সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গীতা কবেকার ? গীতাটা -- মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত অংশ , এটা জানো তো ?



"গীতা কবেকার ? গীতাটা -- মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত অংশ , এটা জানো তো ?"


ঠিক এই প্রশ্নসহ শ্রীকৃষ্ণ ও হিন্দুধর্ম সম্পর্কে অসংখ্য আপত্তিকর কথাবার্তা বলেছিলো Nimaipada Biswas নামের এক উন্মাদ আমার ফেসবুকের এক পোস্টে, তার কমেন্টটা অনেক বড়, অনেক প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ তাতে, সব প্রশ্নের উত্তর একবারে দিলে তা ছোটোখাটে একটা মহাভারত হয়ে যাবে। তাই এই পোস্টে শুধু উপরের প্রশ্ন এবং আমার সম্পর্কে তার যে মূল্যায়ণ তার জবাব দিচ্ছি। পরবর্তী পোস্টগুলোতে তার প্রত্যেকটা প্রশ্নের জবাব পয়েন্ট টু পয়েন্ট দেবো। তার পূর্ণ কমেন্টটি পাবেন এই পোস্টের শেষে।

প্রথমেই সে আমার সম্পর্কে লিখেছে

তুমি নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করতে গিয়ে তুমি যা লিখেছ --- তাতে তোমার লেখাপড়ার দৌড় বোঝা গেল !!!! আমি যা লিখছি , পড়াশোনা করলে , উত্তর দাও ------"

এই কথার জবাবে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু Phani Roy, যখন তাকে বললো, মিসটার Nimaipada Biswas , কৃষ্ণদা জোদি নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করতে চায়, তাহলে আপনি কি নিজেকে পন্ডিত প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, খারাপ পাবেন না ৷ আপনিতো অনেক বই পরেন বলেছেন তাই আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন ছিল , সব ধর্মের মালিক কে ? বুঝে সুঝে বলবেন না পারলে আমাকে বলবেন ৷

এই কথার জবাব কী দিয়েছিলো এই উন্মাদ, দেখুন,

আরে মানবধর্মের ওপর কোনো ধর্ম হয় ? তোমার পড়াশোনা কদ্দুর ?? আমি পন্ডিত কি না জানিনা । তবে ডক্টরেট করে , বর্তমানে পোষ্ট ডক্টরেট করছি ---- তাও হিন্দুধর্মের ওপর !! তোমার পড়াশোনা কদ্দুর ? কতটা পড়াশোনা করে তোমার উপদেশ নিতে বল ? স্পর্ধারও একটা সীমা থাকা উচিৎ। কৃষ্ণ ভুলভাল বলবে, ছাগলগুলো মেনে নিলেও আমি নিতে পারবো না । ক্ষমতা থাকলে কৃষ্ণ জবাব দিক । তুমি কতটা বোঝো ? আমার লেখাটার শব্দ ধরেধরে পড় । অবশ্য তোমার মাথায় যদি ধরে !!!!

এই লোক নিজেকে কী মনে করে ? ৪ বছর ধরে আমি ফেসবুকে লিখছি, আমার ফ্রেণ্ড ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এছাড়াও আমার প্রতিটা পোস্ট শত শত শেয়ার হয়, অনেকে কপি করে পোস্ট করে, এভাবে আমার লেখা কতজনের কাছে পৌঁছে সেটা সত্যিই আমার অজানা। কিন্তু আমার কোনো লেখায় আমি কখনো নিজেকে তুলে ধরে বলি নি, আমি এই, আমি ওই, আমার পড়াশুনা এত দূর। ডেল কার্নেগীর এক বইয়ে পড়েছিলাম কোনো এক মনীষী বলেছেন, “তুমি নিজেকে যা ভাবো, আসলে তুমি তা নও, লোকে তোমার সম্পর্কে যা ভাবে আসলে তুমি তাই।

লোকে আমার সম্পর্কে যা ভাবে, তার প্রমান আমার প্রতিটা পোস্টের সাথেই কমেন্ট আকারে আছে, কমেন্টগুলো পড়ে দেখে নেবেন, সেই সাথে এটাও দেখে নেবেন আমার এই পোস্টে কমেন্ট করার পর, লোকে আপনার সম্পর্কে কী ভাবছে ? বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের সর্বোচ্চ ডিগ্রী আমারও আছে, কিন্তু তা নিয়ে আমার কোনো গর্ব নেই; কারণ, আমার মতো ডিগ্রীধারী লোক দুই বাংলা মিলিয়ে অন্তত কয়েক লক্ষ আছে। কিন্তু এই লোক ডক্টরেট করে এখন পোস্ট ডক্টরেট করছে বলে দেখি উনার গর্ব ও অহংকারের সীমা নেই। স্বামী বিবেকানন্দ সিম্পল বি.এ পাস। তার সময়ে হয়তো আরো অনেক বি.এ পাস ছিলো এখনও আছে; কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ কিন্তু একজনই। তেমনি বাংলা ফেসবুক ও হিন্দুত্ববাদ সম্পর্কিত লেখার জগতে ও Krishna Kumar Dasও একজনই, Only One এত বড় গর্ব প্রকাশ করার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিলো না, কিন্তু কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয় বলেই আজ এটা নিজ মুখে বললাম, যেটা অনেক আগে থেকেই আমার বন্ধুরা আমার পোস্টের কমেন্ট করে বলে আসছেন; বলতে পারেন আপনাদের কথাটা্ই আমি আজ বললাম, জাস্ট জবাব দেওয়ার স্বার্থে।

রাস্তা দিয়ে যখন কোনো হাতি হেঁটে যায়, তখন কিছু লোক সেই বড় ঘটনার সাক্ষী হওয়ার জন্য যেমন কৌতূহলবশতই তার পিছু পিছু হাটে, তেমনি খেয়াল করে দেখবেন কিছু কুকুরও হাতির সাইজ দেখে ঈর্ষায় ভুগে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। যদিও নিজেকে হাতির সাথে তুলনা করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিলো না, তবু এই লোকের পড়াশুনা করার গর্ব আর হম্বি-তম্বি দেখে আমার এই কথাটাই মনে পড়ে গেলো।

আমার কোনো পোস্টে করা কারো কমেন্টের বিপরীতে কমেন্ট করে আমি কখনো ঝগড়া বাঁধাই না। যদি মনে করি সেই কমেন্টের জবাবের পেছনে সময় ব্যয় করলে আরো কিছু লোক কিছু জানতে পারবে, তখন সেই কমেন্টকে বেজ করে একটি পোস্ট ই লিখে ফেলি। যেমন- যে পোস্টের কমেন্টের বিপরীতে এই পোস্ট লিখছি, সেই পোস্টও ছিলো একটি কমেন্টের জবাব। যেসব বন্ধু আমার পোস্টে কমেন্ট করে আমাকে আরো লিখতে উৎসাহিত করেন, তারা বিষয়টি অন্যভাবে নেবেন না, এই লোককে তার অবস্থান বোঝানোর জন্যই নিচের এই কথা বলছি- পোস্ট লেখক হিসেবে আমি যদি সাগর হই, যারা কমেন্ট করে তারা নদী, আপনি সেই ৭০/৮০ নদীর একটি নদী, কিন্তু ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ। আপনার বিদ্যার যদি এতই জোর থাকতো আর যদি তার মাধ্যমে মানুষের ভালো করার কথা চিন্তা করতেন তাহলে নিজের পেজ এ আমার মতো পোস্ট লিখতেন, আর অন্যরা সেখানে গিয়ে কমেন্ট করতো। নিজের টাইম লাইনে তো একটি লাইনও লিখেন নি মানব জাতির উদ্দেশ্যে, কিন্তু আমি হিন্দুসমাজকে ভালোবাসি বলে গত ৪ বছরে যা লিখেছি, তা যদি প্রতিদিন ১ ঘন্টা করেও পড়েন এক বছরে শেষ করতে পারবেন না। আপনি আপনার পেজ ছেড়ে আমার পেজে অর্থাৎ আমার বাড়িতে এসে আমার শান্তি নষ্ট করার জন্য ঘেউ ঘেউ করছেন, আপনি বুঝতে পারছেন, আমার ও আপনার পার্থক্য ?

Phani Roy কে জবাব দিতে গিয়ে এই লোক আরো বলেছে, “তোমার পড়াশোনা কদ্দুর ? কতটা পড়াশোনা করে তোমার উপদেশ নিতে বল ? স্পর্ধারও একটা সীমা থাকা উচিৎ।

এই লোক তো ডক্টরেট করে নিজেকে মহা হনু ভাবছে। কিছু জানতে চেয়ে উনাকে প্রশ্ন করাও এখন উনার কাছে অপরাধের সামিল। অথচ যে পোস্টের কমেন্টকে বেজ করে আজ এই বিতর্ক এবং যার কারণে আমাকে আবারও পোস্ট লিখতে হচ্ছে, সেই পোস্ট আমি তিন দিন ধরে লিখেছিলাম শুধু একজনের কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য। Phani Roy জাস্ট শুধু তাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে যে, “সব ধর্মের মালিক কে ? বুঝে সুঝে বলবেন না পারলে আমাকে বলবেন।


Phani Roy শুধু প্রশ্ন করে এই কথাটা বলেছে যে, বুঝে সুঝে বলবেন না পারলে আমাকে বলবেন, এতে স্পর্ধার কী হলো আর তার সীমারই বা কী হলো ? Phani Roy শুধু এটা বোঝাতে চেয়েছে যে, আপনার জানা থাকলে সঠিক কথাটা বলবেন, আর জানা না থাকলে সেটাও বলবেন। ইসলামের নবী মুহম্মদকে যেমন কোনো প্রশ্ন করা যেতো না, এ তো দেখি সেই লেভেলে নিজেকে ভাবতে শুরু করেছে।

আমি যা লিখেছি, তাতে যেমন আমার বিদ্যার দৌড় স্পষ্ট, তেমনি আপনি যা লিখেছেন তাতেও কিন্তু আপনার বিদ্যার দৌড় ষ্পষ্ট এবং আপনার সেই বিদ্যার দৌড় কতটা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন, আমার জবাবের সবগুলো পোস্টটা পড়তে থাকেন। এতক্ষণ যা বলছি সেটা কিন্তু জাস্ট সিনেমার ট্রেলার, পিকচার কিন্তু এখনও পুরোটা বাকি।

Phani Roy কে জবাব দিতে গিয়ে সে শেষে লিখেছে,

কৃষ্ণ ভুলভাল বলবে, ছাগলগুলো মেনে নিলেও আমি নিতে পারবো না । ক্ষমতা থাকলে , কৃষ্ণ জবাব দিক । তুমি কতটা বোঝো ? আমার লেখাটার শব্দ ধরেধরে পড় । অবশ্য তোমার মাথায় যদি ধরে !!!!

এই লোক দেখছি নিজের পড়াশুনার দৌড় দেখাতে গিয়ে রাবনের অহংকারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই লোকের বিচারে, যারা আমার কথা মেনে নিচ্ছে বা বিশ্বাস করছে, তারা সবাই ছাগল। আবার আমাকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে ক্ষমতা থাকলে কৃষ্ণ জবাব দিক। আপনি কার পাল্লায় পড়েছেন আপনি জানেন না, আমার বয়স আপনার অর্ধেক, এই জীবনে কেউ আমার সাথে যুক্তি তর্কে যে জয়ী হতে পারে নি সেটা বললে তো আপনার বিশ্বাস হবে না, তাই আপনার পরিণতি আপনি নিজেই দেখবেন; আমি বড় বড় বুলিতে নয়, কাজে বিশ্বাসী; ধৈর্য ধরুন আর পোস্টগুলো পড়তে থাকুন, কে কতটা বোঝে আর কার মাথায় কতটা ধরে সময়ই সেটা বলবে। আপনি সবাইকে ছাগল বলেছেন, কিন্তু আমি আপনাকে ভেড়া বলে ভেড়াকেও অপমান করতে চাই না।

তার প্রথম প্র্শ্ন,

১) গীতা কবেকার ? গীতাটা -- মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত অংশ , এটা জানো তো ?

গীতা কবেকার ? এটা দ্বারা তিনি গীতার অর্বাচীনত্ব বা কম সময়ের না প্রাচীনত্ব, কোনটাকে ইঙ্গিত করেছেন, সেটাই তো পরিষ্কার হচ্ছে না। তিনি সম্ভবত, গীতা তো এই সেদিনের বই, এরকম কিছু একটা বলতে চেয়েছেন। তাহলে দেখা যাক গীতার আসলে বয়স কত।

গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ১ নং শ্লোকে বলা আছে,

ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম।।
বিবস্বান্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষবাকবেহব্রবীৎ।।


এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, আমি এই জ্ঞান কল্পের আরম্ভে সূর্যদেব বিবস্বানকে বলেছিলাম। সূর্য তা মানবজাতির জনক মনুকে বলেছিলেন এবং মনু ইক্ষবাকুকে বলেছিলো।

এরপর ২ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন তার বাংলা হলো-
এই ভাবে পরম্পরার মাধ্যমে এই পরম বিজ্ঞান রাজর্ষিগণ এই জ্ঞান লাভ করেছিলেন। কিন্তু কালের প্রবাহে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিলো এবং এই সেই জ্ঞান নষ্ট প্রায় হয়েছে।

এরপর ৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

সেই সনাতন যোগ আজ আমি তোমাকে বললাম।

১ নং শ্লোকের ব্যাখ্যায় কল্পের আরম্ভে বলে একটা কথা আছে। হিন্দু কাল গণনায় কল্পের আরম্ভ মানে হলো বিশ্ব সৃষ্টির শুরু। এর থেকে প্রমান হচ্ছে যে, গীতার জ্ঞান বিশ্ব সৃষ্টির শুরু থেকেই আছে। কিন্তু মাঝখানে এই জ্ঞান কিছুটা নষ্ট হয়ে এর বিশুদ্ধতা হারিয়ে ফেলে এবং এ কারণেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এই জ্ঞান আবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দেন। সুতরাং গীতার জ্ঞান যে বিশ্বের শুরু থেকেই আছে, সেটা কিন্তু এখানে স্পষ্ট। এ তো গেলো গীতা সম্পর্কে গীতার নিজের সাক্ষ্য। কিন্তু বৈদিক সাহিত্যের ইতিহাস এ ব্যাপারে কী বলছে দেখুন-

বর্তমানে এটিকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ণরচিত প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত-এর একটি অংশ হিসেবে পাওয়া গেলেও মহাভারতের পূর্ব থেকেই গীতা একটি স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থ তথা একটি পৃথক উপনিষদ হিসেবে অস্তিত্বশীল ছিলো ।

মহাভারতের পূর্বে এই গীতার নাম ছিলো গীতোপনিষদ, তো মহাভারতের পূর্বে তো কৃষ্ণই ছিলো না, তাহলে গীতা এলো কোথা থেকে। এখন গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ১ নং শ্লোকের কথা স্মরণ করুন যেখানে শ্রীকৃষ্ণ বলছে, এই জ্ঞান সৃষ্টির শুরুতেই আমি সূর্যদেবকে দিয়েছিলাম, মাঝখানে পরম্পরা হারিয়ে এটা নষ্ট প্রায় হয়েছে। এই নষ্ট প্রায় গীতা ই ছিলো গীতোপনিষদ। কিন্তু ব্যাসদেব মহাভারত রচনাকালে যখন নতুন করে গীতার বাণী তার মধ্যে সংযোজন করতে পারেন, তখন সেই পুরোনো গীতোপনিষদের আর প্রয়োজন না থাকায় এমনি ই তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

গীতা সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় বলা আছে, এটি খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ থেকে ৫০০ অব্দের মধ্যে রচনা। এই হিসেবে গীতার বয়য়স দাঁড়ায় ২৪০০/২৫০০ বছর, কিন্তু এটা গীতার জ্ঞান লিখিত রূপ পাওয়ার বয়স। হিন্দু ধর্মের সব প্রাচীন গ্রন্থের মতো গীতাও গুরু শিষ্য পরম্পরায় হাজার হাজার বছর পূর্ব থেকে শ্রুত হয়ে আসছে। এ কারণে গীতার প্রাচীন দুটো নাম হলো শ্রুতকাব্য ও স্মৃতিকাব্য। শ্রুত বলতে বোঝায় শুনে শুনে মুখস্থ করা আর স্মৃতি বলতে বোঝায় মুখস্থ থেকে স্মরণ করে বলা। সুতরাং উইকিপিডিয়ায় গীতার বয়স ২৪০০/২৫০০ বছর দেখে এটা ভাববেন না যে গীতা ঐ সময়ে কেউ লিখে বই আকারে ছাপিয়ে প্রকাশ করেছিলো, যেমন ভেবে বসে আছে আমাদের এই ডক্টরেট পণ্ডিত। কারণ গীতা কবেকার ?” বলতে তিনি এই বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করেছেন। সম্ভবত কোরান শরীফের চেয়ে গীতার বয়স কম হলে তিনি আরো খুশি হতেন।


গীতা সম্পর্কে সে আরও খোঁচা দিয়ে আমাকে বলেছে, “গীতাটা -- মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত অংশ , এটা জানো তো ?”

খেয়াল করবেন, তিনি বলেছেন, “গীতাটা -- মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত অংশ”- এর মানে হচ্ছে মহাভারত থেকে গীতাকে প্রক্ষেপ বা নিক্ষেপ বা ছুঁড়ে মারা হয়েছে, এক কথায় সংকলন করে নতুন বই বানানো হয়েছে। ঠিক ই তো আছে, গীতা যে মহাভারতেরই একটা অংশ এবং সেই অংশকে আদি শংকরাচার্যনামের এক ক্ষণজন্মা ব্যক্তি আলাদা গ্রন্থ হিসেবে তৈরি এবং প্রচার করেন ৭০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, এটা তো অনেকেই জানে। তিনি সম্ভবত বলতে চেয়েছেন, “গীতাটা- মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত”, কারণ হিন্দু বিদ্বেষী আনন্দবাজার মিডিয়া এমনটাই প্রচার করে থাকে। Nimaipada Biswas যদি এটাও বলতে চেয়ে থাকেন, “গীতা মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত”, মানে মহাভারতের মধ্যে গীতাকে কেউ পরে ঢুকিয়ে দিয়েছে; তাহলেও তো ঠিকই আছে, বেদব্যাস তো মহাভারতের মধ্যে গীতাকে ঢুকিয়েই দিয়েছেন বা প্রক্ষেপই করেছেন। তার খোঁচা তো দেখি আমার গায় কোনোভাবেই লাগাতে পারছি না। কিন্তু খোঁচা তো উনি দিয়েছেন, লেখার ভুলের কারণে হয়তো সেটা এখন আর আমার গায়ে লাগছে না। আসলে ডক্টরেট হলেই যে বাংলা শুদ্ধভাবে লেখা যায় না বা যা বলতে চায় সেটা যে ঠিক মতো বলতে পারে না, তার এই খোঁচার বাণীটি তার একটি প্রমাণ। আসলে তিনি বলতে চেয়েছেন, গীতা ঐ ২৪০০/২৫০০ বছর আগেই প্রথম লেখা হয় এবং তারপর কেউ তা মহাভারতের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

এটা সত্য হলে গীতার সেই লেখকের নাম তার কাছে জানতে চাই, কে ঢোকালো তার নামও জানতে চাই, হিন্দু ধর্মের কয়েকশত গ্রন্থ থাকতে কেনোই বা শুধু গীতাকে মহাভারতের মধ্যে ঢোকানোর প্রয়োজন হলো সেই কারণও জানতে চাই, আর এটা করে কার কী লাভ হয়েছে বা মূলত উদ্দেশ্য কী ছিলো সেটাও জানতে চাই। আমাদের ডক্টরেট সাহেবের থিসিসের বিষয়বস্তু ছিলো হিন্দু ধর্ম। সুতরাং হিন্দু ধর্মের প্রধান পুস্তক গীতা সম্পর্কে তার কাছে এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। ডক্টরেট সাহেব বলেছেন তার লেখার প্রতিটা শব্দ ধরে ধরে পড়তে, আপনার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি শুধু শব্দ নয় বর্ণ ধরে ধরে পড়ছি আর তার ব্যাখ্যা দিচ্ছি। এই অনুচ্ছেদে আমার মূল ফোকাস ছিলো গীতা মহাভারতের প্রক্ষিপ্তনা গীতা মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত”, খেয়াল করবেন দুটি বাক্যের পার্থক্য কিন্তু শুধু একটা তে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
------------------------------------------------------

নিচে দেখতে পারেন নিমাই পদ বিশ্বাসের পুরো কমেন্টটি,


কৃষ্ণ , নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করতে গিয়ে তুমি যা লিখেছ --- তাতে তোমার লেখাপড়ার দৌড় বোঝা গেল !!!!
আমি যা লিখছি , পড়াশোনা করলে , উত্তর দাও -------


চরিত্রহীন কৃষ্ণ ( মেয়েদের/ মামীকে নিয়ে যৌন কেলেংকারী -- যেটা " শ্রীকৃষ্ণকীর্তন " কাব্যে প্রমাণিত) যা বলেছে , সেটা মেনে নিতে হবে ??
" কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম্ " কে জানালো ,
কিভাবে সে জানতে পারলো ?
ভগবানকে জন্মের পরে জেল থেকে পালাতে হল কেন ?
বৃন্দাবনে মেয়েদের যখন সামলাতে পারলো না , তখন ১০০০ মাইল দূর দ্বারকায় পালাতে হল কেনো ?
সামান্য এক ব্যাধএর তীরে , সেপটিক হয়ে মারা যায় যে লোক --- সে ভগবান ?


২) ব্রাহ্মনের ছেলে যদি ব্রহ্মত্ব পেতে পারে --- তাহলে ডাক্তারের অশিক্ষিত ছেলে ডাক্তার হতে আপত্তি কোথায় ?
তুমি নিশ্চয়ই ওর কাছে অসুস্থ হলে দেখাতে যাবে !!!


৩) গীতায় তোমার চরিত্রহীন কৃষ্ণ ( নামটা উচ্চারণ করতে ঘৃণা হচ্ছে)
বলেছে ---- ব্রাহ্মণ হও ।
কেনো , মানুষ হও বলতে পারেনি ??
ব্রাহ্মণদের মল সুস্বাদু কি ???


৪) তুমি পরজন্মে বিশ্বাস কর ----
আচ্ছা , তোমার মৃত মা-বাবা- আত্মীয় পরিজন তোমায় মাঝেমাঝেই খোঁজ খবর নেন তো ??
তুমিও নিশ্চয়ই জানো যে, ওরা স্বর্গে বা নরকে আছে ? কি , ভুল বল্লাম ??


৫) তুমি বলেছ , হিন্দুইজম হয়না !
ইসলামইজম শব্দটা শুনেছ কি ??


৬) তোমার পড়া কোন ইতিহাস বা নৃবিজ্ঞান বইতে লেখা আছে যে , আধুনিক মানুষ ২০ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে এসেছে ??
আধুনিক মানুষ " হোমো স্যাপিয়েন্স " জন্মেছে , মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার বছর আগে !!
তুমি কি সবাইকে ছাগল ভাবো ??
শচীন্দ্রনাথ বসুর রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্ত বই --- " প্রাগিতিহাসের মানুষ " বইটা পড়ে দেখো !!
( জানিনা, বইটা পড়ার যোগ্যতা তোমার আছে কি না)


৭) বেদ বইটা পড়া তো দূরে থাক্ , চোখে দেখেছ কি ?
ঋক্ বেদের লাইন বাই লাইন বলতে পারি আমি !!
তো বইটা যে ৮/১০ হাজার বছর আগেকার ----- তোমায় কে বলল ??
তুমি ভারতবর্ষের এই
বরেণ্য ইতিহাসবিদদের একটাও বই পড়েছো ---??
অ) রোমিলা থাপার
আ) রামশরণ শর্মা
ই) ইরফান হাবিব
ঈ) ডি এন ঝা
উ) ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
ঊ) মহাশ্বেতা দেবী
ঋ) সুনীল চট্টোপাধ্যায়
৯) ডঃ অরুণিমা রায়চৌধুরী
এ)বিবেকানন্দ ঝা
ঐ) ডঃ অতুল সুর
ও) ডি ডি কৌশাম্বি
ঔ) ডঃ এ কে শাহনওয়াজ


আপাতত, এই কজনের বই আমার সংগ্রহে আছে এবং বারবার পড়ি ।
তুমি কি এদের নাম শুনেছ ??


এঁরা বলছেন ----
বেদ আর্যদের সৃষ্টি ।
আর আর্যরা ভারতে এসেছে খৃঃপূঃ ১৭৫০ বছর আগে !
তার ১০০০ বছর আগে সিন্ধু সভ্যতা।
তার আগে কুল্লি সভ্যতা
তার আগে ঝোব সংস্কৃতি
তার আগে আমৃনাল সভ্যতা
৮/১০ হাজার বছর আগে -- মেহেরগড় সভ্যতা ।।।
তাহলে বেদ কোথায় দাঁড়াল ??
বেদ মাত্র ৪০০০ বছরের পুরোনো।


৮) সনাতন ধর্ম যে হিন্দু ধর্ম --
তোমায় কে বলল ??
আজীবকদের নাম শুনেছো ?
আজীবক, বৌদ্ধ , জৈন প্রভৃতি ধর্ম হিন্দু ধর্ম থেকে জন্ম নেয়নি ।
ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিবাদী ধর্ম এগুলো ।


৯) ভালোকরে শোনো , বেদে মূর্তি পূজা নেই । পুতুল পুজোগুলো গুপ্ত যুগের ।


১০) মাথায় টুপি পরা নিয়ে ব্যাঙ্গ করেছ ।
তাহলে --- বিবেকানন্দ, নেতাজী এদেরকে কি বলবে ??


১১) তুমি তো ইতিহাস পড়োনি ---
তাই জানও না যে , সিন্ধু সভ্যতা ৮ হাজার বছর আগেকার নয় ।
এর উত্তর আগে দিয়েছি ।।


শেষে বলি , হিন্দু বলে গলা ফাটাবার আগে নিজেকে " মানুষ " বল !!


আর পড়াশোনা করে ফেসবুকে এসো ।
সবাইকে ছাগল ভেবোনা ।।
Nimaipada Biswas হ্যাঁ , আর একটা কথা জানাতে ভুলে গেছি ----
তুমি মুসলিমদের ব্যাঙ্গ করে বলেছ ---
ছুন্নত করে মুসলমান হতে হয় ।
ঠিক বলেছো ---।
তা তুমি কি জাননা যে, তোমাদের ব্রাহ্মণদেরও পৈতে পরে বামুন হতে হয় ?? কি ভুল বল্লাম ??







মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব ফটো হিসেবে এই প্রবন্ধের সাথে যেটা যুক্ত করেছি , তার জবাব দেওয়া ই আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য। তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক: ফটোপোস্টের শুরুতেই লিখা হয়েছে , “ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই , কোন প্রতিমূর্তি নেই , কোন প্রতিকৃতি নেই , কোন রূপক নেই , কোন ফটোগ্রাফ নেই , তাঁর কোন ভাস্কর্য নেই। ” এর রেফারেন্স হিসেবে লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ , অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ এবং যযুর্বেদ অধ্যায় ৩২ , অনুচ্ছেদ ১৯। ” এবার দেখা যাক , সত্যিই সেখানে কী লিখা আছে এবং তার প্রকৃত অনুবাদটা কী ? রেফারেন্স হিসেবে প্রথম বইয়ের নাম লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ ”, কিন্তু এর নাম প্রকৃতপক্ষে “ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ”, লিখেছে তো কোনো এক মুসলমান , তার কাছ থেকে আপনি আর কত শুদ্ধ বানান আশা করতে পারেন ? রেফারেন্সের বাকি অংশে লিখা হয়েছে- “ অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ ”, অধ্যায় ৪ ঠিক থাকলেও এই উপনিষদে অনুচ্ছেদ বলে কিছু হয় না , এটি হবে আসলে শ্লোক নং ১৯। শুধু এই রেফারেন্সেই নয় , প্রতিটি রেফারেন্সেই দেখবেন কিছু না কিছ

হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় ?

হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? এবং ইসলাম নাকি সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম ! উপরের এই দুটো প্রসঙ্গসহ মুসলমানদের করা আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে জানতে চেয়ে ছিলো Pritam Das নামের আমার এক ফেসবুক বন্ধু। শুরুতেই দেখে নিন সেই প্রসঙ্গগুলো- মুসলমানরা বলে যে , একটা হাতির মুখ মানুষের শরীরে কি করে বসানো যায় ? কী যুক্তি আছে এটার পেছনে ? আর সেইটাকে তোমরা হিন্দুরা আবার পূজাও করো! আবার সেই গনেশের একটা কলা গাছ বউও আছে। তারপর হুনুমান কী করে উড়তে পারে ? কী করে একাই একটা লংকা জ্বালিয়ে দিতে পারে ? এছাড়াও বলে যে ইসলাম নাকি পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম , হিন্দু ধর্ম অনেক পরে এসেছে। পৃথিবী কবে শেষ হবে তা নাকি ওদের কোরানে লেখা আছে। আর মাঝে মধ্যে প্রায় জিজ্ঞেস করে হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? কোনো না কোনো তো একটা বড় দেবতা হয়েই যায়। সবাই তো এক দেবতা পূজা করে না। কেউ কেউ তো আলাদা পূজা করে , তাহলে হিন্দুদের মধ্যে দেবতা নিয়ে একতার অভাব। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি... এবার দেখুন আমার জবাব: মুসলমানরা হিন্দুদেরকে ধর্ম বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে বিব্রত করে , ঠিকঠাক সেই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে না

বেদ এ ‘‘পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত’’- =>এছাড়া মা- ছেলে দূষ্কর্ম, এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?”

“ রিগবেদ ---- অধ্যায় - ৩ , খন্ড - ৩১ , শ্লোক : ১ - ২ ‘‘ পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত ’’- => এছাড়া মা - ছেলে দূষ্কর্ম , এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?” ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছে Md Alhaz Hosain নামের এক মুসলমান আমার এক পোস্টের কমেন্ট বক্সে। বেদ এ্রর এই বাণীতে আসলেই কী বলা হয়েছে , সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন আমার এই পোস্টে : ফেসবুকে মুসলমানদের কমেন্ট মানেই গালাগালি , খিস্তি। এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে , মুসলমানরা যুক্তি বোঝে না। কারণ , যারা যুক্তি বোঝে তারা যুক্তি দিয়ে কথা বলে , প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে তাদের গালি - গালাজের প্রয়োজন হয় না। এজন্য তথ্য রেফারেন্স দিয়ে লেখার পরও যারা সেসবে নজর না দিয়ে গালাগালি করে তাদের কমন্টেকে আমি রাস্তার পাগলা কুত্তার ঘেউ ঘেউ বলেই মনে করি , তাই সেগুলোকে কোনো গুরুত্বই দিই না। কিন্তু আজকে যে কমেন্টটির উত্তর দিচ্ছি , সে বেশ ভদ্রভাবেই কথাগুলো তুলে ধরেছে ; তাই তার লেখার জবাব দিচ্ছি , যদিও পাগলা