দিব্যজ্ঞান নয়, কাণ্ডজ্ঞান চাই # সম্পূর্ণ
স্ক্রিপ্ট (২০১৭ সাল উপযোগী সংস্করণ)
পরমপূজ্য শিবপ্রসাদ রায়ের অসাধারণ সৃষ্টি
"দিব্যজ্ঞান নয়, কাণ্ডজ্ঞান
চাই" নামের এই ছোট্ট পুস্তিকাটি,
বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হিন্দুত্ববাদের প্রথম বই, যেটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৮২ সালে। এরপর
এটি শুধু ভারতের সবগুলো ভাষাতে প্রকাশ হ'য়ে ভারতই জয় করে নি, বিশ্বের অন্যান্য ভাষাতেও প্রকাশিত হয়ে সাড়া বিশ্বেই বেশ
আলোড়ন তুলেছে। এজন্য ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই বইয়ের ২৫টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, যা একটি অনন্য রেকর্ড। কোনো হিন্দুর
পক্ষে কখনোই প্রকৃত হিন্দু হওয়া সম্ভব নয়, যদি তার এই বইটি পড়া না থাকে। পশ্চিমবঙ্গে বইটি বহুল
প্রচারিত না হলেও দুষ্প্রাপ্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা এর সাথে খুব বেশি পরিচিত নয়।
তাই যাদের কাছে, বই আকারে এই
পুস্তিকাটি এখনও পৌঁছায় নি, সেই সব
নেট-ফেসবুক ইউজারদের জন্য আমার এই
নিবেদন, "দিব্যজ্ঞান নয়, কাণ্ডজ্ঞান চাই" এর সম্পূর্ণ
স্ক্রিপ্ট।
দিব্যজ্ঞান নয়, কাণ্ডজ্ঞান চাই
শিবপ্রসাদ রায়
ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম 'বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না’। বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনা, বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে, গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা
অবাস্তব ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপক্ষো করছে চরম সর্বনাশ।
এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য
দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিলো এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের
নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা নব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিলো: " হিন্দু মুসলমান
দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সাথে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ন
রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যাণ্ড চাইম যার নাম পাকিস্তান।" এইভাবে
মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুই ভাগ করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কী করছিলেন ? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, "হিন্দু মুসলমান
পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি।
মুসলিম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ
ভিত্তিহীন।" মাহাত্মা গান্ধী বললেন, "ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে
হবে।" পণ্ডিত নেহেরু বললেন,
"পাকিস্তান ইজ এ ফ্যান্টাস্টিক ননসেন্স।" সর্দার
প্যাটেল বললেন, "ভারত বিভাগ তো
একটা পরিহাস মাত্র। এমন কথা আমরা চিন্তাও করতে পারি না।" রাজন্দ্রেপ্রসাদ
তাঁর বিরাট গ্রন্থ 'ইন্ডিয়া
ডিভাইডেড' লিখে লিখে
প্রমান করলেন, "পাকিস্তান একটা
অসম্ভব অবাস্তব ব্যাপার। বেশির ভাগ মুসলমান জাতীয়তাবাদী, আর তারা কংগ্রেসের মধ্যে। সুতরাং
অদূরদর্শী এবং সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরাই পাকিস্তানের কথা বলে আতঙ্ক
ছড়াতে চাইছেন।" এই সব নেতাদের লক্ষ লক্ষ অনুগামী কোটি কোটি মানুষকে এই মিথ্যা
কথাটা বোঝালো।
কিন্তু বাস্তবে কী ঘটেছিলো ? অসংখ্য প্রাণ, চোখের জল, নারীর সম্ভ্রম আর রক্তের বিনিময়ে
পাকিস্তান রচিত হলো। হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাত, এই সত্যকে স্বীকার করে ভারতকে দুভাগ করা হলো। দেড় কোটি
হিন্দুর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাড়ানো হলো পাকিস্তান থেকে। এখনও নিয়মিত তাড়ানো হচ্ছে
এবং ভবিষ্যতেও তাড়ানো হবে।
এখন এদেশের জাতীয় নেতাদের এবং তাদের অনুগামীদের কী বলা
হবে ? ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, আত্মপ্রবঞ্চক, অদূরদর্শী, ক্ষমতা লোভী ? এই প্রত্যেকটি বিশেষণ এদের কীর্তির
উপযুক্ত। কিন্তু আমি তা
বলবো না। এরা লোকান্তরিত, তাই এদের প্রতি
শ্রদ্ধা নিয়েই বলবো, এরা ছিলেন
দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানহীন। এদের কোনো আচরণই বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা
করা যায় না।
স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দু তার প্রাণ উৎসর্গ করেছে
স্বর্গীয় প্রেরণায়; আর মুসলমান তার
স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছে, ভারতে মুসলিম
রাজত্ব প্রতিষ্ঠার কামনায়। পূর্ব বাংলা পাকিস্তান হলো, মুসলমানরা সংখ্যায় বেশি বলে। ফাঁসির
মঞ্চে প্রাণদানের সংখ্যা পূর্ববঙ্গে সর্বাধিক। কিন্তু আত্মদানের তালিকায়
পূর্ববঙ্গে কেনো গোটা বঙ্গে একজন মুসলমানও নেই। স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকতা
করে, ইংরেজের
সহযোগিতা করে, মুসলমানরা
পুরস্কার পেলো পাকিস্তান, বাংলাদেশ। আর
ফাঁসিতে গুলিতে প্রাণ দিয়ে পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা হলো বাস্তুচ্যুত, শরণার্থী, রিফিউজি। মাতৃভূমি থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হলো
ভারতে। যারা আসামে আশ্রয় নিলো তাদের পরিচয় হলো বিদেশী বহিরাগত। যারা বাংলাদেশে রয়ে
গেলো, তারা হয়ে গেলো
জিম্মি, মালাউন, কাফের। আর যারা ত্রিপুরায় গেলো, তারা সংবাদপত্রের ভাষায় হলো অনুপজাতি।
কি করুন পরিণতি ! অথচ শ্যামাপ্রসাদ ছাড়া একজনও
আত্মসম্মান-সম্পন্ন নেতা ছিলেন না গোটা দেশে, যাকে এই ঘটনা বিচলিত করেছে। তার প্রচেষ্টায় রক্ষিত হয়েছিলো এই
পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাব। কিন্তু তাকে সবাই বলেছিলো সাম্প্রদায়িক। শ্যামাপ্রসাদ
কাশ্মিরের চুড়ান্ত ভারত ভূক্তি চেয়েছিলেন, ৩৭০ ধারার উচ্ছেদ চেয়েছিলেন, তিনি মধ্যপথে সিজ ফায়ার না করে যুদ্ধ চালিয়ে
পুরো কাশ্মির উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন;
তাকে হত্যা করা হলো তাঁকে । যারা কাশ্মিরের অর্ধাংশ পাকিস্তানের হাতে তুলে
দিয়ে বাকিটাকে প্রায় পাকিস্তান করে রেখে দিলো, যাদের জন্য কাশ্মির আজ অগ্নিগর্ভ, তারাই আজ প্রগতিশীল-ধর্ম নিরপেক্ষ- অসাম্প্রদায়িক ! আর
যারা ৩৭০ ধারার উচ্ছেদ করে কাশ্মির সমস্যার সত্যিকারের সমাধান চায়, তাদের বলা হয় সাম্প্রদায়িক ! ভারতের
অর্ধাংশ ( বাংলাদেশ+পাকিস্তান) এবং কাশ্মিরের অর্ধাংশ মুসলমানদের উপঢৌকন দেওয়া
সত্ত্বেও, ভারতে আবার সেই একই পরিস্থিতির
উদ্ভব হয়েছে। কাশ্মির সবটাই চলে যেতে পারে। প্রকৃত পক্ষে কাশ্মির আজ প্রায়
নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কাশ্মির চালাচ্ছে পাকিস্তান এবং তাদের বিভিন্ন উগ্রপন্থী
সংস্থা।
ভারত আবার খণ্ডিত হতে পারে। বিদেশি অর্থে পুষ্ট হয়ে
অধিকাংশ মুসলমান আজ সেই উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বিচার
তোষণে তারা ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বে-আইনীভাবে সরকারী জমি দখল করে
পার্কসার্কাসে অসংখ্য বাড়ী
তৈরি করেছে। রাজাবাজারে গড়ে তুলেছে মসজিদ। দিল্লির ইমাম বলেছে, "আমরা এদেশের
আইন কানুন মানি না। বাবরি মসজিদ না পেলে আবার হোমল্যান্ডের আওয়াজ তুলবো।
পার্লামেন্টে আগুন লাগিয়ে দেবো।" এমন উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা দিয়ে তারা দাঙ্গা
বাধিয়েছে মীরাটে, আলীগড়ে, দিল্লিতে,
বরোদায়। এই অবস্থা বুঝে যারা কিছু বলতে গিয়েছে বা এখনও বলতে যাচ্ছে, তাদেরই বলা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক ! এই
দিব্যজ্ঞান সম্পন্ন (প্রকৃতপক্ষে নির্বোধ) নেতাদের, অর্ধেক ভারতবর্ষ হারিয়েও কাণ্ডজ্ঞান ফেরে নি।
হিন্দু মুসলমানের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলো। কিন্তু এদেশীয়
(কংগ্রেস) নেতাদের একজাতি তত্ত্বের মিথ্যে নেশাটা কাটলো না। পাকিস্তান হিন্দু শুন্য, বাংলাদেশও প্রায় হিন্দু শুন্য। কিন্তু
(১৯৪৭ এ) লোক বিনিময়ের মতো একটা বাস্তব সমাধান হাতের কাছে পেয়ে তা ব্যবহার করা হলো
না। তাই যে মুসলমানরা
হিন্দুর সঙ্গে থাকলে ধর্ম বিপন্ন হবে বলে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলো, তারা ভারতেই রয়ে গেলো, তাদের কিছুই হারাতে হলো না। পাকিস্তান, বাংলাদেশ তাদের ফিক্সড ডিপোজিট; ওগুলো মুসলিম রাষ্ট্র, ওগুলোতে কারো হাত দেওয়া চলবে না, কিন্তু ভারত হলো যৌথ সম্পত্তি, তাই এখান থেকে যতটা পারো লুটে নাও।
ভারতকে দুটুকরো করার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তান হলো মুসলিম রাষ্ট্র, কিন্তু ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হলো না।
হিন্দু রাষ্ট্রে অন্য কোনো ধর্ম বিপন্ন হয় না। নেপাল
হিন্দু রাষ্ট্র, তাই সেখান থেকে
একটি মুসলমানকেও পালাতে হয় নি। কিন্তু পাকিস্তান বাংলাদেশের হিন্দুরা বলির পাঁঠার মতোই অসহায়।
যখন খুশি তাদের উপর অত্যাচার করা যায়,
বিতাড়িত করা যায়, যে কোনো হিন্দু
নারীকে ইচ্ছা করলেই অপহরণ করা যায়, ধর্ষণ করা যায়, ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা যায়। ভারতের একজন
মুসলমানেরও কিন্তু এজন্য কষ্ট হয়
না। তারা কোনোদিন এর একটা মৌখিক প্রতিবাদও করে না। বাংলাদেশ থেকে যাদের বিতাড়িত
করা হয়েছে বা যারা স্বেচ্ছায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছে, বাংলাদেশ তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও (যেটা বাংলাদেশ
কখনোই করবে না), ভয়ে তারা ফিরবে
না ; কারণ,তারা জানে ইসলামিক রাষ্ট্র মানে কী ?
ভারতের সেই শতকরা ৯৭ জন মুসলমান পাকপন্থীই রয়ে গেছে, ধর্মসংস্কৃতি অক্ষুণ্ন রেখেই ( যারা
বলেছিলো হিন্দুদের সাথে থাকলে মুসলমানদের ধর্মসংস্কৃতি অক্ষুণ্ন থাকবে না)। এরা মুজিব মারা গেলে খুশি
হয় ( কারণ, তারা মনে করে
মুজিব বাংলাদেশ স্বাধীন করে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে ভেঙেছে)। কিন্তু ভুট্টোর
ফাঁসি হলে বাস পোড়ায়, সিনেমা হল
পোড়ায়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে ব্যাণ্ড বাজিয়ে মিছিল বের করে। ফুটবলে মোহমেডান
স্পোর্টিং জিতলে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দেয়।
এই সব আচরণের একটাই অর্থ, এদের আনুগত্য দেশের বাইরে। লখনউয়ের মুসলমানরা ইরাক বা
ইরানের সমর্থক। ওদের বাড়ীতে বাড়ীতে খোমেইনি আর সাদ্দামের ছবি। ওখানে প্রায়ই যে
শিয়া-সুন্নীদের প্রাণঘাতি সঘর্ষ হয়,
সেটা আসলে ইরাকপন্থী এবং ইরানপন্থী মুসলমানদের সঘর্ষ । এখন যদি কেউ প্রশ্ন
তোলে ভারতবর্ষে ভারতপন্থী মুসলমানরা কই ? সঙ্গে সঙ্গেই বহু মানুষ সেই মানুষটিকে বলেন বা বলবেন
সাম্প্রদায়িক ! কেনো বলেন ? এরা দিব্যজ্ঞান সম্পন্ন, কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে। এদেশের
অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তিনটি মৌলিক বিষয়ে একমত পোষণ করে; সেগুলো হলো- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেকক্ষতা।
কিন্তু এই তিনটি আদর্শই নির্ভরশীল গরিষ্ঠ হিন্দু জনসংখ্যার উপর। ভারতীয় উপমহাদেশের
যেখানেই হিন্দুর সংখ্যা কমে গেছে, সেখানেই এগুলো
হাওয়া হয়ে গেছে। ( মুসলিম এলাকায় গিয়ে ওগুলো কথা বললে এখন চাপাতির কোপ খাওয়ার
সম্ভাবনা)
আফগানিস্তান,
পাকিস্তান, বাংলাদেশে এসব
কথা বলার লোক আর নাই। আফগানিস্তানের নাম এক সময় গান্ধার ছিলো, দেশটা হিন্দুদের ছিলো, ভারতের অংশ ছিলো, এই কথাটাই আজ অনেক হিন্দুর মনে নেই!
কাশ্মিরে এক টাকা কেজি চাল খাইয়ে, দুই টাকা কেজি
চিনি খাইয়ে এবং এম.এ, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যন্ত বিনা পয়সায়
পড়িয়েও সেখানে মার্ক্সবাদী সমাজতন্ত্র এবং গান্ধীবাদী অহিংসা সবই অচল। কাশ্মিরে
ভারতের রাষ্ট্রপতিও চেষ্টা করলেও এক ইঞ্চি জমি কিনতে পারবেন না। ১৯৪৬ সালের হিন্দু
হত্যার উৎসবের সময়, পশ্চিম
পাঞ্জাবের হাজার বিশেক হিন্দু, মুসলমানদের হাত
থেকে প্রাণ বাঁচানোর
তাগিদে পালিয়ে চলে এসেছিলো কাশ্মিরে। তাদের সংখ্যা এখন (১৯৮০) পঁচাত্তর হাজার
(বর্তমানে হয়তো আরো বেশি)। তাদের আজ পর্যন্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হয় নি। তারা এখনও
কাশ্মিরে অবাঞ্ছিত।
শেখ আব্দুল্লাহর (নেহেরু কর্তৃক নির্বাচিত কাশ্মিরের
উজির-এ-আজম) আমলে কাশ্মিরে একটা বিল পাস হয়েছিলো, যাতে পাকিস্তানে চলে যাওয়া মুসলমানরা, কাশ্মিরে ফিরে এলে, তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অথচ
বাংলাদেশের হিন্দুদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি মানে শত্রু সম্পত্তি। প্রয়াতা ইন্দিরা
গান্ধী সারা দেশে "এসমা(অত্যাবশ্যকীয় রাষ্ট্রীয় পরিষেবা)" প্রয়োগ
করেছিলেন, কিন্তু
কাশ্মিরে পারেন নি। এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক নেতারাও একদম চুপ।
দেশদ্রোহীতার অপরাধে যাকে এগারো বছর জেলে রাখতে হয়েছিলো এবং যার হাতে
শ্যামাপ্রসাদের রক্ত লেগে আছে সেই শেখ আব্দুল্লাহকে মূখ্য মন্ত্রী করতে হয়; আব্দুল্লাহ মারা গেলে ফারুককে। শুধু
সেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু বলে। গত কয়েক বছরে কাশ্মিরে তিনশো হিন্দু মন্দির ধ্বংস
করা হয়েছে। তিনলক্ষ হিন্দুকে
বিতাড়িত করা হয়েছে। সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশের অধিকাংশ নেতা
এই সকল ঘটনা জানেন; কিন্তু তারা
সকলেই দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন, তাই প্রতিবাদ
করার মতো কাণ্ডজ্ঞান তাদের নেই।
রাষ্ট্রসংঘ একটি হিসেব কষে দেখিয়েছে, মুসলমানদের অনিয়ন্ত্রিত জন্মহার এবং
বিপুল অনুপ্রবেশ ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে হিন্দুদেরকে সংখ্যালঘু করে দেবে।
ব্যাপকভাবে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা
আসছে। একথা ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের। হাজার হাজার বছরের
"মীনাক্ষীপূরম"- এ মাত্র সাড়ে আটশো হিন্দু, মুসলমান হবার সাথে সাথেই সেটা হয়ে
গেলো রহমতনগর। ভারতে হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে গেলে ভারত আর ভারত থাকবে না। এই ছোট্ট
কাণ্ডজ্ঞানের কথাটা দেশের
দিব্যজ্ঞান সম্পন্ন ধর্মীয় গুরু, রাজনৈতিক নেতা, সাধু-সন্ত,
বুদ্বিজীবী কারো মাথায় ঢুকছে না। বরং তারা এবিষয়ে আরো গোলমাল পাকিয়ে দিচ্ছে
নানা ভাবে।
রামকৃষ্ণ মিশনের একটি সম্মেলন হয়েছিলো বেলুড়ে, ১৯৮১সালে। তিন দিন ধরে আলোচনা হলো কি
করে সব ধর্মের মধ্যে সমন্বয় করা যায়। এই দায়িত্বটা যেন শুধু হিন্দুদেরই? কিন্তু শিলং এ খ্রিষ্টানদের হাতে মিশনের
সন্ন্যাসী মার খেলেও সেকথা আলোচনা হলো না। চেরাপুঞ্জিতে রামকৃষ্ণ মিশনের জলের পাইপ
কেটে দিলো; কতভাবে
অত্যাচার করলো, সে কথা কেউ
বললো না। অন্য ধর্মের হাতে মার খাওয়া আর সর্বধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা করা, এদেশের অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মনে
হয় একমাত্র কাজ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, বর্ধমান শহর থেকে মাদার তেরেসাকে এক
লক্ষ টাকা তুলে দিলেন। শুধু উপাচার্য নন, মন্ত্রীরা এবং বহু বিশিষ্ট হিন্দুও লক্ষ লক্ষ টাকা
তেরেসাকে সংগ্রহ করে দিলেন। মা করুণাময়ী জগজ্জনী বলে, মাদারকে নিয়ে কি নাচানাচিই না হলো।
কিন্তু এই টাকা দিয়ে মাদার এদেশের হাজার হাজার হিন্দুতে খিষ্টান বানালো। এই কাজে
সাফল্য দেখানোর জন্য খ্রিষ্টান দেশগুলো মাদারকে নোবেল পুরষ্কার দিলো।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আজ যাবতীয় সমস্যার মূল এই ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানরা। ত্রিপুরায়
কয়েক হাজার হিন্দুকে হত্যা করেছিলো এরাই। নিহত হিন্দুদের জন্য জগজ্জননীর চোখ
থেকে এক ফোটা জলও পড়ে নি।কলেজ স্ট্রিটের এক ছোট ব্যবসায়ী, বিবাহের জন্য একটি অনাথিনী মেয়ে
চেয়েছিলো জগজ্জননীর কাছে; জবাব এলো, খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করলে তবেই মেয়ে
পাওয়া যাবে। এই হচেছ মাদারের আসল পরিচয়। খ্রিষ্টান সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট।
খ্রিষ্টান না হলে তিনি কারো সেবা করেন না। বাংলাদেশ টেরেসাকে প্রবেশের অনুমতিই
দিলো না। আর এই হিন্দু সমাজ, গরু যেমন গরুর
মাংস গাড়ীতে করে নির্বিকার চিত্তে বয়ে নিয়ে যায়, কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, পরমানন্দে জাবর কাটে, এরাও তেমনি, চৈতন্যহীন একটা জাত, ভালো-মন্দ বিচার করার বা শত্রু মিত্র
চেনার ক্ষমতাও এদের নেই। আর হিন্দুত্বের সম্পূর্ণতা, শ্রেষ্ঠ সম্পর্কেও এদের কোনো ধারণা নেই।
পৃথিবীতে কেউ সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে না, বলে শুধু হিন্দুরাই। কিন্তু এ কথা
বলতে গেলেও যে হিন্দুভূমির দরকার, হিন্দু
জনসংখ্যার দরকার, এই
কাণ্ডজ্ঞানটুকুও এদের নেই। বাস্তবতা বর্জিত দিব্যভাব, তুরীয়ভাব দাঁড়িয়ে গেছে ভণ্ডামী
মিথ্যাচারে আর প্রবঞ্চনায়। এই দীর্ঘস্থায়ী ভাবের ঘরে লুকোচুরি, গোটা হিন্দু জাতটাকেই মেরুদণ্ডহীন, আত্মরক্ষায় অসমর্থ ক'রে দিয়েছে। তাই অতীতে, বর্তমানে শুধু দেখি হিন্দু মার খায়, কাঁদে , পালায়, ধর্মান্তরিত
হয়। একটা জাতের যদি আত্মরকক্ষার শক্তিই না থাকে, তাহলে তার উচ্চ দর্শন, সহস্র মহাপুরুষ থেকেই বা কী লাভ ? এই রকম দুর্বল জাতকে কেউ শ্রদ্ধা করে
না, করুনা করে। এখন
হিন্দুদের কেউ করুনাও করে না, শিকার বলে মনে
করে। সব শিকারীর লক্ষ্য এখন হিন্দু সমাজ। সেবা আর প্রলোভনের টোপ হাতে নিয়ে হাজার
হাজার শিকারী হিন্দুদের শিকার করতে এসেছে, আসছে। খ্রিষ্টানরাষ্ট্র , মুসলিম রাষ্ট্রগুলো থেকে টাকা, কর্মী ভারতে আসে কোন সাহসে ? কারণ, তারা জেনে গেছে এখানে কোনো ঝুঁকি নেই। হিন্দু বাগাড়ম্বর, বিলাসী, শিথিল, ক্রয়যোগ্য, উদাসীন, আত্মরক্ষায় অসমর্থ, নিজেকে মনে করে উদার সর্বজ্ঞ। এমন আত্মনাশী জাতি আর
বিশ্বের কোথায় পাওয়া যাবে ? অতএব শিকার
করো। আরব রাষ্ট্রের টাকা আসছে ভারতে। খ্রিষ্টান মিশনারীরা শুধু ঘুরে বেড়ায় হিন্দু
পাড়ায়। তাই এখন এদেশের ধর্মীয় গুরু,
রাজনৈতিক নেতা এবং জনগনকে রূঢ় রাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।
যোগী-সাধক-ভক্ত-বৈষ্ণব সকলকে মনে
রাখতে হবে, জপ করুন, সাধনা করুন, কীর্তন করে কেঁদে ভাসিয়ে দিন, সর্বাগ্রে মনে রাখুন, হিন্দুভূমি-হিন্দুসমাজ-হিন্দুজাতি না
থাকলে, কিংবা হিন্দুর
সংখ্যা কম হয়ে গেলে, ওসব কিছুই
থাকবে না। রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মীদের মনে রাখতে হবে, মার্ক্সবাদ-গান্ধীবাদ-মমতাবাদ যা ই
বলুন, এসব ততদিন ই
বলা যাচ্ছে, যতদিন এদেশে
হিন্দু বেশি আছে। মার্ক্সবাদে সুপণ্ডিত এবং গান্ধীবাদের তাত্ত্বিক নেতাদের মনে
রাখতে হবে, তাদের সব
তত্ত্বজ্ঞান মূল্যহীন হয়ে গেলো, পূর্ববঙ্গে, হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে গেল ব'লে। প্রয়াত প্রমোদ দাশগুপ্ত এখানে
(পশ্চিমবঙ্গে) যতই গর্জন করুন, তিনি ভাবতেও
পারেন নি, তাঁর স্বপ্নের
মার্ক্সবাদ, তার জন্মভূমি
ফরিদপুরে গিয়ে প্রচার করবেন। প্রফুল্ল সেন ভুলেও ভাবেন নি, তার জীবনাদর্শ গান্ধীবাদ, তার পিতৃভূমি খুলনায় গিয়ে আর প্রচারের
সুযোগ পাবেন।
ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সম্পর্কে তার শিষ্যদের দাবী, তিনি নাকি পুরুষোত্তম, পূর্ণব্রহ্ম। তিনি বহু শিষ্যকে বলেছে, ধর্ম সবই সমান। কিন্তু
পাকিস্তান হওয়ার আগেই, তিনি সৎসঙ্গের
মূল আশ্রম পাবনা ছেড়ে পালিয়ে এলেন ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে। তার দিব্যজ্ঞান তাকে দিয়ে
অনেক মহৎ, উদার কথা
বলিয়েছে; কিন্তু
কাণ্ডজ্ঞান তাকে বলেছে, "যা পালা, হিন্দুস্তানে, যেখানে হিন্দু বেশি আছে। তোর ব্রহ্মের
শক্তি দিয়ে তুই এখানে আত্মরক্ষা করতে পারবি না।" তাই কাল বিলম্ব না করে তিনি
পালিয়ে এলেন হিন্দুস্তানে। হিন্দুর সংখ্যা কম হয়ে গেলে পূর্ণব্রহ্মেরও কোনো
মর্যাদা থাকে না। এই সরল সত্যটা ঠাকুরের শিষ্যদের সবচেয়ে আগে বুঝতে হবে।
এই বঙ্গে আরেকজন খ্যাতিমান গুরু ছিলেন, ইনি নাকি জন্মসিদ্ধ ঠাকুর ? বালক ব্রহ্মচারী, জন্ম, ঢাকা জেলার মেদিনীমণ্ডল গ্রামে। পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তান হয়ে গেলে তার সিদ্ধাও কোনো কর্মেই
লাগলো না। তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হলো,
কোথায় ? পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে হিন্দু বেশি আছে। হিন্দু কম
হলে পূর্ণব্রহ্মও ক্ষমতাহীন। জন্মসিদ্ধ ব্রহ্মচারীও তাই। এগুলো দিব্যজ্ঞানের কথা
নয়, রাগের কথাও নয়।
প্রমানিত সত্য। কিন্তু এই আঘাত, এই পলায়ন থেকে
তারা কিছুই শিক্ষা নিলেন না। সন্তানদল একটি গানের রেকর্ড বের করেছে, যার প্রথমে আজান, পরে কথা, "যে আল্লা সেই
রাম, রাম নারায়ন
রাম।" আল্লাহ এবং রামের সহাবস্থান পূর্ববঙ্গে হলো না। আল্লার অনুগামীদের
দাপটে হিন্দুর চৌদ্দ
পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে তাকে পালিয়ে
চলে আসতে হলো ভারতে। তারপরেও এই গান নিশ্চয় ঔদার্য এবং সহিষ্ণুতার লক্ষণ। কিন্তু
এটি কাণ্ডজ্ঞানহীনতার এবং আত্মহত্যার লক্ষণও বটে। এত উদার এবং ভণ্ডজাত কখনো
বাস্তবের সম্মুখীন হতে পারে না।
তাই যখনই হিন্দু সমাজের উপর আঘাত এসেছে, এই সব দিব্যজ্ঞান সম্পন্ন মার্ক্সবাদী, পূর্ণব্রহ্ম ঠাকুর, ব্রহ্মচারীরা দিশেহারা হয়ে গেছে; পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তাঁদের
ঔদার্য, পাণ্ডিত্য, বাগ্মিতা, ব্রহ্মত্ব, সিদ্ধান্ত কোনো কাজেই লাগেনি।
ভারতে এসে এদের প্রথম কাজ ছিলো ধর্মের একটা ভিত্তি তৈরি
করা, হিন্দু সমাজের
সকল সম্প্রদায়কে একটা প্লাটফর্মে আনা,
হিন্দুজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। প্রাণের আধার যেমন শরীর, তেমনি হিন্দু ধর্মের আধার হচ্ছে
হিন্দু জাতি, হিন্দু সমাজ।
সংগঠিত হিন্দু সমাজ না থাকলে তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী, হাজার হাজার ধর্মগুরু, পণ্ডিত-রাজনৈতিক নেতা কেউ নিজেদের মর্যাদাকে রক্ষা করতে
পারে না, পারবে না; তখন তাদের পালাতে হয়, মরতে হয়, না হয় ধর্মান্তরিত হতে হয়। এই খণ্ডিত
বঙ্গে এখনও মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ৩০। এই সংখ্যা একান্নতে পৌঁছলেই মার্ক্সবাদ, গান্ধীবাদ, মমতাবাদ, অহিংসার বাণী, সর্বধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা, ভজন, কীর্তন, মালা, টিকি, মহোৎসব, ভোগ-আরতি সব
শেষ হয়ে যাবে। সব ধর্ম সমান, খেটে খাওয়া মানুষের জাত নেই, হিন্দু মুসলিম ঐক্য চাই, এ দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ, এখানে শুধু হিন্দুদের কথা বলছেন কেনো ?- এসব বলার জন্য তখন আর কেউ থাকবে না।
পূর্ববঙ্গে এই দিব্যজ্ঞান যুক্ত কথা আর কেউ বলে না, বলতে পারে না। ঢাকার রমনার বিখ্যাত কালীবাড়িটা যখন কামান
দেগে চূর্ণ করে ট্যাংক দিয়ে সমান করা হলো, তখন কেউ একটা কথা বলে নি। এগুলো ফলিত সত্য। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে
বাংলাদেশে যখন হাজার হাজার মন্দির ধ্বংস করা হলো, তখনও কেউ একটা কথা বলে নি। এই বাস্তব সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আজ সকলকে
ধর্মের কথা, রাজনীতির কথা, ব্যক্তিজীবনের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে
হবে।
হিন্দু সংগঠিত, শক্তিশালী এবং সংখ্যাগুরু না থাকলে শুধু তার ধর্মই
লাঞ্ছিত হয় না, তার জীবন
সম্পত্তিও নিরাপদ থাকে না। এ শুধু পূর্ববঙ্গ বা পাকিস্তানের ইতিহাস নয়। এ এক হাজার
বছরের ইতিহাস। গত হাজার বছর ধরে হিন্দুর দেব-দেবী যেভাবে লাঞ্ছিত অপবিত্র হয়েছে, তাতে দেবতাদের মর্যাদা বাড়ে নি। বহু
মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাদের
দেব-দেবীর মহিমা কি শুধু পুঁথিপত্রে,
কথাবার্তায় ? কথাটা মিথ্যে
নয়। এদেশে আগে জনসংখ্যা ছিলো ত্রিশ কোটি,
দেব-দেবীর সংখ্যা ছিলো তেত্রিশ কোটি। অর্থাৎ একটা দেবতা একটা মানুষের
কল্যান করলেও আমরা তিন কোটি দেবতাকে বিদেশে মানুষের কল্যানের জন্য রপ্তানী করতে
পারতাম। তাহলে এদেশে এত রোগ, শোক, দারিদ্র, অশিক্ষা, ভণ্ডামী, দুর্নীতি, স্বার্থপরতা কেনো ? এদেশে মঠ মন্দিরের সংখ্যা চৌত্রিশ
লক্ষ, সাধু-সন্ন্যাসী, মোহান্ত, পণ্ডিত, পূজারীর সংখ্যা আটান্ন লক্ষ (বর্তমানে আরও বেশি)। এঁদের
দায়িত্ব হিন্দু সমাজকে অভয় দেওয়া, সাহস যোগানো।
অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার, এরাই ভীত
সন্ত্রস্ত্র মাত্র কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি মৌলভী আর পাদ্রীর সামনে। কেনো ? কোথাও নিশ্চয় ফাঁকি আছে। আসলে জাত
হিসেবে আমরা অত্যন্ত স্বার্থপর, ফাঁকিটা
সেখানেই। সাধু-সন্ন্যাসী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত, পুরোহিত, যা ই হোন না
কেনো, বেশিরভাগ
হিন্দুর জীবন আত্মকেন্দ্রিক। ব্যক্তি ও পরিবারকে কেন্দ্র করেই তার সব চিন্তা ও
কর্ম সীমাবদ্ধ; জীবনী শক্তির সবটুকু এতেই ব্যয়িত।
মানুষের উপর তার বিশ্বাস নেই; সোজাসুজি ঈশ্বর, গুরু ও জ্যোতিষীর উপর নির্ভরশীল।
হিন্দুর জীবন চর্চায় রাষ্ট্র নেই, সমাজ নেই, দেশ নেই। এটাই বৃহৎ ফাঁকি। এই ফাঁকিই সমগ্র
হিন্দু সমাজকে স্ব-বিরোধী ও আত্মবিশ্বাসশুন্য করে দিয়েছে। হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ
করার কাজকে তারা সংকীর্ণ কাজ মনে করে। অথচ তাদের দিন কাটে, জীবন কাটে, ইউনিয়ন-রাজনীতি-গ্রুপিং করে, ছোট ছোট
ক্লাব-জাতপাত-দলাদলি-ভেদবুদ্ধি-ঈর্ষা আর পরচর্চার উত্তেজনায়।
পাড়ায় বন্ধু নেই, প্রতিবেশির সঙ্গে মামলা চলছে, নিজের বাবাকে খেতে দেয় না, অথচ সাঁই বাবার ভজনা করছে। গর্ভধারিণী
মা ভিক্ষে করছে, আর ছেলে তারাপীঠ-ঠনঠনিয়া
কাঁপিয়ে দিচ্ছে মা মা করে। এরাই রাজনীতিতে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের আওয়াজ তুলছে।
দুনিয়ার শ্রমিককে এক করার কথা বলছে। হীন প্রবৃত্তি পরায়ণ ও স্বার্থপর হিন্দু, ভগবানকে পর্যন্ত নির্বোধ ভাবতে শুরু
করেছে। তাই সকলকে বঞ্চিত করে, জপে-তপে-কীর্তনে-পূজায়
ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাইছে। স্ব-বিরোধী মানুষের দিব্যজ্ঞান থাকে, কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। ভণ্ডামী করে
তাদের বেঁচে থাকতে হয়। স্ব-বিরোধী জাতের পায়ের তলায় মাটি থাকে না। আমাদের ধর্ম
রাজনীতি সবকিছু একটা অবাস্তব ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। তাই হিন্দুদের ইতিহাসের বেশির
ভাগই দাঁড়িয়ে মার খাওয়ার ইতিহাস।
গৌরাঙ্গদেব বলে গেলেন, "ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর" এ যুগের মহামন্ত্র। আমরা
পাগলের মতো নাম গানে মেতে গেলাম। তিনি যে বললেন, "সঙ্গশক্তি কলৌযুগে" অর্থাৎ কলিযুগে সংঘবদ্ধ শক্তি
ছাড়া বাঁচা যাবে না। সে কথাটা আমরা বেমালুম ভুলে গেলাম। আমাদের এমন একটা দেবতা নেই, যার হাতে অস্ত্র নেই। অথচ যে কোনো
হিন্দু বাড়িতে গেলে দেখা যাবে, এক দঙ্গল ঠাকুর
দেবতা আছে, কিন্তু একটা
লাঠিও নেই।
বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের
কাছে দারিদ্ররা সারা বছর উপেক্ষিত, শুধু বন্যায়
-দুর্যোগে দরিদ্ররা নারায়ন হয়। ভালো কথা, কিন্তু বিবেকানন্দ যে বলে গেলেন, সমাজকে সংগঠিত করা দরকার। আগামী
পঞ্চাশ বছর তোমাদের আরাধ্য দেবী হোক- ভারত জননী অর্থাৎ রাষ্ট্র সাধনা। সে কথা
সযত্নে বাদ দিলাম। মূল গাছটায় জল না দিয়ে আমরা শুধু ডালপালার সেবাযত্ন করে চলেছি।
ফলে গাছটা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। জাত বাঁচলে, রাষ্ট্র বাঁচলে আমরা সবাই বাঁচবো। সকল
চিন্তাশীল মানুষের ভাবনাচিন্তাগুলো এই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে করা দরকার।
ভারত বর্ষে তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন - ইতিহাসসম্মত, বুদ্ধিগ্রাহ্য ও কাণ্ডজ্ঞানযুক্তভাবে
হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করা; অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, প্রাদেশিকতা থেকে মুক্ত করে
হিন্দুদেরকে একটি বিশাল শক্তিতে পরিণত করা। রাজনীতি যাদের ব্যবসা, তাদের জন্যও এটা দরকার; কেননা, হিন্দু সমাজ না থাকলে তাদের ব্যবসা অচল হয়ে যাবে।
কোনো অসাম্পদ্রায়িক দলও মুসলমান এলাকায় হিন্দু প্রার্থী
দাঁড় করাতে সাহস পায় না। মুসলমানদের মধ্যে যারা দেশপ্রেমিক, উদারপন্থী আছেন, তাদের জন্যও হিন্দু সমাজের সংগঠিত
থাকা দরকার। এম.সি চাগলার মতো শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির, মুসলমান সমাজে কোনো স্থান ছিলো না। ইরানে কিংবা
পাকিস্তানে থাকলে তাকে হত্যা করা হতো। হিন্দু সমাজ তাকে সম্মান দিয়েছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী
নূরজাহানকে হিন্দুরা শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় আপন করে নিলো। "অথচ সুর আমার কাছে
প্রার্থনা, সঙ্গীত আমার
কাছে ঈশ্বর" বলায় পাকিস্তানে দাবী উঠলো নূরজাহানকে নতুন করে মুসলমান হতে হবে।
দাউদ হায়দার নামে একজন বাংলাদেশী কবি, মুহম্মদের নামে সমালোচনা করায় তাঁর
প্রাণদণ্ডে দাবী উঠেছিলো। তাকে পালিয়ে এসে আত্মরক্ষা করতে হয় ভারতে। ভারত মুসলিম
রাষ্ট্র হলে, তার মৃত্যু
ছিলো অবধারিত ।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে যে কোনো সময় মুসলমান
মূখ্যমন্ত্রী হতে পারে। যেমন বিহারে আব্দুল গফুর, মহারাষ্ট্রে আন্তুলে, রাজস্থানে বরকত উল্লাহ, আসামে আনোয়ারা তৈমুর। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরে একজন
হিন্দু মূখ্যমন্ত্রী হবেন, কেউ কি ভাবতে
পারেন ? পারেন না। অতএব
যা কিছু কল্যানকর এবং শুভংকর, তাকে রক্ষার
জন্য হিন্দু সমাজকে জীবিত রাখতে হবে।
যারা হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করতে চাইছে, তাদেরকে সর্বতোভাবে সাহায্য করুন, সহযোগিতা করুন। আর্য সমাজ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সর্বশক্তি
দিয়ে হিন্দু জাতিকে ঐকবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে এদের গতি বৃদ্ধি
করুন। নিজে কপট উদার সেজে, এদেরকে
সাম্প্রদায়িক বলে আত্মহত্যার পথকে প্রশস্ত করবেন না। একটু কাণ্ডজ্ঞান দেখান।
আমাদের দিব্যজ্ঞানের ফলে অর্ধেক ভারত আজ পাকিস্তান। পাকিস্তান বাংলাদেশ ও ভারতে ২৫
কোটি মুসলমান (১৯৮০) এক কোটি খ্রিষ্টান। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ খুব অল্প সময়ে আট লক্ষেরও বেশি
খ্রিষ্টান ও মুসলমানকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে এনেছে। আরও আনবে। ইসকন ও কাজ করছে।
ইসকনের বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। যে কাজ আমাদের করা উচিত ছিলো, ওরা সেটা করে দিচ্ছে। নিজের নীচতা
দিয়ে ওদের বিচার করবেন না।
দেশদ্রোহিতার অপরাধে মাইকেল স্কট, ফাদার ফেরারকে ভারত থেকে
বিতাড়িত করা হয়েছিলো। ফাদার ডি. সুজাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিলো। বিদেশি এজেন্ট
খ্রিষ্টান ফাদাররাই। ইসকন বিদেশি এজেন্ট হলে সারা পৃথিবী জুড়ে মন্দির করতো না, এত কৃচ্ছ সাধন ও করতো না। অন্যদিকে
বিহার-শরীফে, মোরাদাবাদে-
মর্টার, বন্দুক তৈরির
কারখানা পাওয়া গেলো মুসলমান পাড়ায়। লক্ষ্ণৌয়ের মসজিদে পাওয়া গেলো পনেরো হাজার তাজা
বোমা। ধানবাদের মুসলিম হোটেল থেকে পাওয়া গেলো বাক্স বাক্স জোরালো ডিনামাইট। টন টন
আরডিএক্স বিস্ফোরক আছে মুসলিম মাফিয়াদের হাতে। ধর্ম প্রচারের নামে খ্রিষ্টান ও
মুসলমানদের খোলাখুলি রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ অচলায়তন হিন্দু সমাজের টনক নড়িয়ে
দিয়েছে। তার লক্ষণ ফুটে উঠেছে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে। এমনকি রাজনৈতিক
ক্ষেত্রেও।তাই বিপুল শক্তি নিয়ে হিন্দু সমাজের জাগরণ ঘটছে।
হিন্দুর শক্তি বৃদ্ধিতে, রাষ্ট্রদ্রোহী ছাড়া কারও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
হিন্দু কারো মসজিদ ভেঙেছে, গীর্জা
ভেঙ্গেছে-ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্তও নেই। কিন্তু আজও একটি হিন্দু নারী, মুসলমানদের দ্বারা অপহৃত হলে, হিন্দু মন্দির মুসলমান কর্তৃক ধ্বংস
হলে, কোনো মুসলমান
তার প্রতিবাদ করে না, নীরবে সমর্থন
করে। এগুলো বিদ্বেষ সৃষ্টির কথা নয়,
বাস্তব অবস্থার কথা, হিন্দুর বাঁচার
কথা।
সারাদেশে আইন সকলের জন্য সমান হয়, কিন্তু এখানে (ভারতে) মুসলমানদের জন্য
বিবাহ আইন পৃথক। হিন্দু বিবাহ করবে একটি, পরিবার পরিকল্পনা করে সন্তান নেবে দুটি; তাদের শ্লোগান হলো আমরা দুই, আমাদের হবে দুই। আর একজন মুসলমান বিয়ে
করবে চারটি, পরিবার
পরিকল্পনা করবে না; তাদের শ্লোগান
হলো আমরা পাঁচ, আমাদের হবে
পঁচিশ। এই ব্যবস্থা পাশাপাশি চললে, ভারত মুসলিম
রাষ্ট্র হতে আর কতদিন ?
শুধু কি এখানেই শেষ ? যে মুসলমানের কাছে বিবাহের কোনো পবিত্রতা নেই, স্থায়িত্ব নেই। আজ বিয়ে করে, কাল তালাক দিয়ে পরশু নিকা করতে পারে।
তিনি বিবাহ করতে পারবেন চারটি। আর যে হিন্দু বিশেষ কারণ না ঘটলে কিছুতেই দ্বিতীয়
বিবাহ করবে না, নিয়ন্ত্রন আনা
হলো তার জন্য! এই সেক্যুলারিজমের আরও মহিমা আছে। হিন্দু দুটি বিয়ে করলে তাকে গ্রেফতার করতে
পারবে ৩ টি স্ত্রীর মালিক মুসলিম পুলিশ অফিসার। তাকে বিচার করে সাজা দিতে পারবে ৪
টি স্ত্রীর মালিক মুসলমান বিচারপতি। সাজাটি কী ? সাত বছরের কারাদণ্ড। জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস না
হওয়ার কারণ- নেতা, সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবীদের কল্যানে জনগনকেও ক্রমশঃ
কাণ্ডজ্ঞান শুন্য করে ফেলা সম্ভব হয়েছে। এদেশের সব দলের নেতারাই দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন
নয়তো আরবের অর্থপুষ্ট হয়ে কাণ্ডজ্ঞান বিবর্জিত।
এখন তো প্রমানিত, বিজেপি ছাড়া সব দল- দাউদ, মেনন, রশিদের এজেন্ট।
তাই প্ল্যান করে তারা দেশটাকে মুসলমান করে দিতে চাইছে। যারা এই সত্য কথাগুলো
জনসমক্ষে বলছে, আররেব এজেন্টরা
তাদেরকেই সাম্প্রদায়িক বলছে। এই দ্বিমুখী চক্রান্তের প্রতিবাদ করে দেশকে বাঁচাবে
কে ?
-হিন্দুর
সংঘবদ্ধ শক্তি।
পাকিস্তান,
বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক বিবি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, এখানে হবে না কেনো ? কাণ্ডজ্ঞানহীন নেতৃত্ব রয়েছে বলে ? নেতারা নৈবেদ্যর উপর মণ্ডার মতো। আমরা
হচ্ছি নৈবদ্যর চাল। হিন্দু সমাজ গা ঝাড়া দিলেই, এই স্বার্থপর হিন্দুবিরোধী মণ্ডারূপী নেতারা অদৃশ্য হয়ে
যাবে। পরিবার পরিকল্পনা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করার এবং হিন্দু কোড বিল তুলে
দেবার জন্য সকলে রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ দিন।
নেতারা হিন্দু সেন্টিমেন্টের কোনো পরোয়াই করে না। তারা
জানে হিন্দুরা অসংগঠিত আত্মবিস্মৃত। হিন্দুদের অপমান করে, তাদের স্বার্থক্ষুণ্ন করে বহাল তবিয়তে
নেতাগিরি করা যায়। তাই শুধু
মুসলমানকে তুষ্ট করে, তোষণ করে, হিন্দু কোড বিল চালু রাখে। গো হত্যার
পক্ষে কথা বলে, শাহবানু মামলার
রায় পাল্টে দেয়। রামের মন্দির ভেঙ্গে বাবরের তৈরি মসজিদ বিলুপ্ত হলে সবাই বৎস হারা
গাভীর মতো হয়ে যায়। হিন্দুর উপর প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠে। রামচন্দ্রকে কাল্পনিক
বলে উড়িয়ে দিয়ে- ঐতিহাসিক চরিত্র বলে বাবরকে বেশি মর্যাদা দেবার চেষ্টা করে। এরাই
বাংলাদেশ থেকে, হিন্দু শরণার্থী
আত্মরক্ষা করার জন্য ভারতে এলে পুশব্যাক করে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করে, ভারতে থাকতে দিতে চায় না। অথচ
অনুপ্রবেশকারীরা মুসলমান হলে, একটি কথাও বলে
না। বাংলাদেশ থেকে এক কোটি মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করেছে। একথা বলেছে, ঢাকার সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা।
মেটিয়া বুরুজ, পার্ক সার্কাস, মুর্শিদাবাদে এরা কাতারে কাতারে
ঢুকেছে। শুধু কলকাতায় চার লক্ষ (১৯৮০,
বর্তমানে নিশ্চিতভাবে এর কয়েক গুণ)) বিদেশী মুসলমানের হিসেব আছে সরকারের
খাতায়। ধর্মতলায় ব্যাগ
বিক্রেতাদের কিংবা হাওড়ার সাবওয়ের আশে পাশে তাকালেই এদের দেখা যায়। প্রত্যেকটি
রাজনৈতিক দল এদের প্রশ্রয় দাতা। সিপিএম রেশন কার্ড করে দিচ্ছে তো কংগ্রেস ভোটার
লিস্টে নাম তুলে দিচ্ছে। শুধু লক্ষ্য সামনের নির্বাচন।
কলকাতায় হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে জ্যোতি বসু সব হিন্দু
হকারদের তুলে দিয়েছিলো। বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমানদের তুলতে পারলো না। তাদের পিছনে
এসে দাঁড়ালো মিঞা কলিমুদ্দিন। তখনকার ডেপুটি স্পিকার- মুসলিম কনফারেন্সের সভাপতি-
প্রত্যেকটি মিটিং এ গিয়ে বললো, আমরা আগে
মুসলমান, পরে ভারতীয়। এই
কথার প্রতিবাদ করতে পারে, কোনো দলে এমন
নেতা নেই।
সুতরাং আজ গভীরভাবে ভাবতে হবে, কাদের হাতে আমরা আমাদের সামজের
ভবিষ্যৎ তুলে দিয়েছি। ভাবতে, বুঝতে এবং সঠিক
সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হলে
অনুশোচনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
ধর্মজ্ঞানী,
রাজনৈতিক নেতাদের মতো, সাহিত্য
সাংবাদিকতার জগৎটাও আজ নিয়ন্ত্রণ করছে,
দিব্যজ্ঞানী ও স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী মহল। এদেশের ধর্ম সংস্কৃতি ও
হিন্দুত্বকে আঘাত করাই এদের লক্ষ্য। হিন্দু সমাজের সর্বনাশ করে এরা মানবতাবাদী
সাজতে চায়। দেশের ছদ্ম বুদ্ধিজীবীরা যুক্তিহীন অর্থহীন প্রবন্ধ লিখে সংবাদপত্রে, হিন্দু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে-হিন্দু
সংগঠনের বিরুদ্ধে। আহাম্মকের মতো লেখে,
হিন্দুরা হিন্দু রাষ্ট্র চাইলে,
শিখ ও বৌদ্ধরাও পৃথক রাষ্ট্র
চাইবে, মুসলমানেরা
আলাদা রাষ্ট্র চাইবে। এই হতভাগ্যেরা ভারতের সংবিধান একবার খুলে দেখে না। যাতে লেখা
আছে- শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এরা হিন্দু সামজের অন্তর্গত। এরা
স্মৃতিভংশ অথবা শয়তান। নইলে এদের মনে পড়তো, শতকরা ২৩ ভাগ মুসলমানের জন্য ৩০ ভাগ জমি দিয়ে এরা
পাকিস্তান তৈরি করে দিয়েছে। তারপরেও মুসলমানরা কয়েক কোটি হিন্দুকে পাকিস্তান
বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু জমি দেয়
নি।
এদেশের কিম্ভূতকিমাকার রাজনৈতিক নেতারা এবং অপদার্থ
বুদ্ধিজীবীরা বড়ই বিচিত্র। এরা
হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা ১০ লক্ষ প্যালেস্টাইনী মুসলমান উদ্বাস্তুদের জমি দেবার জন্য
সহানুভূতি দেখাতে পারে। সরকার আর্থিক সাহায্য দিতে পারে। নির্জোট সম্মেলনের
নেতারূপে তাদের জন্য বিশ্ব জনমত তৈরি করতে পারে। পারে না, শুধু অন্যায়ভাবে পাকিস্তান বাংলাদেশ
থেকে তাড়িয়ে দেওয়া কয়েক কোটি
হিন্দুর জন্য ন্যায়ত আইনত প্রাপ্য জমি চাইতে।
বঙ্গসেনা,
বিএলও - বাংলাদেশের আটটি জেলা নিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমির দাবী করছে। তার জন্য
প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করছে। জনমত এই দাবীর পেছনে সংহত হলেও, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি হিন্দু এই
আন্দোলনে আশার আলো দেখলেও, ভারতের
সংবাদপত্র নির্বাক। নেতারা, পণ্ডিতেরা বলতে
পারছেন না- এ দাবী ন্যায্য, আইনসঙ্গত এবং
মানবিক দাবী। অনেক আগেই এই দাবী উচ্চারিত হওয়া উচিত ছিলো। রাজনৈতিক নেতারা এবং
বুদ্ধিজীবীরা এসব ভাবতে পারেন না; রুগ্ন, পারজিত দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তারা ভাবেন, এসব বললে ভারতের মুসলমানরা আবার যদি
রাষ্ট্র চায়! এরা ভুলে যান যে, মুসলমানরা দেশ
ভাগ করে তাদের রাষ্ট্র বুঝে নিয়েছে। যতটা জমি পাওয়া উচিত তার চেয়ে বেশি জমি
নিয়েছে। অতএব মুসলমানেরা আবার রাষ্ট্র চাইলে, তাদেরকে সীমান্ত পার করে দিতে হবে; এটা হচ্ছে যুক্তি এবং ইতিহাসের
শিক্ষা।
কাণ্ডজ্ঞানহীন পণ্ডিত বুদ্ধিজীবীরা এ শিক্ষা নেয় না।
তারা গোটা দেশকে বিভ্রান্ত করে সর্বনাশকে আড়াল করতে চায়, হিন্দু বিরোধিতায় উৎসাহ প্রদান করে।
কোরান না পড়ে, ইসলামকে না
জেনে, অকারণে তার
প্রশংসা করে। কোরানে ঠিক
কী লেখা আছে, তা নিয়ে কোনো
বিদগ্ধ লেখক কোনোদিনও আলোচনা করে না। কেনো করে না ? এরা সকলেই দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন ব'লে।
আনন্দবাজার,
আজকাল পত্রিকা অকারণে গরু খাওয়ার পক্ষে ওকালতি করে। বিপক্ষে চিঠি লিখলে
ছাপে না। গল্প উপন্যাস প্রবন্ধে হিন্দুদের ছোট করে দেখানো এদের ফ্যাশন। প্রগতিশীল
হওয়ার তীব্র ইচ্ছা এদের বুদ্ধিকে বিকৃত ও নাশ করে দিয়েছে।
এরা জানে ইসলামে গরু কাটার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, কোরানের জন্মভূমিতে কোনো গরু নেই। অথচ
এটা গোপালের দেশ। গরুর প্রতি মানুষের প্রচণ্ড শ্রদ্ধা। গরু কাটলে শতকরা ৮৫ জন
মানুষের প্রাণে লাগে। মাহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, স্বাধীনতা প্রাপ্তির চেয়ে গো হত্যা বন্ধের প্রশ্নকে আমি
বেশি জরুরী মনে করি। নেতাজী, ঐক্যের জন্য
আজাদ হিন্দ ফৌজে গরু খাওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের ডাক্তার কর্নেল চ্যাটার্জি তার
লেখা বইয়ে একথা উল্লেখ করেছেন। সংবিধানে গো হত্যা বন্ধের নির্দেশ আছে। সুপ্রিম
কোর্টের ফুল বেঞ্চ গো হত্যা নিষেধের পক্ষে রায় দিয়েছে। কোলকাতা হাইকোর্ট গো হত্যা
বন্ধের রায় দিয়েছে। বিনোবা ভাবে, গো হত্যা বন্ধ
করার জন্য আমরণ অনশন করে নিজের প্রাণটাই দিয়ে দিলেন। তবু গো হত্যা বন্ধ হলো না।
পবিত্র সংবিধান, মহামান্য
সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, অধিকাংশ মানুষের শ্রদ্ধাকেন্দ্র-
সবকিছুকে অপমান করে পার পাওয়া যায়, কারণ হিন্দু
সমাজ অসংগঠিত।
অপরপক্ষে,
মুসলমানরা সংগঠিত, তাই তাদের
অন্যায় ইচ্ছাকেও বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন করতে চায়। সহস্র যুক্তি থাকলেও এদেশের কোনো
লেখক, শুয়োর খাবার জন্য কলম
ধরতে পারে না। যাত্রায়, নাটকে, সিনেমায় সর্বত্র হিন্দুদের
শ্রদ্ধারকেন্দ্রগুলোকে লাঞ্ছিত করা হয়। হিন্দু মুসলমানের মিলন দেখাতে হিন্দুর
মেয়েকে মুসলমান নিয়ে যাবেই। সিনেমার নায়ক-নায়িকা বিপদে পড়লে শুধু আশ্রয় পায় মসজিদ
কিংবা গীর্জায়। হিন্দু ব্রাহ্মণ, পণ্ডিত, সন্ন্যাসীদের দেখানো হচ্ছে খল চরিত্র রূপে।
তাদের কমণ্ডুলে মদ, ঝুলিতে গাঁজা, তারা চোরাচালানদার বদমাইশ। আর ফাদার
এবং মৌলভীরা স্নেহ ক্ষমার প্রতিমূর্তি। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ সিনেমায় মুসলমান ও খ্রিষ্টান চরিত্রের মুখে
ডায়লগ থাকে তাদের
ধর্মের পক্ষে। বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেখানো হয় আল্লার মহিমা, যীশুর মাহাত্ম্য। যেকোনো মুসলিম
চরিত্র নাটকের প্রয়োজনে মারা গেলে ভেসে আসবে আজানের করুন সুর, পর্দায় ফুটে উঠবে মক্কার কাবা, লক্ষ লক্ষ মুসলমান সেখানে নামাজ পড়ছে।
আরো আশ্চর্যের ব্যাপার, জার্মান নাট্যকার ব্রেখটশের নাটক বাংলায় অনুবাদ করতে
গিয়ে তার মধ্যে ক্লাউনের মতো আমদানী করা হচ্ছে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরকে।
সফোক্লিসের নাটক, ইবসেনের নাটক
বাংলা করতে গিয়ে লেখক-পরিচালকরা অকারণে আঘাত করছে হিন্দু সংস্কৃতিকে। গীতিকাররা
কৃষ্ণকে নিয়ে, গৌরাঙ্গকে নিয়ে
অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ গান রচনা করছে, গাইছে। বিচিত্র
এদেশের হিন্দুরা । এসবে এদের কোনো কষ্ট হয় না। কোনো ভক্তের প্রাণে এসব লাগে না।
ভিখারীর বৈরাগ্য, নপুংসকের
ব্রহ্মচর্য আর শক্তিহীনের ভক্তি এরকমই হয়; চ্যাংড়া নাট্যকার, ফক্কড় সাংবাদিকরাও তাদের পরোয়া করে না।
এদেশের সাংবাদিককূল, হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রয়োজনে কোথাও দাঙ্গা হলে লিখে, দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ, দাঙ্গা যাতে না ছড়ায় এই বৃহত্তর
স্বার্থে সত্য গোপন করা হয়। ভালো কথা,
কিন্তু হিন্দুদের দুটি সম্পদ্রায়ের মধ্যে একটু কিছু হলে বিরাট হেডলাইন আসে, "হরিজনদের প্রতি
বর্ণহিন্দুদের নারকীয় অত্যাচার",
এমন কেন লেখা হয় ?
কারণ, অধিকাংশ
সাংবাদিক হিন্দুত্ব বিরোধী দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন। তারা চায় না, হিন্দু সমাজ ঐক্যবদ্ধ হোক, শক্তিশালী হোক। মালদহের সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গার সময় লেখা হলো, ঘোষেদের সঙ্গে
মুসলমানদের দাঙ্গা; ঘোষেরা যেন
হিন্দু নয়। হিন্দু সংহতি নষ্টকারী এই সব প্রাণীগুলো আসামের ঘটনা সব জেনেও স্পষ্ট
করে বলতে পারলেন না, আসাম আন্দোলনের
প্রকৃত চরিত্রটি কী ছিলো ? বিভিন্ন ঘটনা, আন্দোলন বহির্ভূত বিষয় নিয়ে সাতকাহন
পাঁচালি গেয়ে প্রমাণ করতে চাইলেন, এবারেও সেই
আগের মতোই বাঙালি বিতাড়ন আন্দোলন। এর আগেও এই সাংবাদিকরা শুধুই বিভ্রান্তি সৃষ্টি
করেছে।
বাঙালি বাঙালি করে এরা অস্থির হয়ে যায়, কিন্তু আসাম থেকে কোনোদিন বাঙালি
মুসলমান বিতাড়িত হয় নি কেনো ? বাঙালি মানে কি
শুধু হিন্দু বাঙালি ? পূর্ব বাংলার
তো সবাই বাঙালি। দফায় দফায় যারা বিতাড়িত হয়েছে, তারা শুধু হিন্দুই কেনো ? এই সোজা কথার জবাব এদের কাছে নেই। বাঙালিদের জন্য যাদের
বেশি দরদ, যারা বাঙালির
স্বার্থ রক্ষায় "বাঙালিস্তান" গড়তে চায়, সেই "আমরা বাঙালি" সংগঠনও এই প্রশ্নে নীরব।
বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দুদের জন্য এরা একটা কথাও বলে না। এবারও এরা সব সময়
চেয়েছেন, আসামের
আন্দোলনকে লঘু করে দেখাতে। এত দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে আর
কখনো হয় নি। সারা দেশের উর্দু পত্রিকাগুলোর আর্তনাদ শুনলেই বোঝা যাবে এই আন্দোলনের
লক্ষ্য। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য, বাংলাদেশ থেকে
আগত অনুপ্রবেশকারী
মুসলমানদের বিতাড়ন। হিন্দুদের বিতাড়ন নয়।
হিন্দু পৃথিবীর যেখান থেকেই আসুক, এখানে সে বিদেশি নয়, অনুপ্রবেশকারী নয়, এমনকি শরণার্থীও নয়, এদেশ তার মাতৃভূমি। অসমীয়া হিন্দুরা
একথা বুঝেছে, কিন্তু তাদের
আরো সক্রিয় হতে হবে। আসামে উনপঞ্চাশ লক্ষ (১৯৮০ এর হিসাব) বাংলাদেশি মুসলমানের
অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই অনুপ্রবেশ বন্ধ করতেই হবে। বন্ধ না করতে পারলে, আসামের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে
যাবে। আসাম হবে আর একটা পাঞ্জাব কিংবা কাশ্মির। আসামের তরুণরা এ ব্যাপারে সতর্ক
হচ্ছে, উপযুক্ত
ব্যবস্থা নিচ্ছে, এটাই আশার কথা।
কিন্তু হিতেশ্বর সাইকিয়া, প্রফুল্ল
মহান্তীর সরকার, সবটাই উল্টে
দিচ্ছে।
পাঞ্জাব আজ অগ্নিগর্ভ। সেখানে তৈরি হয়েছে শিখ মুসলিম
সুহৃৎ সমিতি। এর পেছনে আছে পাকিস্তান এবং এখানকার মুসলমানদের একটি অংশ। হিন্দু
সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে শিখেরা কখনোই এত নিষ্ঠুর নৃশংস হতে পারে না। তিনশো
বছরের শিখ ইতিহাসে এরকম নজিরও নেই। নির্মম হিন্দু হত্যায় তাই ফুটে উঠেছে, পরিচিত ইসলামিক বর্বরতা। এই বাস্তব
অবস্থার ভয়ংকরত্ব এবং সমস্যা সমাধানের কথা কেউ বলতে পারছে না। ঔদার্য নিয়ে, দিব্যজ্ঞান নিয়ে, মিথ্যের চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে - বিশ্বের
সর্বাপেক্ষা নিরীহ, উদার পরমত
সহিষ্ণু, মনুষ্যগোষ্ঠী
হিন্দু সমাজ আজ - নিজের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছে ; যারা শুধু সর্ব মানবে নয়, পশুপক্ষী, কীটপতঙ্গ এমনকি প্রতিটি
ধুলিকণায় ঈশ্বরকে কল্পনা করেছে। মানবাত্মার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটেছে যাদের
ধর্ম-দর্শনে। সেই হীরন্ময় ঐতিহ্যের ধারক হিন্দুসমাজ আজ বিপন্ন। তথ্য-প্রমান
যুক্তির আলোয় এই কঠিন সত্য আজ নগ্নভাবে প্রকটিত। যতদূর সম্ভব, ঐক্যবদ্ধ সংগঠিত করে হিন্দুত্বকে
বাঁচানো আজকের হিন্দুদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
যে যাই বলুন,
ভারতবর্ষের জাতীয় জীবনের মূল ধারা মানে হিন্দু ধারা। হরিদ্বার থেকে কোলকাতা
পর্যন্ত পৌঁছাতে গিয়ে গঙ্গায় অনেক নদী এবং নর্দমার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাতে গঙ্গার
স্বকীয়তা, পবিত্রতা নষ্ট
হয় নি। গঙ্গা, গঙ্গাই রয়ে
গেছে। হিন্দুও তাই। শক্তির অভাব আমাদের নেই। আছে আত্মিক শক্তি এবং সংখ্যার শক্তি।
শুধু নেই আত্মবিশ্বাস এবং সংগঠনের শক্তি। ফলে হিন্দু সমাজের অবস্থা এখন অনেকটা উট
পাখির মতো। উটপাখি দৌড়াতে পারে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৪৫ মাইল। লাথি মেরে ছিটকে ফেলে দিতে
পারে একটা তাজা ঘোড়াকে, পায়ে তার এত
জোর। কিন্তু আত্মবিশ্বাস না থাকার ফলে বিপদ দেখলে প্রত্যেকটা উট পাখি কী করে ? চোখ দুটো বন্ধ করে ঠোঁটটা বালিতে
গুঁজে দেয়। ভাবে, বিপদ এড়িয়ে
গেলাম, তখন তাকে ছিঁড়ে
ছিঁড়ে খায় কুকুর আর রুগ্ন শেয়ালের দল;
যারা তার একটা পদাঘাতেরও যোগ্য নয়। এ অবস্থা চলতে পারে না, এ সহ্যের অতীত। হিন্দু সমাজ সংগঠিত
হচ্ছে, জাগ্রত হচ্ছে।
হতেই হবে। কারণ, লক্ষ লক্ষ
বছরের ঐতিহ্যসম্পন্ন পৃথিবীর সবচেয়ে সৎ শুভ্র এবং পবিত্র জীবনদর্শনের উজ্জ্বল
উত্তরসূরী হিন্দু জাতির ভবিষ্যৎ, আমরা কিছু
কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনীতিক, বালখিল্য
বুদ্বিজীবী অথবা ভন্ড ধার্মিকের হাতে ছেড়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি না। কারণ, এটা হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষার
প্রশ্ন।
যদি না পারি ? ভবিষ্যতে হয়তো কিছু স্পেসিমেন মনুষ্য আমরা চিড়িয়াখানায়
দেখতে পাবো। বাধ্যতামূলক ধর্মান্তরিত অহিন্দু পিতারা, তাদের বালক পুত্রদের হাত ধরে বলবে, এই দ্যাখ, অতীতে এই দেশে এক ধরণের প্রাণী ছিলো, এর সংখ্যায় ছিলো প্রচুর, শক্তিও ছিলো যথেষ্ট; এদের নাম ছিলো হিন্দু। এদের বেদ ছিলো, বেদান্ত ছিলো, গীতা উপনিষদ ছিলো, মার্ক্সবাদ, গান্ধীবাদ সবই ছিলো; কিন্তু বাস্তববুদ্ধি ছিলো না। তাদের
ব্রহ্মজ্ঞান ছিলো, দিব্যজ্ঞান
ছিলো, শুধু
কাণ্ডজ্ঞান ছিলো না। তাই তারা এখন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দু চারটি প্রাণী
মাত্র এখন দেখা যায়। তাই দ্রষ্টব্য বস্তু বলে চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছে। মারা গেলে
এখান থেকে নিয়ে গিয়ে আরক মাখিয়ে যাদুঘরে রাখা হবে।
দীর্ঘদিনের কলংক কালিমা, বাবরি মসজিদ হিন্দুরা ধুলিসাৎ করে দিয়েছে, ফলে বিশাল হিন্দু সমাজে আত্মবিশ্বাস
এসেছে।
দুর্নীতি দূষিত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির
অভ্যুত্থান জাতীয় জীবনে অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
আর্য সমাজ,
ভারত সেবাশ্রম সংঘ, বিশ্ব হিন্দু
পরিষদের চেষ্টায় এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ লাখ মুসলমান এবং পাঁচ লাখ খ্রিষ্টান
হিন্দু সমাজে ফিরে এসেছে।
মীরাটের ঈমাম সৈয়দ মেহবুব আলী, মাদ্রাজের ঈমাম শেখ আমীর মুহম্মদের
মতো শতাধিক ইসলামিক পণ্ডিত হিন্দু ধর্ম গ্রহন করে হিন্দু ধর্মের প্রচার করে
বেড়াচ্ছেন।
খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচারক, এ্যাণ্ডারসন মাউরি হিপসন রায়, উত্তর পূর্বাঞ্চলে হিন্দু
ধর্ম-সংস্কৃতির প্রসারে ব্যস্ত রয়েছেন।
প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল- দাউদ ইব্রাহিম, রশিদ খানের এজেন্ট প্রমানিত হয়ে
যাওয়ায় তারা সবাই এক হয়ে হিন্দু সমাজ এবং ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণা করেছে।
সমুদ্র থেকে হিমালয়, ভারতবর্ষের সর্বত্র, নগরে বন্দরে
গ্রামে গঞ্জে হিন্দু সংগঠন এখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে, ঘুমন্তু সিংহ হাই তুলেছে, আড়মোড়া ভাঙছে, রাষ্ট্রদ্রোহীরা তাই চিন্তিত হয়ে উঠেছে।
হিন্দুর জাগরণের আর দেরী নেই।
জয় হিন্দ।
সমাপ্ত
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন