতে ইসলাম ও তার মোল্লা মৌলভীদের সম্বন্ধে যে বিকৃত তথ্য প্রচার করা হয়েছে তার দ্বারাবিভ্রান্ত হয়ে হাজার হাজার প্রিয়াংকা মুসলমানকে বিয়ে করলেও তাদের কোন দোষ দেওয়া চলে না।
সকলেরই জানা আছে যে, দেশবিভাগের প্রাক্কালে মুসলমানের তাড়া খেয়ে, বিগত ১৯৪৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র পূর্ববঙ্গে পাবনার বসবাস তুলে দিয়ে ভারতের দেওঘরে এসে উঠেছিলেন। যে মুসলমানের তাড়া খেয়ে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন, ভারতে এসে সেই মুসলমানদের গুরু মহম্মদ সম্পর্কে তিনি লিখলেন,
বুদ্ধ ইশার বিভেদ করিস, চৈতন্য রসুল কৃষ্ণে
জীবোদ্ধারে হন আবির্ভাব, একই ওঁরা তাও জানিস নে!!
অথবা
কৃষ্ণ রসুল যীশু আদি নররূপী ভগবান,
তুমি যে তাদের মূর্ত প্রতীক, প্রেরিত বর্তমান।।
এই বাণীগুলিতে রসুল বলতে যে ইসলামের প্রবর্তক মহম্মদকে বলা হয়েছে তা হয়ত কাউকে বোঝাতে হবে না। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মহম্মদকে ভগবান কৃষ্ণের সমান বলেছেন। এই সব কথায় বিভ্রান্ত হয়ে হিন্দু সমাজের কোনমেয়ে যদি কোন মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে তবে তাকে কখনই দোষ দেওয়া চলে না। তা ছাড়া এ সব কিছুর ওপরে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণর যত মত তত পথ।
এই যত
মত তত
পথকে ভুল
ব্যাখ্যা দিতে মহেন্দ্র গুপ্ত বা মাস্টার মশাই শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত গ্রন্থে বলেছেন,
'হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা একই পুকুরের জল খাচ্ছে, কিন্তু হিন্দুরা বলছে জল,
মুসলমানরা বলছে পানি,
আর খ্রিষ্টানরা বলছে ওয়াটার।' মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এর
থেকে ভুল
প্রচার আর
কী হতে
পারে ?
প্রকৃতপক্ষে যত
মত তত
পথ বলতে শ্রীরামকৃষ্ণ বলতে চেয়েছেন যে, হিন্দু ধর্মের সাকার ও
নিরাকার অথবা যে সব
শাখা-প্রশাখাগুলো রয়েছে, যেমন- বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব
গানপত্য ইত্যাদি এগুলো সব
সমান। কিন্তু সেই যত
মত তত
পথ এর
বিকৃত ব্যাখ্যা আজ হিন্দু সমাজের ধ্বংসের কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে যা
লিখা আছে
তা সব
শ্রীরামকৃষ্ণের মুখনিসৃত বাণী বলেধরে নেওয়া উচিত নয়। শ্রী মহেন্দ্র গুপ্ত মহাশয় ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তাই
তার পক্ষে রোজ দক্ষিণেশ্বরে যাওয়া সম্ভব ছিলো না। তাই
তিনি শুধু কেবল রবিবার ও
ছুটির দিনগুলোই দক্ষিণেশ্বর যেতেন। সেই সময়
দক্ষিণেশ্বর যাবার যানবাহন বলতে ছিলো কেবল নৌকা। তাই
স্কুলের ছুটির পর দক্ষিণেশ্বর গিয়ে,
সেই দিনই দক্ষিনেশ্বর থেকে কলকাতা ফিরে আসা
ছিলো এক
অসম্ভব কাজ। তাই রবিবার ও ছুটির দিনে দক্ষিণেশ্বর গিয়ে মাস্টার মশাই অন্য দিনগুলোতে ঠাকুর কী কী
বলেছেন,তা অন্যান্য ভক্ত এবং
চাকর বাকরদের কাছে থেকে জানার চেষ্টা করতেন এবং
তা লিখে নিতেন। পরে
বাড়িতে ফিরে তিনি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি দ্বারা শুন্যস্থান পূরণ করে
গল্প খাড়া করতেন। এবং
এভাবেই তিনি হিন্দু মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের এক পুকুর থেকে জল
খাবার গল্প তৈরি করেছেন। তাই স্বামী বিবেকানন্দ 'বেলুড়মঠের সাধুদের নিয়মাবলী' গ্রন্থে বলেছেন, 'যারা বছরের পর বছর
ধরে খুব
কাছ থেকে ঠাকুরকে দেখেঝেন একমাত্র তারাই ঠাকুরের বিষষে কিছু লেখার অধিকারী।'
অথচ সেই
স্বামী বিবেকানন্দ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থা শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন আজ "যত মত তত
পথ" এর মহেন্দ্রগুপ্ত কৃত
ভুল ব্যাখ্যার প্রধান প্রবক্তা হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই
সব বিকৃত ব্যাখ্যা যারাদিয়ে চলেছেন,
তারা ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানেন না
এবং কোরানে কী লেখা আছে তাও
কোনোদিন পড়ে
দেখেন নি।
অথচ কিছু না জেনেই তারা এই সব
ভুল ব্যাখ্যা করে হিন্দু সমাজের সমূহ ক্ষতি করে
চলেছেন।
একটি হিন্দু মেয়ে কোন মুসলমানকে বিয়ে করলে হিন্দু সমাজের পক্ষে তা খুবই ক্ষতিকর। কারণ মুসলমানরা তাকে আগে মুসলমান বানাবে তারপর বিয়ে করবে। তাই কোন হিন্দুমেয়ের মুসলমান বিয়ে করার ফল হল হিন্দু সমাজের একজন সদস্য হ্রাস পাওয়া। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন কোন একজন হিন্দু ধর্মত্যাগ করে মুসলমান হলে শুধু হিন্দুর সংখ্যা যে একজন কমে তা নয়, হিন্দুর শত্রুও একজন বাড়ে। গান্ধীজেও কোন হিন্দুর ধর্মত্যাগ করে মুসলমান হওয়া মেনে নিতে পারেন নি। তাই বড় ছেলে হীরালাল মুসলমান হলে তিনি আর্য সমাজের সাহায্যে তাকে আবার হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনেন। তাই কোন হিন্দু মেয়ে কোন মুসলমানের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেই মেয়েটিকে দোষ দেওয়া যায় না, দোষ দিতে হয় আমাদের ধর্মগুরুদের, যারা ইসলাম সম্পর্কে ভুল কথা বলে তাদের বিভ্রান্ত করেছেন বা করে চলেছেন। যত শীঘ্র তারা এ সব বন্ধ করবেন, হিন্দু মেয়েদের তথা হিন্দু সমাজের পক্ষে ততই মঙ্গল।
তার ওপরে আছে আমাদের সংবাদ মাধ্যম, সিনেমা, নাটক নভেল ইত্যাদি। আমাদের দেশে আজ একটা আজব প্রথা চলছে তা হল, ইসলাম ও মুসলমানদের বিষয়ে কোন সত্য কথা বলা যাবে না। সব সময় ও সব ব্যাপারে মুসলমানদের ভালো দেখাতে হবে। গুজরাটের অহিংস নীতির প্রচারক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীই এই বিচিত্র ভাবধারার প্রবর্তক। এটাও বলতে কোন বাধা নেই যে, গান্ধী প্রবর্তিত এই ভাবধারাকে অনুসরণ করেই আমাদের ধর্মগুরুরা ইসলাম সম্পর্কে ভালোভালো কথা লিখে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন। এই ধারাকে অনুসরণ করে আমাদের নাটক নভেল ও সিনেমা ইসলাম তথা মুসলমানদের মহান বলে প্রচার করে চলেছে। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বামফ্রন্ট ও বর্তমান তৃণমূল সরকার প্রচার করে চলেছে যে, ইসলাম একটি মহান ও সমাজতান্ত্রিক ধর্ম। কারণ ইসলামে কোন জাতপাতের বিভেদ নেই ও আমীর ও গরীব মুসলমান একই মসজিদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে। কিন্তু ইসলামেরএই সৌভার্তৃত্ব যে মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, অথবা ইসলাম যে আর সমস্ত মতবাদকে সমাপ্ত করে সমস্ত পৃথিবীকে একটি ইসলামী সাম্রাজ্যে পরিণত করতে চায়, সেব্যাপারে আমাদের তৃণমূল এবং কমিউনিস্ট নেতারা একেবারে নিশ্চুপ।
অনেক হিন্দু বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, বাংলাভাষী মুসলমান ও বাঙালী হিন্দুর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কারণ বাংলা ভাষায় কথা বললেও ভারতের নদ নদী জল বায়ু ও মাটি তাদের কাছে পবিত্র নয়। তাদের কাছে পবিত্র হল আরবের মরুভূমির বালি ও মক্কার জমজমের কূপের পানি। তারা ভারতে বসবাস করে বটে কিন্তু ভারতকে তারা মা বলে না। তাই তারা বন্দে মাতরম গায় না।
তাই কোন হিন্দু মেয়ে যখন মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে, তখন তার পক্ষে মুসলমান সমাজের সঙ্গে মানিয়ে চলা শুধু কষ্টকর নয়, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মুসলমান সমাজের গোমাংস ভক্ষণ, বোরখা দ্বারা সর্বক্ষণ দেহকে আবৃতকরণ, এবং সদা সর্বদা তিন তালাকের মাধ্যমে
ঘর থেকে বিতাড়িত হ্ওয়ার আশঙ্কার মাধ্যমে দিন কাটানো তার পক্ষে অসম্ভা হয়ে
পড়ে। এ সবের পরেও আছে স্বামীর অন্য স্ত্রী গ্রহণের মাধ্যমে সতীনের সাথে ঘর করার
করুন অধ্যায়, কারণ যে কোনো মুসলমানের এক সাথে চার স্ত্রী রাখার অধিকার আছে।প্রিয়াঙ্কা টোডির পক্ষে কতটা অসুবিধা হতো তা
সহজেই অনুমান করা চলে। টোডিরা নিরামিষাশী। সেই নিরামিষাশী প্রিয়াঙ্কাকে
পেঁয়াজ রসুন দিয়ে রান্না করা গোমাংস খেতে দিলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো
তা বিশেষভাবে বলার প্রয়োজন আছে বলে
মনে হয়
না।
জওহরলালের মেয়ে ইন্দিরা ফিরোজ খাঁকে বিয়ে করার পণ
করলে গান্ধীজির পরামর্শে তাকে গোপনে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয় এবং
সেখানকার একটা মসজিদে তাকে মুসলমান বানানো হয়। তারপর তিনি ফিরোজ খাঁর সঙ্গে ঘর করতে থাকেন। কিন্তু রাজীবের জন্ম হওয়ার পরেই ফিরোজ অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করতে শুরু করে এবং
শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করে ঘরে
নিয়ে আসে। এতে ফিরোজ খাঁর কোনো অন্যায় হয়
নি। কারণ, মুসলমান হওয়ার ফলে
তার পক্ষে ৪ জন
স্ত্রী রাখার বিধান আছে। কিন্তু ইন্দিরা পক্ষে সতীনের ঘর করা
সম্ভব হলো
না। তিনি কাঁদতে কাঁদতে পিতৃগৃহেই ফিরে এলেন। অনেকেরই জানা নেই
যে,
হিন্দুদেরকে বোকা বানানোর জন্য গান্ধী ফিরোজ খাঁকে দত্তক নিয়ে তার
পদবী খাঁ
এর বদলে গান্ধী লেখা চালু করেন। সেই হিসেবে মুসলমানী
ইন্দিরা এবং
তার দুই
ছেলে গান্ধী পদবী লিখতে শুরু করে। কিন্তু পুরীর মন্দিরের পূজারীরা ইন্দিরা এবং
তার দুই
ছেলেকে
কোনো দিন
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে দেন নি।
ইন্দিরার মতো
শতকরা ৯৫
জন হিন্দু মেয়ের পক্ষেই মুসলমান স্বামীর ঘর করা
সম্ভব হয়ে
ওঠে না।
তাই মুসলমান স্বামীর ঘর
ত্যাগ করে
পিতৃগৃহে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকে না। এ
প্রসঙ্গে পাঠক শ্রীমতি সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কাবুলিওয়ালার বাঙ্গালি বউ" স্মরণ করতে পারেন।
মুসলমান সমাজের আরেকটি প্রথার কথা অনেকেরই জানা নেই। কোনো স্বামী যদি রাগের বশে
বা মাতাল অবস্থায় বা
নিজের
অজান্তে ঘুমের ঘোরে স্ত্রীকে তিনবার তালাক বলে দেয়
তাহলে কোরানের বিধান (২/২৩০)
অনুসারে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেই অবৈধ স্ত্রীকে স্বামী যদি ফিরে পেতে চায়, তাহলে সেই
স্ত্রীকে বৈধ
করে নিতে হয়। এই
জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে তার
বিয়ে দিতে হয় এবং
সেই নতুন স্বামী তালাক দিলে পুরোনো স্বামী তাকে আবার স্ত্রী রূপে ফিরে পেতে পারে। এখানে আরও
একটু লক্ষ্য করার বিষয় হলো,
দ্বিতীয় স্বামীর সাথে শুধু বিয়ে দিলেই হবে না, অন্তত একটি রাত
তাদের একসাথে কটাতেই হবে।এই দ্বিতীয় স্বামীটিকে বলা
হয় মুস্তাহেল।
মুসলমান সমাজের সাধারণ নিয়ম হলো,
একজন অচেনা অজানা কদাকার লোককে টাকার বদলে মুস্তাহেল নিয়োগ করা
হয় এবং
এক রাত
কাটাবার পর
সে ঐ
রমনীকে চুক্তিমতো তালাক দিয়ে দেয় এবং
আগের স্বামী তখন তাকে আবার নিকা করে নেয়। কিন্তু সেই
মুস্তাহেল স্বামী যদি সেই
মহিলাকে তালাক না দিয়ে নিজের ঘরে
নিয়ে চলে
যায়,
তাহলে কারো পক্ষে কিছুই আর করার থাকে না।
মুসলমান সমাজে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে
থাকে। তা
হলো,
কোনো আত্মীয় বা বন্ধুকে মুস্তাহেল নিয়োগ করা হলো, কিন্তু পরদিন সকালে সে তাকে তালাক না
দিয়ে ৩য়
বা ৪র্থ স্ত্রী হিসেবে ঘরে নিয়ে গিয়ে তুললো। কোনো হিন্দু মেয়ের পক্ষে নারীত্বের এই
চরম অপমান সহ্য করা
সম্ভব না
হওয়ারই কথা।
মুসলমান সমাজে একমাত্র গর্ভারিণী মা এবং
সেই মায়ের মেয়ে ছাড়া আর সকল
রমনীকেই বিয়ে করা চলে। এমনকি বাবা মারা গেলে বিমাতাকেও বিয়ে করা চলে। এই কারণে মুসলমান সমাজের এমন কোনো গৃহবধূ নেই
যে কোনো নিকট আত্মীয়ের দ্বারা ধর্ষিতা হয় না।
প্রায় সব
ক্ষেত্রেই এই
যৌন অত্যচার মুসলমান গৃহবধূদের মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। কারণ, ইসলামি আইন মতে
কোনো মহিলা কোনো পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ আনলে তার সমর্থনে তাকে ৪
জন পুরুষ সাক্ষী আনতে হবে,
যা কখনোই সম্ভব নয়।
অন্যথায় সেই
মহিলা ব্যভিচারের দোষে দোষী সাব্যস্ত হবে, যার
শাস্তি হলো
পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা। তাই যে
কয়েকটা ঘটনা খবরের শিরোনামে আসে তা
হিম শৈলের অগ্রভাগ মাত্র। বিশেষ করে
শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষিতা হবার ঘটনা ই
বেশি ঘটে
এবং মুসলমান বিচারকেরা এতে
শ্বশুরের কোনো দোষ দেখে না,
কারন তাহলে নবী মুহম্মদকেও অপরাধী সাব্যস্ত করতে হয়।
তাই এটা
কোনো অত্যুক্তি নয় যে,
হিন্দু ঘরের মেয়ের,
যারা ইসলামের অ আ
ক খ
জানে না,
একটা সাময়িক মোহের বশীভূত হয়ে তারা মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে
বটে,
কিন্তু তা
কখনো সুখের হয় না।
সব থেকে বড় কথা
হলো,
ইসলামে নারীর কোনো মান
সম্মান নেই। আরবের অসভ্য পশুপালক সমাজে উদ্ভূত ইসলামি শাস্ত্র মতে
নারী শুধু একটি ভোগের সামগ্রী ও
সন্তান উৎপাদন করার যন্ত্র মাত্র। তাই
সামান্য কারণে মারধোর করা
যায়,
খাবার ও
জল না
দিয়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঘরে
আটকে রাখা যায়,
সর্বোপরি তিন
বার তালাক বা তালাক তালাক তালাক বলে গৃহপালিত পশুর মতোই ঘর থেকে বিতাড়িত করা
যায়। কোরান বলছে,
স্ত্রী হলো
শস্য ক্ষেত্র, তাই
তাতে যখন
ইচ্ছা,
যেভাবে ইচ্ছা গমন করা
চলে। তাই
বলা চলে
যে, একটি অসভ্য দেশের অসভ্য ধর্মের দ্বারা চালিত একটি অসভ্য সমাজে সুসভ্য হিন্দু সমাজের মেয়েদের পক্ষে মানিয়ে চলা এক
অসম্ভব কাজ
। কাজেই এ
ব্যাপারে হিন্দু মেয়েদের বার
বার সতর্ক করা প্রয়োজন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন