কিভাবে রাম সৃষ্টিকর্তা হতে পারে কারণ সে প্রয়োজনে খাবার খেয়েছে, ঘুম গেছে, বিয়ে করেছে দৈহিক তাড়নায়, রাম নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেছে এসব কি সৃষ্টিকতার কর্ম?
“কিভাবে রাম
সৃষ্টিকর্তা হতে পারে কারণ সে প্রয়োজনে খাবার খেয়েছে, ঘুম গেছে, বিয়ে করেছে দৈহিক তাড়নায়, রাম নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেছে এসব
কি সৃষ্টিকতার কর্ম?”
উপরের এই প্রশ্নসহ-
শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ, কালী, দুর্গা এবং রাবন সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলো অামার ফেসবুক আইডির কমেন্ট বক্সে MdAlhazHosain নামের এক
মুসলমান। আগে তার প্রশ্নগুলো দেখে নিন নিচে, তারপর দেখবেন আমার উত্তর।
তার প্রশ্নগুলো
হলো,
“অশ্লীল
ভঙ্গিমায় উলঙ্গ নারী, মুখে ও দাঁতে
রক্ত ও হাতে রক্তাক্ত তলোয়ার কি করে সৃষ্টিকর্তা হতে পারে? উদাহরন- দূর্গা, কৃষ্ণা যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তবে সে
কেন তার মামীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখলো? তবে কি সৃষ্টিকর্তা মানুষের সাথে এমন অবৈধ কর্মে লিপ্ত
হয় যা তার নিজেরই আইনের বর্হিভূত? কিভাবে রাম সৃষ্টিকর্তা হতে পারে কারণ সে প্রয়োজনে
খাবার খেয়েছে, ঘুম গেছে, বিয়ে করেছে দৈহিক তাড়নায়, রাম নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেছে এসব
কি সৃষ্টিকতার কর্ম? যদি রাম
সৃষ্টিকর্তাই হন কেন তিনি হনুমানের সাহায্য চাইবেন? তাহলে কি সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার কমতি আছে? রাম হনুমানের দুই ভাইকে কেন অকারনে
খুন করলেন যেখানে রামের সাথে তাদের কোন শত্রুতা ছিলনা? সৃষ্টিকর্তা হয়ে অপরাধ করা কি সম্ভব? রাবন যদি শয়তান হয়ে একদিনে লঙ্কায়
পৌঁছাতে পারে তবে রাম সৃষ্টিকর্তা হয়ে কেন ১২ বছর লাগলো তাও আবার হনুমানের
সাহায্যে? শয়তানের শক্তি
সৃষ্টির্কতা হতে কি করে বেশি হওয়া সম্ভব?”
এবার দেখুন আমার জবাব,
তার প্রথম প্রশ্ন হলো, “অশ্লীল ভঙ্গিমায় উলঙ্গ নারী, মুখে ও দাঁতে রক্ত ও হাতে রক্তাক্ত তলোয়ার কি করে সৃষ্টিকর্তা হতে পারে?”
এখানে যার কথা সে বলেছে, সে হলো দেবী কালী। কালী একটি পৌরাণিক চরিত্র। পৌরাণিক গল্প মানেই সেগুলো শুধুই গল্প, বাস্তব পৃথিবীতে সেই ঘটনা কখনোই ঘটে নি। এই গল্পগুলো বানানো হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য; যেমন- ঈশপের গল্প, যেখানে প্রাণীরা মানুষের মতো করে কথা বলে। এখন কেউ যদি সত্যি সত্যিই মনে করে যে প্রাণীরা মানুষের মতো করে কথা বলে, তাকে নির্বোধ ও বলদ ছাড়া আর কী বলা যাবে ? কালীর এই অসুর নিধনের কাহিনীর মাধ্যমে সমাজের বাস্তব অসুরদের নিধন করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কালীর এই রূপটি খুব হিংস্র। কিন্তু প্রতি বছর মুসলমানরা একদিনে কোররানীর নামে যে সারা পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি কোটি প্রাণীকে নৃশংসভাবে পুচিয়ে পুচিয়ে জবাই ক’রে হত্যা ক’রে পৃথিবীর মাটিকে যে রক্তে লাল করে ফেলে, সেটা কি কম নৃশংস ? কালীর নৃশংসতা কাল্পনিক আর কোরবানীর নৃশংসতা কিন্তু বাস্তব যা প্রতিবছরই মুসলমানরা ঘটায়; কোনটা বেশি ভয়ংকর ও বিভৎস, কোরবাণীর ঘটনা, না কালীর রূপ ? এখানে সে কালীকে সৃষ্টিকর্তা বলেছে, কিন্তু কালীকে হিন্দুরা শুধু একজন দেবী ই মনে করে, সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর নয়।
এরপর সে লিখেছে, “উদাহরন- দূর্গা, কৃষ্ণা যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তবে সে
কেন তার মামীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখলো? তবে কি সৃষ্টিকর্তা মানুষের সাথে এমন অবৈধ কর্মে লিপ্ত
হয় যা তার নিজেরই আইনের বর্হিভূত?”
এখানে সে কার বিষয়ে কী বলতে চাচ্ছে সেটাই তো পরিষ্কার হচ্ছে না। অভিযোগটা দুর্গা, না কৃষ্ণের বিরুদ্ধে ? মুসলমানরা যে একপাতা বাংলাও ঠিক মতো লিখতে পারে না, এটা তার একটা উদাহরণ। দুর্গাকে সে সৃষ্টিকর্তা বলেছে, কিন্তু হিন্দুরা দুর্গাকে সৃষ্টিকর্তা নয়, একজন দেবী হিসেবে বিবেচনা করে। এখানে তার অন্য অভিযোগ হলো, “কৃষ্ণা যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তবে সে কেন তার মামীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখলো ?” কৃষ্ণা লিখলেও এখানে সে রাধা-কৃষ্ণের ব্যাপারটিকে যে ইঙ্গিত করছে, সেই ব্যাপারটি স্পষ্ট। কিন্তু মুমিন তো জানে না যে, কৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী মহাভারত এবং ভাগবতে রাধার কোনো উল্লেখ নেই। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ অর্থাৎ ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের পর মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়, কৃষ্ণ চরিত্রকে কলুষিত করার ষড়যন্ত্রে- রচিত বই পুস্তকে রাধা চরিত্রকে সৃষ্টি হয়েছে। কৃষ্ণের বাল্যকালে তার খেলার সাথীদের মধ্যে রাধা বলে কেউ থাকলেও থাকতে পারে, উল্লেখযোগ্য কেউ নয় বলেই হয়তো মহাভারত বা ভা্গবতে রাধার প্রসঙ্গ উল্লেখ হয় নি। সুতরাং যে রাধা, কৃষ্ণের যৌবনকালে ছিলোই না, তার সাথে কৃষ্ণের প্রেম এবং অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি কি হাস্যকর নয় ?
এরপর তার অভিযোগ হলো, “কিভাবে রাম সৃষ্টিকর্তা হতে পারে কারণ সে প্রয়োজনে খাবার খেয়েছে, ঘুম গেছে, বিয়ে করেছে দৈহিক তাড়নায়, রাম নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেছে এসব কি সৃষ্টিকতার কর্ম ?”
হিন্দু বিশ্বাস মতে, রাম সৃষ্টিকর্তার একজন অবতার যে মানুষ রূপে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলো। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে, মানুষ হিসেবে যে পৃথিবীতে জন্ম নেবে, তার উপর অবশ্যই জৈবিক দোষ-গুণ আরোপিত হবে, এটা শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাই রামের মধ্যে ঐ বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা গিয়েছে। কিন্তু ইসলামের আল্লা তো পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্ম নেয় নি, তাহলে তার মধ্যে রাগ (কোরান, ২/৪০-৪১), ক্ষোভ (৭/১৭৯), হিংসা (৫/১৪), ঘৃণা (৯৮/৬) এই বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে কেনো ? আর আল্লা, মুহম্মদের লুঠপাট করা গনিমতের মালের ২০% ভাগ (৮/১, ৮/৪১) নিয়ে কী করে ? এই গনিমতের মালের মধ্যে মেয়েরাও থাকতো, সেই মেয়ের ভাগ আল্লাও পেতো। এ থেকে কি প্রমান হয় না যে, শুধু রাগ আর ঘৃণা ই নয় আল্লার যৌনক্ষুধা এবং পেটের ক্ষুধাও আছে। মুসলমানদের আসমানী আল্লার যদি এসব বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, তাহলে মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়া রামচন্দ্রের মধ্যে এ্সব বৈশিষ্ট্য থাকলে দোষ কী ?
এরপর তার অভিযোগ হলো, “যদি রাম সৃষ্টিকর্তাই হন কেন তিনি হনুমানের সাহায্য চাইবেন ? তাহলে কি সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার কমতি আছে?”
এই প্রশ্নটা করার আগে রামায়নটা আগে ভালো করে পড়ে নেওয়ার দরকার ছিলো। হনুমান খুব ছোটোবেলাতেই রামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলো। বলতে গেলে তাদের সম্পর্ক ছিলো প্রভূ আর ভৃত্যের মতো। তো প্রভূকে ভৃত্যের সাহায্য চাইতে হবে কেনো ? বরং এখানে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, রাম যদি ভগবান হয় তাহলে তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হবে কেনো ? আগেই বলেছি, প্রাণী হিসেবে জন্ম নিলে তাকে প্রকৃতির নিয়ম মানতেই হবে। ইসলামের আল্লাও তো মহাসর্বশক্তিমান, তবে সে মুহম্মদকে মক্কায় রক্ষা করতে পারলো না কেনো ? কেনো মুহম্মদকে মক্কা ছেড়ে মদীনায় পালাতে হলো ? কেনো আল্লাকে বলতে হলো,
“হে নবী, কাফের ও মোনাফেকদের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে জেহাদ করো এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন করো।”- (কোরান - ৯/৭৩)
যে আল্লা্ ‘কুন’ মানে হও বললেই সব হয়ে যায়, তাকে তার মনোনীত ধর্ম ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার এজেন্ট হিসেবে কেনো মুহম্মদকে নিয়োগ করতে হবে এবং কেনো তাকে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নির্দেশ দিতে হবে ? কেনো সর্বশক্তিমান আল্লাকে কাফেরদেরকে মারার জন্য মুমিনদের হাতকে ব্যবহার করতে হয় ? এই হাত ব্যবহারের আয়াতটি দেখে নিন নিচে-
“ অতএব সত্য কথা এই যে, তোমরা তাদেরকে হত্যা করো নি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি নিক্ষেপ করো নি, বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছেন, আর এই কাজে মুমিনদের হাত ব্যবহার করা হয়েছে।”- (কোরান, ৮/১৭)
আ্ল্লাকে যখন কাফেরদেরকে মারার জন্য মুসলমানদেরকে যুদ্ধ করতে নির্দেশ দিতে হচ্ছে, কাফেরদেরকে হত্যা করার জন্য যখন মুসলমানদেরকে ব্যবহার করতে হচ্ছে, বর্শা নিক্ষেপ করার জন্য মুসলমানদের হাতকে ব্যবহার করতে হচ্ছে, তার মানে পৃথিবীতে জন্ম না নিয়েও প্রকৃতির নিয়ম আল্লাকেও মানতে হচ্ছে, এখন রামচন্দ্র যদি প্রকৃতির সেই নিয়ম মেনে যুদ্ধ করে তাহলে তার দোষ কোথায় ?
এরপর তার প্রশ্ন হলো, “রাম হনুমানের দুই ভাইকে কেন অকারনে খুন করলেন যেখানে রামের সাথে তাদের কোন শত্রুতা ছিলনা? সৃষ্টিকর্তা হয়ে অপরাধ করা কি সম্ভব?”
আবারও বলছি প্রশ্নগুলো করার আগে রামায়ণ পড়ে নেওয়া দরকার ছিলো। রাম নাকি হনুমানের দুই ভাইকে খুন করেছে ? হনুমানের তো কোনো ভাই ই নেই। হনুমান তার পিতা মাতার একমাত্র সন্তান। কিন্তু এখানে রাম কর্তৃক যাকে সে খুন করার কথা বলছে, সে সম্ভবত বালী, সে হনুমানের কেউ নয়, সে বানরদের রাজা। কিন্তু রাম তাকে অকারণে খুন করে নি, সেটা বুঝতে হলে আপনাকে রামায়ণের এই কাহিনীটা আগে জানতে হবে:
কাহিনীটা এরকম : বাণরদের রাজা বালী, সুগ্রীব তার ছোট ভাই। একদিন দুই ভাই মিলে এক মায়াবী রাক্ষসের সাথে যুদ্ধ করছিলো। এক পর্যায়ে রাক্ষস গিয়ে এক পাহাড়ের গুহার মধ্যে লুকায়। বালী, সুগ্রীবকে সেই গুহার মুখ পাহারা দিতে বলে রাক্ষসকে মারার জন্য গুহার মধ্যে ঢুকে, কিন্তু এক বছর অপেক্ষা করার পরও বালী গুহা থেকে বের হচ্ছে না দেখে সুগ্রীব মনে করে সে নিশ্চয় মারা গেছে, এখন এই রাক্ষস যদি গুহা থেকে বের হয়, তাহলে রাজ্যের নিশ্চয় অনেক ক্ষতি করবে। এই ভেবে সুগ্রীব বড় পাথর দিয়ে গুহার মুখ বন্ধ করে দিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরে আসে। স্বামীর মৃত্যু হয়েছে মনে করে বালীর স্ত্রী ‘তারা’ বিধবার বেশ ধরে। বড় ভাই এর স্ত্রী এভাবে সারাজীবন বিধবা বেশে কাটাবে ? এই কথা ভেবে সুগ্রীব তার বৌদিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বালীর স্ত্রী ‘তারা’ শাস্ত্রীয় নির্দেশ(অথর্ববেদ ১৮/৩/২, বিধবাদের পুনর্বিবাহ) মেনে পুনরায় সুগ্রীবকে বিয়ে করে রাজরানী হিসেবেই তার কর্তৃত্ব বজায় রাখে। এই ঘটনার কিছুদিন পর, রাক্ষসকে মেরে বালী গুহার মুখে ফিরে দেখে গুহার মুখ বন্ধ এবং সুগ্রীবও সেখানে নেই। রাজপ্রাসাদে ফিরে বালী আরও দেখে সুগ্রীব রাজা হয়ে বসে আছে এমনকি তার স্ত্রী তারাকে সে বিয়ে করে নিয়েছে। বালি মনে করে রাজ্যের লোভেই সুগ্রীব পরিকল্পনা করে তাকে গুহার মধ্যে আটকে রেখে মেরে ফেলার জন্য ঐভাবে গুহার মুখ বন্ধ করে দিয়ে এসেছে। এরপর বালী, সুগ্রীবের কোনো কথা বিশ্বাস না করে তাকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং সুগ্রীবের স্ত্রী রুমাকে বিয়ে করার জন্য রুমার উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং রুমা রাজী না হলে তাকে বন্দী করে রাখে। রাজ্য থেকে বিতাড়িত সুগ্রীব ঘুরতে ঘুরতে বনের মধ্যে রামের সাথে মিলিত হয় এবং রামচন্দ্রকে সব খুলে বলে। ইতোপূর্বে রাবন সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লংকায় বন্দী করে রেখেছিলো এবং রাম তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলো। রাম বিবেচনা করে রাবনের মতো বালীও এক দূরাচারী, কেননা সে সত্যকে উপলব্ধি করার চেষ্টা না করে শুধু সন্দেহের বশে সুগ্রীবকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেছে, এছাড়াও রাবণের সীতাকে বন্দী করে রাখার মতো বালীও সুগ্রীবের স্ত্রী রুমাকে বিয়েতে রাজী না হওয়ার জন্য বন্দী করে রেখেছে। এভাবে রামের চোখে রাবন ও বালী ছিলো সমান অপরাধী। তাই রাম, বালীকে হত্যা করে এবং সুগ্রীবকে রাজা বানায়। এই পুরো ঘটনায় সুগ্রীব এবং রামের যে কোনো দোষ ছিলো না, তার প্রমান, বালীর পুত্র অঙ্গদ সুগ্রীবের কোনো কাজে বাধা দেয় নি এবং পরে সে রামের হয়ে যুদ্ধ করতে লংকা যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে রাম শত্রুতা করে বালীকে হত্যা করে নি, করেছিলো ধর্মপ্রতিষ্ঠার জন্যই। এই প্রসঙ্গে তার অন্য প্রশ্ন, “সৃষ্টিকর্তা হয়ে অপরাধ করা কি সম্ভব?” উপরের ঘটনা থেকেই কিন্তু পরিষ্কার যে রাম কোনো অপরাধ করে নি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লা একটি মস্তবড় অপরাধ করেছে, আর তা হলো- পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্ম সৃষ্টি করে ইসলামকে তার একমাত্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ইসলামকে অস্বীকারকারীদের হত্যা করার জন্য মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়েছে।
তার লাস্ট প্রশ্ন হলো, “রাবন যদি শয়তান হয়ে একদিনে লঙ্কায় পৌঁছাতে পারে তবে রাম সৃষ্টিকর্তা হয়ে কেন ১২ বছর লাগলো তাও আবার হনুমানের সাহায্যে? শয়তানের শক্তি সৃষ্টির্কতা হতে কি করে বেশি হওয়া সম্ভব ?”
আমরা জানি যে, শ্রীলংকা ও ভারতের মধ্যে একটি সমুদ্র সীমা আছে, সুতরাং স্থল পথে ভারত থেকে শ্রীলংকায় যাওয়া সম্ভব ছিলো না। রাবন পুষ্পক রথ নামে এক প্রকারের উড়ন্ত যান ব্যবহার করতো লংকা থেকে ভারতে আসা-যাওয়ার জন্য। এই ঘটনা থেকে এটা প্রমান হয় যে, হিন্দুরাই প্রথম বিমান আবিষ্কার করেছিলো এবং সেটা মাত্র ১০০ বছর আগে নয় কয়েক হাজার বছর আগে। যা হোক, রামের জন্য হনুমানের সাহায্যের ব্যাপারটা আগেই আলোচনা করেছি, এখন তার সার্বিক সাহয্য গ্রহণের ব্যাপারে বলছি, হিন্দুধর্ম মতে, সৃষ্টিকর্তা যখন অবতার রূপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে তার কর্ম ও আচরণের মাধ্যমে লোকজনকে শিক্ষা দেওয়া। পৃথিবীতে অশুভশক্তির সাথে শুভশক্তির লড়াই চিরন্তন। ভগবান রামচন্দ্র এইভাবে যুদ্ধের আয়োজন করে এবং যুদ্ধে জয়ী হয়ে মানুষকে এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে কিভাবে যুদ্ধের আয়োজন করতে হয় এবং কিভাবে অশুভশক্তিকে দমন করে যুদ্ধে জয় লাভ করতে হয়।
তার লাস্ট প্রশ্নের শেষ অংশ হলো, “শয়তানের শক্তি সৃষ্টির্কতা হতে কি করে বেশি হওয়া সম্ভব?”
শয়তান বলতে
এখানে সে রাবণকে বুঝিয়েছে এবং সে ধরেই নিয়েছে যে, রাবনের শক্তি বেশি; তাই যদি হতো তাহলে তো রাবন, রামের হাতে মরতো না। সুতরাং যখন
প্রশ্ন করা হয় তখন আগে পিছে এগুলো ভেবে প্রশ্ন করা উচিত, না হলে প্রশ্নকর্তা স্টুপিড হিসেবে
বিবেচিত হয়। যা হোক, রামের হাতে যখন
রাবন মরেছে, তখন এটা
নিশ্চিত যে ভগবান রামচন্দের চেয়ে রাবন শয়তানের ক্ষমতা বেশি ছিলো না। কিন্তু ইসলামে, আল্লার চেয়ে শয়তানের ক্ষমতা বেশি; আর সেজন্যই আল্লার শখের সৃষ্টি
মানুষকে বিপথে চালিত করার ওপেন চ্যালেঞ্জ আল্লাকে দিয়ে শয়তান কিন্তু এখনও বহাল
তবিয়তে টিকে আছে। এই ঘটনাই কিন্তু প্রমান করে যে, আল্লার চেয়ে শয়তানের ক্ষমতা শুধু বেশি নয়, অনেক বেশি ।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম। জয়
শ্রী কৃষ্ণ।
------------------------------------------
উপরে যে
রেফারেন্সগুলো দিয়েছি, সেগুলো দেখে
নিন নিচে-
বিধবা বিবাহ :
“উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য
দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।”-(অথর্ববেদ ১৮/৩/২)
এর অর্থ- “হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ
কী ? বাস্তব জীবনে
ফিরে এসো। পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।”
আল্লার বৈশিষ্ট্য :
রাগী : তোমরা
একমাত্র আমাকেই ভয় করো। আমার প্রেরিত কিতাবের প্রতি ঈমান
আনো,… আমার ক্রোধ হতে তোমরা আত্মরক্ষা করো।– (কোরান, ২/৪০-৪১)
হিংসুক: “শেষ পর্যন্ত আমি তাদের মধ্যে (খ্রিষ্টান) মধ্যে সকল সময়ের জন্য পারস্পারিক হিংসা বিদ্বেষের বীজ বপন করে দিয়েছি।" – (কোরান, ৫/১৪)
যে হিংসুক সেই
অন্যের মধ্যে হিংসা সৃষ্টি করতে পারে।
ঘৃণাকারী :
“একথা একান্তই
সত্য যে, বহু সংখ্যক
মানুষ ও জ্বীন এমন আছে ,যাদেরকে আমি
জাহান্নামের জন্যই পয়দা করেছি।.....তারা আসলে জন্তু জানোয়ারের মতো বরং তা হতেও
অধিক বিভ্রান্ত।" (কোরান, ৭/ ১৭৯)
"আহলি কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে হতে যারা কুফরী করেছে, তারা নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।"- (কোরান, ৯৮/৬)
গনিমতে মালের ভাগ সম্পর্কিত :
“এই গনিমতের মাল
তো আল্লা এবং তার রসূলের।" - (কোরান, ৮/১)
“আর তোমরা জেনে
রাখো যে, তোমরা যে
গনিমতের মাল লাভ করেছো, তার এক
পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তার রসূল এবং
আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম মিসকিন
ও পথিক মুসাফিরদের জন্য নির্দিষ্ট।"- ( কোরান, ৮/৪১)
------------------------------------------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন