সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিন্দু বিবাহিতা নারীদের শাঁখা-সিঁদুর-খারু-পলা ব্যবহার করার কারণ :



হিন্দু বিবাহিতা নারীদের শাঁখা-সিঁদুর-খারু-পলা ব্যবহার করার কারণ :



নেট-ফেসবুকে মাঝে মাঝেই দেখি বিভিন্ন জন হিন্দু নারীদের শাঁখা সিঁদুর ব্যবহার করার কারণ সম্পর্কে নানারকম কথা বলছে। এটা বলতে গিয়ে তারা সত্ত্ব, তমঃ, রজঃ প্রভৃতি গুণের সঙ্গে শাঁখা সিঁদুরের সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে এমন একটা জগা খিচুরি পাকিয়ে ফেলছে যে, কী বলছে তার কিছুই উপলব্ধি করা যাচ্ছে না। তারপরও তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই এজন্য যে, তারা বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছে এবং যতটুকু জেনেছে ততটুকুই অন্যকে জানানোর একটা মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে


ব্যাপারে যে কোনো হিন্দু মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেও তাদের এক জবাব, জানি না, তবে স্বামীর মঙ্গলের জন্য পরি। স্বামীর মঙ্গল তো অবশ্যই, তবে তার চেয়ে বেশি নিজের মঙ্গল, পোস্টটা পড়লে ডিটেইলস জানতে পারবেন।


প্রথমেই বলি, জ্যোতিষ শাস্ত্রে আমার কিছু জ্ঞান রয়েছে এবং জ্যোতিষ বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের শাঁখা-সিঁদুর-খারু-পলা ব্যবহার করার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এখানে আরও বলে রাখি জ্যোতিষ বিদ্যা হচ্ছে বেদ এর একটি অংশ এবং একারণেই প্রথমত হিন্দু বিবাহিত মহিলারা ধর্মীয় কারণে শাঁখা সিঁদুর খারু পলা পরিধান করে থাকে। কিন্তু শুধু বিশ্বাসের কারণেই এই পরিধান নয়; এগুলোর ব্যবহারের পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট বাস্তব উপকারিতা, যেগুলো আমি নিচে বর্ণনা করার চেষ্টা করছি:


শাঁখা : জ্যোতিষ শাস্ত্রে মুক্তা হচ্ছে চন্দ্রের প্রতীক। মুক্তা ব্যবহার করলে- মাথা ঠাণ্ডা থাকে, রূপ লাবন্য বৃদ্ধি পায়, মানসিক বিষন্নতা দূর হয়, মেয়েলী রোগ প্রতিরোধ করে - সাদা শাঁখাও এই একই কাজ করে। মূলত মেয়েদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে সুখে সংসারধর্ম পালন করতে শাঁখা মেয়েদেরকে সাহায্য করে। তাই যেসব আল্ট্রা মডার্ন মহিলারা সাদা শাঁখাকে সোনায় মুড়ে পরিধান করেন, তারা শাঁখার উক্ত উপকারগুলো থেকে যে বঞ্চিত হবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে হলে শাঁখাকে তার আসল রূপেই ব্যবহার করতে হবে


সিঁদুর পলা : জ্যোতিষ শাস্ত্রে মঙ্গল গ্রহ হচ্ছে সকল প্রকার দুর্ঘটনার কারণ। তাই মঙ্গলের দশা চললে জীবনে নানারকম দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। যারা বিজ্ঞান পড়েছেন, তারা জানেন যে মঙ্গল গ্রহের রং লাল। তাই অশুভ মঙ্গলের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য জ্যোতিষীগণ লাল রং এর প্রবাল পাথর যা রক্ত প্রবাল নামে পরিচিত তা ব্যবহার করতে বলেন। শুধু লাল রংএর পাথরই নয়, লাল বর্ণের যে কোনো বস্তু বা পোষাক পরিধান করলেও মঙ্গলের এই অশুভ প্রভাব থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়। একারণেই প্রাচীন হিন্দু মনীষীগণ হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের লাল রং এর চুড়ি যা পলা নামে পরিচিত এবং লাল রং এর সিঁদুর ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা সংসার জীবনে অশুভ মঙ্গলের প্রভাবে নানারকম দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করে সাংসারিক জীবনে শান্তিতে থাকতে পারে। এই একই কারণে ভারত উপমহাদেশে মেয়েদের বিয়ের পোষাকের রং লাল; যাতে বিবাহের মতো একটি শুভ অনুষ্ঠানে মঙ্গলের অশুভ প্রভাব না পড়ে এবং দম্পতি একটি শুভ সময়ের মাধ্যমে তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারে। এছাড়াও মহাভারত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস হলো সিঁদুর এবং এর মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে সেই রাসায়নিক উপাদানগুলো ত্বকের ভেতর প্রবাহিত হয়ে রক্তের সাথে মিশে মেয়েদের ঋতুচক্রকালীন যে ক্ষয় তার কিছুটা পূরণে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তপ্রবাল ব্যবহারে মানুষের ধৈর্য, সাহস, মনোবল বৃদ্ধি পায়। চাকুরি স্থলে যোগ্যপদ লাভ হয়, স্বাস্থ্যহানী দুর্ঘটনা থেকে তো রক্ষা করেই। সিঁদুর পলার ব্যবহার, এই বিষয়গুলোতেও সাহায্য করে। আজকাল অনেক মহিলা শাঁখা ব্যবহার করলেও পলা ব্যবহার করে না। তারা নিজের অজ্ঞাতেই যে নিজের ক্ষতি করে চলেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই


খারু : শনির দশায় পড়লে মানুষের যে কি দূরবস্থা হয় তা বোধহয় আর কাউকে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। বিদ্রোহ, ফাটল, ক্ষয়-ক্ষতি, লোকসান, ধ্বংস, দাম্পত্য কলহ, বিচ্ছেদ, দারিদ্রতা, অকারণ শত্রুতাসহ সকল দুঃখ কষ্টের কারণ শনি। শনির দশায় পড়ার আগেই মানুষ যদি নীলা পাথর ব্যবহার শুরু করে তাহলে এই সব ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পায়। কিন্তু কখন শনির দশা শুরু হবে সেটা যেহেতু অভিজ্ঞ জ্যোতিষীগণ ছাড়া কেউ জানে না, তাই প্রায় সকলকেই অশুভ শনির প্রভাবে জীবনে একবার বা দুবার কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এই অশুভ শনিকে কিছুটা শান্ত রাখতে পারে তামা বা লোহা। একারণেই তামা এবং লোহার মিশ্রণে বা শুধু লোহা দিয়ে এক ধরণের চুড়ি তৈরি করা হয় যা খারু নামে পরিচিত। এটা নিয়মিত পরিধান করলে অশুভ শনির কবল থেকে হিন্দু বিবাহিত মহিলারা নিজেদের কিছুটা হলেও রক্ষা করে সাংসারিক শান্তি বজায় রাখতে পারে। অনেকেই হয়তো খেয়াল করে করে থাকবেন জন্মের পর ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতে লোহার চুড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়, এর মূল কারণ কিন্তু শনির ভয় এবং তা থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করা। আজকাল অনেক মহিলাই খারু ব্যবহার করেন না, তারা যে নিজেদের কি পরিমান ঝুঁকির মধ্যে রেখেছেন তা তারা নিজেরা জানলে শিউরে উঠতেন।


শাখা-সিঁদুর খারু ব্যবহার করার বৈজ্ঞানিক কারণ :


রক্তের ৩টি উপাদান - শাঁখায় ক্যালসিয়াম, সিঁদুরে মার্কারি বা পারদ এবং লোহায় আয়রণ আছে। রক্তের এ্ই ৩টি উপাদান মেয়েদের ঋতুস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। তাই এই তিনটি জিনিস নিয়মিত পরিধানে রক্তের সে ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণে সহায়তা করে।


সামাজিক কারণ :


হিন্দু মেয়েরা বিয়ের পর মাথায় সিঁদুর, হাতে শাখা, খারু, পলা এবং ভারতের কোনো কোনো জায়গায় এসবের সাথে গলায় মঙ্গল সূত্র ‌’রে থাকে। থেকে বোঝা যায় যে মেয়েটি বিবাহিতা। ফলে প্রথম দর্শনেই কারো ভালো লেগে গেলেও, অনিচ্ছাকৃত পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা হিন্দু বিবাহিতা নারীদের ক্ষেত্রে খুবই কম এবং এতে বিয়ের পর, পরপুরুষের সাথে হৃদয়ঘটিত ব্যাপারে সাংসারিক জটিলতা যে অনেক কমে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটাই হলো হিন্দু বিবাহিতা মহিলাদের শাঁখা-সিঁদুর পরিধানের বাস্তব কারণ


মোটামুটি এই হলো হিন্দু বিবাহিতা মহিলাদের শাঁখা-সিঁদুর-খারু-পলা ব্যবহারের কারণ। এর ফলে হিন্দু বিবাহিতা মহিলাদের জীবন হয়েছে সুরক্ষিত। তাদের জীবনে নেই কোনো ডিভোর্স বা তালাকের ভয়। এই একই কারণে হিন্দু বিবাহিতা মহিলাদের সাংসারিক জীবনও অন্যান্য ধর্মের মহিলাদের তুলনায় তুলনামূলক বেশি সুখের। এককথায় বলা যায় শাঁখা-সিঁদুর-খারু-পলা একজন হিন্দু বিবাহিতা মহিলার সংসার জীবনের রক্ষা কবচ।

জয় হিন্দ
জয় শ্রীরাম। জয় শ্রীকৃষ্ণ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব ফটো হিসেবে এই প্রবন্ধের সাথে যেটা যুক্ত করেছি , তার জবাব দেওয়া ই আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য। তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক: ফটোপোস্টের শুরুতেই লিখা হয়েছে , “ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই , কোন প্রতিমূর্তি নেই , কোন প্রতিকৃতি নেই , কোন রূপক নেই , কোন ফটোগ্রাফ নেই , তাঁর কোন ভাস্কর্য নেই। ” এর রেফারেন্স হিসেবে লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ , অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ এবং যযুর্বেদ অধ্যায় ৩২ , অনুচ্ছেদ ১৯। ” এবার দেখা যাক , সত্যিই সেখানে কী লিখা আছে এবং তার প্রকৃত অনুবাদটা কী ? রেফারেন্স হিসেবে প্রথম বইয়ের নাম লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ ”, কিন্তু এর নাম প্রকৃতপক্ষে “ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ”, লিখেছে তো কোনো এক মুসলমান , তার কাছ থেকে আপনি আর কত শুদ্ধ বানান আশা করতে পারেন ? রেফারেন্সের বাকি অংশে লিখা হয়েছে- “ অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ ”, অধ্যায় ৪ ঠিক থাকলেও এই উপনিষদে অনুচ্ছেদ বলে কিছু হয় না , এটি হবে আসলে শ্লোক নং ১৯। শুধু এই রেফারেন্সেই নয় , প্রতিটি রেফারেন্সেই দেখবেন কিছু না কিছ...

বেদ এ ‘‘পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত’’- =>এছাড়া মা- ছেলে দূষ্কর্ম, এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?”

“ রিগবেদ ---- অধ্যায় - ৩ , খন্ড - ৩১ , শ্লোক : ১ - ২ ‘‘ পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত ’’- => এছাড়া মা - ছেলে দূষ্কর্ম , এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?” ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছে Md Alhaz Hosain নামের এক মুসলমান আমার এক পোস্টের কমেন্ট বক্সে। বেদ এ্রর এই বাণীতে আসলেই কী বলা হয়েছে , সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন আমার এই পোস্টে : ফেসবুকে মুসলমানদের কমেন্ট মানেই গালাগালি , খিস্তি। এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে , মুসলমানরা যুক্তি বোঝে না। কারণ , যারা যুক্তি বোঝে তারা যুক্তি দিয়ে কথা বলে , প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে তাদের গালি - গালাজের প্রয়োজন হয় না। এজন্য তথ্য রেফারেন্স দিয়ে লেখার পরও যারা সেসবে নজর না দিয়ে গালাগালি করে তাদের কমন্টেকে আমি রাস্তার পাগলা কুত্তার ঘেউ ঘেউ বলেই মনে করি , তাই সেগুলোকে কোনো গুরুত্বই দিই না। কিন্তু আজকে যে কমেন্টটির উত্তর দিচ্ছি , সে বেশ ভদ্রভাবেই কথাগুলো তুলে ধরেছে ; তাই তার লেখার জবাব দিচ্ছি , যদিও পাগলা...

হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় ?

হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? এবং ইসলাম নাকি সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম ! উপরের এই দুটো প্রসঙ্গসহ মুসলমানদের করা আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে জানতে চেয়ে ছিলো Pritam Das নামের আমার এক ফেসবুক বন্ধু। শুরুতেই দেখে নিন সেই প্রসঙ্গগুলো- মুসলমানরা বলে যে , একটা হাতির মুখ মানুষের শরীরে কি করে বসানো যায় ? কী যুক্তি আছে এটার পেছনে ? আর সেইটাকে তোমরা হিন্দুরা আবার পূজাও করো! আবার সেই গনেশের একটা কলা গাছ বউও আছে। তারপর হুনুমান কী করে উড়তে পারে ? কী করে একাই একটা লংকা জ্বালিয়ে দিতে পারে ? এছাড়াও বলে যে ইসলাম নাকি পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম , হিন্দু ধর্ম অনেক পরে এসেছে। পৃথিবী কবে শেষ হবে তা নাকি ওদের কোরানে লেখা আছে। আর মাঝে মধ্যে প্রায় জিজ্ঞেস করে হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? কোনো না কোনো তো একটা বড় দেবতা হয়েই যায়। সবাই তো এক দেবতা পূজা করে না। কেউ কেউ তো আলাদা পূজা করে , তাহলে হিন্দুদের মধ্যে দেবতা নিয়ে একতার অভাব। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি... এবার দেখুন আমার জবাব: মুসলমানরা হিন্দুদেরকে ধর্ম বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে বিব্রত করে , ঠিকঠাক সেই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে না...