সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাত্ত্বিক মানে কি নিরামিষ খাবার ?

সাত্ত্বিক মানে কি নিরামিষ খাবার ?



কিছু কিছু দিব্যজ্ঞানীর অত্যাচারে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। এরা মনে করে, সাত্ত্বিক মানে নিরামিষ খাবার; এছাড়া এরা আরও মনে করে যে ধর্ম পালন করতে হলে নিরামিষ খাবারই খেতে হবে, আমিষ খাবার খাওয়া যাবে না; শুধু তাই নয়, এরপর এরা প্রশ্ন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কি মাছ মাংস নিবেদন করা সম্ভব ? তার মানে, এদের শেষ কথা হচ্ছে- ধর্মকর্ম করতে গেলে নিরামিষ খেতেই হবে আর এই নিরামিষ খেতে খেতে কাম-ক্রোধ ত্যাগ ক'রে হীন দুর্বল হয়ে মুসলমানদের হাতে মার খেয়ে হয় জন্মভূমি ত্যাগ করতে হবে, না হয় মরতে হবে। এদেরকে আমি জিজ্ঞেস করছি, এই যদি হয় শেষ পরিণতি, তাহলে সেই ধর্ম পালনের প্রয়োজনীয়তা কী, যে ধর্ম মানুষকে আত্মরক্ষা করার পথ দেখায় না বা আত্মরক্ষা করার শক্তি অর্জন করতে দেয় না ?

নিরামিষ খাবারের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে আমি নিরামিষ খাবারের সম্পূ্র্ণ বিরুদ্ধে, এই বিষয়টি আমার বিভিন্ন লেখায় অনেকবার প্রকাশ করেছি, আমার এসব লেখা পড়ে ঐ দিব্যজ্ঞানীরা আমাকে পরামর্শ দেয়, আপনি গীতার অমুক অমুক শ্লোক পড়ে দেখেন, সেখানে বলা আছে সাত্ত্বিক, তামসিক রাজসিক খাবারের কথা, এছাড়াও অমুক শ্লোকে দেখেন, সেখানে বলা আছে, কৃষ্ণকে পত্র পুষ্প ও ফল নিবেদন করার কথা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রথম কথা হলো, নিরামিষ খাবারের এই নিয়ম হিন্দু ধর্মের কোনো বৈশিষ্ট্য নয়, এটি জৈন মতবাদের একটি বৈশিষ্ট্য; এই জৈন মতবাদ থেকে এটি চৈতন্যদেব এর বৈষ্ণব মতবাদে অনুপ্রবেশ করেছে, যে বৈষ্ণব মতবাদের মূল বৈশিষ্ট্যই হলো কান্নাকাটি করা, এজন্যই তাদের কাছে নিরামিষ খাবার আদর্শ; কারণ অপরের হাতে বিশেষ করে মুসলমানদের হাতে ব্যক্তিগত বা সামাজিকভাবে মার না খেলে আপনি কাঁদবেন কিভাবে ? একটা কথা খুব ভালো করে স্মরণে রাখবেন, চৈতন্যদেবের আগে হিন্দু সমাজে নিরামিষ বলে কোনো কিছু ছিলো না।

যারা আমাকে গীতা পড়ার পরামর্শ দেয়, তাদেরকে বলছি- গীতার সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্মের সঠিক ব্যাখ্যা আমিই প্রথম ফেসবুকে লিখেছি; যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত না থেকেও ব্যাসদেব কিভাবে গীতা লিখলো, সেই ব্যাখ্যা আমিই প্রথম দিয়েছি;  সকল ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও, এখানে ধর্ম বলতে আসলে কোন ধর্মকে বোঝানো হয়েছে, সেই ব্যাখ্যাও আমিই প্রথম দিয়েছি: কৃষ্ণের জীবনে রাধার কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও গীতা মাহাত্ম্যে রাধা কোথা থেকে এলো, সেটাও আমি প্রথম বলেছি; এসব ছাড়াও সনাতন ধর্মের অনেক ধর্মতত্ত্ব আমি প্রকাশ করেছি বা ধর্মের ব্যাখ্যা আমি দিয়েছি, যা অসংখ্য মানুষকে হিন্দু ধর্মকে সহজভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে, এসব কথা কিন্তু কেউ আগে বলতে পারে নি এবং হাজার হাজার লোক সেগুলো পড়েছে, কারো ক্ষমতা হয় নি তার বিরোধিতা করার

আবার অনেক সময় এমনও হয়েছে, কারো কমেন্টের জবাব দেওয়ার জন্য জাস্ট অনুমান করে কমনসেন্স থেকে হয়তো একটি পোস্ট লিখেছি, পরে ধর্মগ্রন্থ পড়তে গিয়ে দেখেছি- সেই কথাগুলোই লিখা আছে। তখন আমি নিজেই অবাক হয়েছি যে, সেই ধর্মগ্রন্থ পড়ার আগেই সেগুলো আমি কিভাবে লিখতে পারলাম ?ছাড়াও সব সময় ই মাত্র ২৫ বা ৩০% আইডিয়া নিয়ে আমি একটা পোস্ট লিখা শুরু করি, লিখতে লিখতেই বাকি আইডিয়াগুলো আসে এবং সেভাবেই পোস্টটি শেষ করি, তারপর সেই পোস্ট যে কোন অবস্থায় পৌঁছায়, তার সাক্ষী তো আপনারা নিজেই এবং একটি পোস্ট লিখা শেষে আমার এই উপলব্ধি হয় যে, সেগুলো হয়তো ঈশ্বরই আমাকে দিয়ে লিখিয়েছে; কারণ, ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না থাকলে ওগুলো যে আমার পক্ষে লিখা সম্ভব নয়, সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝি।

এর আগে, বহু হিন্দু নামধারী নাস্তিক এবং আস্তিকরা, হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে আমাকে ঠেকানোর বহু চেষ্টা করেছে, ঈশ্বরের কৃপা ও ইচ্ছায় বিজ্ঞান ও যুক্তি ভিত্তিক  জবাব দিয়ে সকল ক্ষেত্রেই আমি উত্তীর্ণ হয়েছি এবং সেই সব বিষয় লক্ষ লক্ষ মানুষ জানতে পেরেছে। আমার জ্ঞানের বিষয়ে কোনো সংশয় থাকলে এবং আমার পরীক্ষা নিতে চাইলে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে যে কোনো প্রশ্ন করে আপনিও চেষ্টা করতে পারেন আমাকে ঠেকাতে; কে জানে, হয়তো আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমিও শিখতে পারবো নতুন কিছু এবং আপনার প্রশ্নের কারণেই আরও লক্ষ লক্ষ লোক  জানতে পারবে সেই নতুন তথ্য। আমি বিশ্বাস করি, প্রশ্ন যতই কঠিন হোক না কেনো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবশ্যই আমাকে পার করবেন।

যা হোক, ফিরে যাই নিরামিষ খাবারে, আমি নিরামিষ খাবারের পক্ষপাতী নই, এই কথা বিভিন্ন পোস্টে মাঝে মাঝে প্রকাশ পেলে যেসব দিব্যজ্ঞানীর কমেন্ট আমার পোস্টে আসে, দেখে নিন, সেরকম দুটি কমেন্ট-

কমলাক্ষ গিরীধারী দাস • Friends with Debasish Sarker
সনাতন ধর্মের সকল স্তরে সকল মাছ মাংস খেতে নিষেধ করা হয়েছে। গীতার ৩য় অধ্যায় এর ১২,১৩, ৭তম,৯ম অধ্যায়, মনুসংহিতার ৫ম অধ্যায়ের ১৫ নং শ্লোক গুলো পডুন। ভগবান মাছ মাংস ছেড়ে বিষ্ণু প্রসাদ খেতে বলেছেন। ভগবানের র্নিদেশ সব ক্ষেত্রে মানা উচিত। হোটেলে, ক্লাবে, টিউশন ঘরে আহার না করলে মৃত্যু হয় না। তবে আপনার লেখার কিছু অংশ বাস্তবতার সাথে মিললেও ভগবানের র্নিদেশ মানা উচিত

Arjun Chandra Das
kabarer moddhe o dhormo ache.jemon gita ache sresto ahar sattik,mane niramish.

এই দুটি কমেন্ট এসেছিল, আমার- গরুর মাংস খেলে হিন্দুদের জাত যায়, না ধর্ম নষ্ট হয়- পোস্টে, যেখানে আমি বলেছিলাম, খাবারে মধ্যে কোনো ধর্ম নেই এবং এটাও বুঝিয়েছিলাম যে, নিরামিষ খাবারের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

খাবার-দাবার সম্পর্কে গীতায় কী বলা আছে, সেটা বলার আগে এই দিব্যজ্ঞানীর কমেন্টের পোস্টমর্টেমটা একটু করে নিই।


দিব্যজ্ঞানী কমলাক্ষ গিরীধারী দাস প্র্থমেই বলেছে, “সনাতন ধর্মের সকল স্তরে সকল মাছ মাংস খেতে নিষেধ করা হয়েছে।

যদি স্তরগুলো উল্লেখ করতেন, তাহলে খুশি হতাম।

সবগুলো স্তর উল্লেখ না করলেও সে কিছু কিছু রেফারেন্স দিয়েছে, দেখা যাক সেখানে আসলে কী বলা হয়েছে, গিরিধারী আমাকে গীতার ৩য় অধ্যায় এর ১২,১৩, ৭তম, ৯ম অধ্যায়, মনুসংহিতার ৫ম অধ্যায়ের ১৫ নং শ্লোক গুলো পড়তে বলেছে। এখানে নাকি ভগবান মাছ মাংস ছেড়ে বিষ্ণু প্রসাদ খেতে বলেছেন!

গীতার ৩য় অধ্যায়ের ১২ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,

ইস্টান ভোগান হি বো দেবা দাস্যন্তে যজ্ঞভাবিতাঃ।
তৈর্দত্তানপ্রদায়ৈভ্যো যো ভুঙক্তে স্তেন এব সঃ।।

এর অর্থ- যজ্ঞের ফলে সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা তোমাদের বাঞ্ছিত ভোগ্যবস্তু প্রদান করেন। কিন্তু দেবতাদের প্রদত্ত বস্তু তাদেরকে নিবেদন না করে যে ভোগ করে সে নিশ্চয় চোর।

এর সরল মানে হলো, দেবতারাই আমাদেরকে আমাদের ভোগ্যবস্তু প্রদান করে, তাই তাদের নিবেদন করে আমাদের খাদ্য গ্রহন করা উচিত। এখানে কি বলা আছে যে, কোন খা্দ্য তাদেরকে নিবেদন করতে হবে ? যেহেতু বলা নেই যে কোন খাদ্য তাদেরকে নিবেদন করতে হবে, সেহেতু আমরা যা খাবো, সেটাই আমাদেরকে নিবেদন করতে হবে। এখন আমরা কী খাবো সেটা বলা আছে বেদ এ- এভাবে,

জীবস্য জীবস্মৃতম

এর মানে হলো এক জীব খাদ্যরূপে অপরজীবকে গ্রহন করবে। এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম, নাকি ? এই নিয়মকে অস্বীকার করে কেউ কি বাঁচতে পারে, না আপনি বাঁচতে পারবেন ?

এরপর গীতার ৩/১৩ নং শ্লোকে বলা আছে,

যজ্ঞশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাৎ।।

এর অর্থ- ভগবদ্ভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারণ তারা যজ্ঞাবিশিষ্ট অন্নাদি গ্রহণ করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য অন্নাদি পাক করে, তারা কেবল পাপই ভোজন করে।


এখানে প্রথম যে কথা বলা হয়েছে, তা হলো- ভগবদ্ভক্ত অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা সকল রকম পাপ থেকে মুক্ত হন। দ্বিতীয় কথা হলো- খাবার দাবারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলা্সিতাকে পাপ হিসেবে গন্য করা হয়েছে। এখানে কী বা আছে, কোনো খাবার আমাদেরকে খেতে হবে ?


এরপর গিরিধারী তার কমেন্ট বলেছে ৭ তম, এটা বলতে সে যদি বোঝায়, আগেরগুলোর মতোই ৩ অধ্যায়ের ৭ নং শ্লোক, তাহলে বলছি, সেখানে খাবার-দাবার নিয়ে কিছু বলা নেই। বিশ্বাস না হলে গীতা খুলে দেখে নিতে পারেন।

এরপর গিরিধারী বলেছে ৯ম অধ্যায়ের কথা, এই অধ্যায়ের নাম রাজগুহ্য যোগ, এই পুরো অধ্যায়েও খাবার-দাবারের ব্যাপারে কিছু বলা নেই, শুধু ২৬ নং শ্লোকে বলা আছে,

পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ।।

এর অর্থ- যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কামভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র পুষ্প ফল ও জল অর্পন করে, আমি তার সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি।

গীতার এই শ্লোকটিকে কোনো কোনো নিরামিষভোজী, নিরামিষ যে খেতেই হবে তার অকাট্য প্রমান হিসেবে পেশ করে, কিন্তু তারা তলিয়ে দেখে না যে, যে শরবতের কথা তারা বলছে, সেই শরবতে লবন না চিনি মেশানো আছে ?

এই শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, পত্র পুষ্প ফল ও জল তাকে অর্পন করতে, কিন্তু তিনি কি তার ভক্তদেরকে এগুলোই বা শুধু এগুলোই খেতে বলেছেন ? যদি শ্রীকৃষ্ণ তার ভক্তদেরকে এগুলোই খেতে বলে থাকে, তাহলে তো আমাদেরকে শুধু পত্র পুষ্প ফল ও জল খেয়েই থাকতে হবে। ফল ও জল না হয় খাওয়া যায় বা যাবে, কিন্তু পত্র ও পুষ্প অর্থাৎ পাতা ও ফুল কিভাবে খাওয়া যাবে ? কিছু কিছু সবজিজাত পাতা ও ফুল অবশ্য মানুষ খায়, কিন্তু সেগুলো কি মানুষ কোনো দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে ? করে না। তার মানে, যে পাতা ও ফুলের কথা বলা হয়েছে সেগুলো মানুষের খাদ্য নয়। এখন নিরামিষভোজীদের জন্য বাকি থাকলো ফল ও জল; এখন আপনারাই বলেন, আপনারা কি শুধু ফল ও জল খেয়ে থাকেন, অন্য কিছুও খান ?

গীতা শুধু পড়লেই হয় না, গীতার বাণীর মর্মকে উপলব্ধি করতে হয়। যেমন- এক জায়গায় বলা হয়েছে, কাম ক্রোধ নরকের দ্বার। তার মানে কি কাম ক্রোধকে ত্যাগ করতে বলা হয়েছে ? কাম ক্রোধকে কন্ট্রোল করতে বলা হয়েছে, যাতে তার দ্বারা কোনো অনর্থ না ঘটে। শ্রীকৃষ্ণ যদি কামকে ত্যাগ করতেন তাহলে কি তিনি বিয়ে করতেন ? ক্রোধকে ত্যাগ করলে কি তিনি শিশুপালকে হত্যা করতেন ? এভাবেই পত্র পুষ্প ফুল ও জল শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করার বিষয়টি হলো প্রতীকী, এর মাধ্যমে শুধুমাত্র সেগুলোই আমাদেরকে খেতে বলা হয় নি, বলা হয়েছে, দিনে অন্তত একবার হলেও তার উদ্দেশ্যে সেগুলো নিবেদন করে যেন তাকে স্মরণ করি; পত্র পুষ্প ফুল ও জল হলো শ্রদ্ধা প্রর্দশনের একটি মাধ্যম মাত্র, যেমন- শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধে বা মৃত কোনো বিখ্যাত মানুষের মূর্তির বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।


আপনারা অনেকেই হয়তো করে থাকেন বা কাউকে করতে দেখেছেন যে, ভাত খাওয়ার পূর্বে কেউ কেউ গ্লাস থেকে হাতে জল নিয়ে থালার চারপাশে বৃত্তের মতো জল দিয়ে ভাতকে প্রণাম করে খাওয়া শুরু করে, এটাও এক প্রকারের নিবেদন এবং উপরের শ্লোকে জল নিবেদনের যে কথা বলা হয়েছে, এটাও তার এক প্রকারের রূপ।

এরপর গিরিধারী, মনুসংহিতার ৫ম অধ্যায়ের ১৫ নং শ্লোকের কথা বলেছে, অনেকের মতো হয়তো এই দিব্যজ্ঞানীও জানে না যে, মনুসংহিতা হিন্দু ধর্মের কোনো গ্রন্থ নয়, এটা সিন্ধু সভ্যতার এক রাজা স্বায়ম্ভূব, যে চালাকি করে নিজের নামের সাথে মনু লাগিয়ে নিজকে ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং রাজ্য পরিচালনার জন্য একটি সংবিধান রচনা করে যার নাম মনুসংহিতা। হিন্দু ধর্মের কোনো গ্রন্থ না হলেও অনেক মূল্যবান গ্রন্থের মতো এটিও একটি গ্রন্থ, তাই এই গ্রন্থের যা ভালো তা যেমন অনায়াসে গ্রহন করা যায়, তেমনি যা ভালো নয়, তাকেও অনায়াসে ছুঁড়ে ফেলা যায়, এতে কোনো পাপ নেই বা পাপ হবে না।

প্রথম দিব্যজ্ঞানী গিরিধারীর রেফারেন্স এর ব্যাখ্যা এতক্ষণ দিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় দিব্যজ্ঞানী Arjun Chandra Das আমার কথাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছে, “খাবারের মধ্যেও ধর্ম আছে, যেমন গীতায় আছে, শ্রেষ্ঠ আহার সাত্ত্বিক, মানে নিরামিষ।

এই বিষয়টাই আজকের পোস্টের বিষয়বস্তু, তাই এটা নিয়ে আর আলাদা করে কিছু বলছি না। খাবার দাবার নিয়ে গীতায় কী বলা আছে, সেই আলোচনা করবো পোস্টের শেষে, তার আগে একটু দেখে নিন, নিরামিষ খাবার সম্পর্কে হিন্দু ত্রাতা ড. রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী তার বিপথগামী হিন্দুধর্ম ও হিন্দুর ভবিষ্যপুস্তিকায় কী বলেছেন-

গুপ্তযুগের আগে হিন্দুধর্ম ছিলো যজ্ঞ ও পশুবলির ধর্ম, হিন্দুরা ছিলো একটি মাংসাহারী জাতি। শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন ক্ষত্রিয়। মনুসংহিতা অনুসারে এই ক্ষত্রিয়দের সমস্ত রকম পানাহার বৈধ। বাল্মীকি রামায়নে অন্তত ১৫ জায়গায় বলা আছে, বনবাসকালে রাম বন্য প্রাণী স্বীকার করে নিয়মিত তার মাংসা আহার করতেন। কোথাও আছে শ্রীরাম বন্যহরিণ বা বরাহ শিকার করে তা পুড়িয়ে স্ত্রী সীতা, বনের মুনি ঋষিগণ এবং ভাই লক্ষ্মণের সাথে আহার করছেন। আবার কোথাও কোথাও বড় একটা গোসাপ পুড়িয়ে তা আহার করছেন।

গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস পরিচালনা করছে একটি শক্তিশালী নিরামিষভোজী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী, তাদের প্রকাশিত বাল্মীকি রামায়নের যে যে শ্লোকে রাম, সীতার মাংস খাওয়া পরিষ্কার বর্ণনা আছে, সেখানে পাদটীকা ছাপিয়ে দিয়ে বলেছে, এই শ্লোকে মাংসের বদলে অমুক অমুক মূল বুঝতে হবে। কারণ, তাদের মতে রামের পক্ষে মাংস খাওয়া অসম্ভব এক ব্যাপার।

অহিংসার কথা বললে বৌদ্ধরা মাংস খাওয়ার বিরোধী নয়। এখনো তারা গরুসহ সকল প্রাণীর মাংস খায়। বৌদ্ধদের মতে প্রাণী হত্যা করা পাপ, কিন্তু অন্যের হত্যা করা প্রাণীর মাংস খাওয়া পাপ নয়। অহিংসা তত্ত্বের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু হয়েছিলো বাসি শুকরে মাংস খেয়ে।


যা হোক, আবার নিজের কথা শুরু করছি, এতে গীতার উদাহরণ দেওয়ার আগে রামায়ণ নিয়ে একটু আলোচনা করি, একটু আগেই পড়লেন যে, বাল্মীকি রামায়নে অন্তত ১৫ জায়গায় বলা আছে, বনবাসকালে রাম বন্য প্রাণী স্বীকার করে নিয়মিত তার মাংসা আহার করতেন। কিন্তু নিরামিষভোজীরা সেই রামায়ন নতুন করে প্রিন্ট করতে গিয়ে রাম সীতার সেই মাংস খাওয়ার শ্লোকের অর্থ পাল্টে দেওয়ার জন্য বলেছে, এই শ্লোকে মাংসের বদলে অমুক অমুক মূল বুঝতে হবে, এখন আপনারাই বোঝার চেষ্টা করুন প্রকৃত ব্যাপারটা আসলে কী ?এছাড়াও সংস্কৃত মহাভারতে বলা আছে, ভীম ছিলেন মাংসলোভী পেটুক। তাহলে ভীম কি একাই মাংস খেতো, না অন্যরাও খেতো ?

এবার রামায়নের একটা ঘটনা বলি, কমনসেন্স দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করবেন। আপনারা অনেকেই জানেন যে, সীতার আবদার মেটাতে গিয়ে এক হরিণের পেছনে ছুটতে গিয়ে রাম সীতাকে একা ফেলে দূরে চলে যায়, অনেকক্ষণ রাম আর ফিরছে না বলে, সীতা লক্ষণকে আবার রামের খোঁজে পাঠায়, এই ফাঁকে সীতাকে একা পেয়ে রাবন তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়

এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, সীতা কেনো রামকে হরিণকে ধরতে বা শিকার করতে পাঠিয়েছিলো ? সীতার কি তখন হরিণ পোষার শখ হয়েছিলো ? কারো কারো এটাও মনে হতে পারে, কিন্তু তারা ভুলে যায় যে, সীতা তখন ছিলো জঙ্গলে, তখন তার হরিণ পোষার মতো কোনো বিলাসিতা ছিলো, শুধু তাই নয়, পোষা হরিণের মতো সীতা সেই জঙ্গলে যখন তখন হরিণ দেখতে পেতো। তাহলে সীতা কেনো হরিণটি চেয়েছিলো ? কেউ কেউ বলতে পারে, সেটা ছিলো সোনার হরিণ। কিন্তু আপনার কমনসেন্স কী বলে, সোনার হরিণ বলে কি কিছু হয় ? রাম সীতার হরিণের মাংস খাওয়াকে আড়াল করার জন্য আমাদের নিরামিষভোজী রামায়ণ অনুবাদকেরা বাস্তব হরিণকে সোনার হরিণ বানিয়ে দিয়ে আমাদের চোখে ধুলা দিয়েছে, আর সেই ধুলাকে এখন পর্যন্ত আমরা চোখ থেকে সরাতে পারি নি।

যা হোক, এটা পরিষ্কার যে, সীতা হরিণের মাংস খাওয়ার জন্যই রামকে হরিণ ধরে আনতে বলেছিলো এবং রাম সীতা লক্ষণ যে বনে পশুর মাংস খেতো, সেটা মূল রামায়ণের অন্তত ১৫ জায়গায় বলা আছে, যেটা একটু আগেই আপনারা জেনেছেন। তাছাড়া এটাও জেনেছেন যে, মনুসংহিতা অনুসারে ক্ষত্রিয়দের জন্য সমস্ত রকম পানাহার ছিলো বৈধ, তাই এটা ভুলে যাবেন না যে, রাম ছিলো ক্ষত্রিয় এমনকি কৃষ্ণও ছিলো ক্ষত্রিয়, তাই তাদের খাদ্যের মেনুটা কীরকম ছিলো, সেটা একটু কল্পনা করে নিন। শুধু তাই নয়, সংস্কৃত মহাভারতের অনেক জায়গায় পাণ্ডবদের মাংস খাওয়ার অনেক ঘটনা আছে এবং যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য মাংস খাওয়ার প্রভূত ব্যবস্থা ছিলো, সেখানে নিমন্ত্রিত ছিলো কৃষ্ণও। এছাড়াও এক জায়গায় কৃষ্ণ ও অর্জুন মিলে বনে গিয়ে শিকার করছেন, এমন বর্ণনাও আছে।

এখন দেখা যাক, গীতায় খাবার সম্পর্কে কী বলা আছে ?

গীতার ১৭/৮ শ্লোকে বলা আছে,

আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্ধনাঃ।
রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যা আহারাঃ সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ।।

এর অর্থ - আয়ু, বল, রোগহীনতা, চিত্ত প্রসন্নতা ও রুচি বর্ধনকারী রসযুক্ত, স্নিগ্ধ, এবং প্রীতিকর খাদ্য সা্ত্ত্বিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।

এখানে কি বলা আছে যে, সাত্ত্বিক মানে নিরামিষ খাবার ? এখানে শুধু সাত্ত্বিক খাবারের বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে এবং কোন ধরণের খাবার সাত্ত্বিক লোকজন পছন্দ করেন সেই বিষয়ে বলা আছে

এরপর দেখুন রাজসিক আহার বলতে কী বোঝানো হয়েছে,

কট্বম্ললবণাত্যুষ্ণতীক্ষ্ণরূক্ষবিদাহিনঃ।
আহারা রাজসসেষ্ট্যা দুঃখশোকাময়প্রদাঃ।।” (১৭/৯)

এর অর্থ - অতি কটু, অতি অম্ল, অতি লবনাক্ত, অতি উষ্ণ, তীক্ষ্ণ বিদাহী এবং দুঃখ, শোক ও রোগ উৎপাদনকারী।

এখন আপনারাই বলেন, এই ধরণের খাবার কি সাধারণত কেউ খায় ? আর এখানেও কি বলা আছে যে রাজসিক খাবার কী কী ? এরপর দেখুন তামসিক আহারের ব্যাপারটা আসলে কী ?

যাতযামং গতরসং পূতি পর্যুষিতং চ ষৎ।
উচ্ছষ্টমপি চামেধ্যং ভোজনং তামসপ্রিয়ম্।” (গীতা, ১৭/১০)

এর অর্থ - যে খাদ্য অনেক আগে রান্না করা হয়েছে, যার রস শুকিয়ে গেছে, যা দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র, তা তামসিক ।

এখন আপনারাই বলেন, এই ধরণের খাবার কি সাধারণত কেউ কখনো খায় ? আর এখানেও কি বলা হয়েছে, তামসিক খাবার কোনগুলো ? এখানেও শুধু তামসিক খাবারের বৈশিষ্ট্যের কথা ই বলা হয়েছে।

আপনারা অনেকেই জানেন, স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগোতে যে বিশ্ব ধর্মসম্মেলন হয়েছিলো, তাতে যোগ দিতে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। সেই সময় চার বছর তিনি আমেরিকায় ছিলেন, সেই সময় যাদের বাড়িতে তিনি আশ্রয় পেয়েছিলেন, তারা যা খেতো, স্বামীজীকেও তাই খেতে হতো। অনেকেই জানেন যে, হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে খাওয়া নিয়ে অনেক বাছ বিচার থাকলেও খ্রিষ্টানদের মধ্যে তা নেই, তারা গরু শুয়োর সহ যা খাওয়া যায়- সবই খায়, স্বামীজীকেও সেই চার বছর সেই সব খাবারই খেতে হয়েছিলো। আমেরিকায় এবং পরে ইউরোপ ভ্রমণের সময় স্বামীজী এসব খাবার খেলেও দেশে ফিরে তিনি কখনো হিন্দু শাস্ত্রে নিষিদ্ধ কোনো খাবার খান নি। কিন্তু তিনি কখনো নিরামিষভোজীও ছিলেন না, মাছ মাংস খেয়ে গেছেন জীবনের শেষ পর্যন্ত। শাস্ত্র না পড়েই যারা মনে করেন যে, হিন্দু ধর্মে নিরামিষ খাবারের কথা বলা আছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করছি, আপনার কি মনে হয়, হিন্দু শাস্ত্র সম্পর্কে স্বামীজীর কম জ্ঞান ছিলো ? স্বামীজী জানতেন যে, হিন্দু শাস্ত্রে কোথাও নিরামিষ খাবারের কথা বলা নেই, তাই তিনি নিরামিষ খেতেন না, শুধু তাই নয়, স্বামীজী আরো জানতেন যে, নিরামিষ খাবারের কুফল কতটা, তাই তিনি বলেছেন,




অহিংসার নামে অস্ত্র ত্যাগ এবং নিরামিষ আহার হিন্দু জাতির পতন ও হাজার বছরের পরাধীনতার অন্যতম কারণ।

নিরামিষ ভোজী বড় জোর একটা হাতি হতে পারে, যে হাতির অনেক শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে কেউ বনের রাজা বলে না, যে হাতিকে মাহুত লোহার অঙ্কুশ দিয়ে খোঁচা মারতে পারে আর তাকে নিজের মতো করে চালনা করতে পারে। কিন্ত বনের রাজা হয় আমিষ ভোজী বাঘ বা সিংহই, যাকে নিজের মতো করে চালনা করার কথা কেউ ভাবে না।

লড়াইয়ের ময়দানে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে গেলে যে ক্ষিপ্রতা, সাহস ও তাৎক্ষণিক তীক্ষ্ণ বুদ্ধির দরকার তার জন্য আমিষ বা এ্যানিমাল প্রোটিন একান্তভাবে দরকার। একারণে পৃথিবীর কোনো দেশের সামরিক বাহিনীতে নিরামিষের কোনো স্থান নেই।

তাই আমি মনে করি, নিরামিষ প্রথার স্থান কোনো বাড়িতে হওয়াও উচিত নয়, যদি আমরা নিজেরা লড়াই করে টিকে থাকতে চাই। আর যদি আপনি মার খেতে চান, দেশ থেকে বিতাড়িত হতে চান বা মরতে চান, তাহলে আপনার জন্য চৈতন্যদেবের আদর্শ এবং নিরামিষ খাবারই উত্তম। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, আসলে আপনি কী চান ? টিকে থাকতে চান, বাঁচতে চান; না মার খেতে, বিতাড়িত হতে এবং মরতে চান ?


জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।




পরিশিষ্ট :

আমি জানি, এই পোস্ট পড়েও কিছু লোক আমার ঘোর সমালোচনা করবে; কারণ, তারা বিচার মানে, কিন্তু তাল গাছের অধিকার ছাড়ে না, তাই এইসব ব্যক্তিদের বিরোধিতায় আমার কিছুই যায় আসে না; কারণ, সত্যকে তুলে ধরার জন্যই আমার জন্ম এবং আমি তা করে যাবো তবুও, যারা আমার বিরোধিতা করবে, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, প্রচলিত বিশ্বাসকে গড়পরতায় আঁকড়ে না ধরে, আমার কোন তথ্যটি মিথ্যা, পারলে সেই বিষয়টিকে নির্দেশ করুন আর একটা কথা মনে রাখবেন, যারা হিন্দু সমাজ ধর্মের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে চায়, তারা আমার মতোই কথা বলতে বাধ্য

মন্তব্যসমূহ

  1. পুরোটা পরে আমি যা উপলব্ধি করলাম তা এই হলো যে আপনি সম্পূর্ণ নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে গেলেন এবং নিজের সিদ্ধান্ত পাঠকের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। আপনি যেমন গিতার রেফারেন্স দিয়ে নিরামিষ খাবার কে খণ্ডন করলেন তেমনি গিতার রেফারেন্স দিয়ে আমিষ ভোজন সাত্ত্বিক তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেন না। আমি রিকবেদ এর একটা শ্লোক উল্লেখ করছি যা আমিষ ভোজন কে খণ্ডন করে।

    अनुमंता विशसिता निहन्ता क्रयविक्रयी।
    संस्कर्त्ता चोपहर्त्ता च खादकश्चेति घातका: ॥

    উত্তরমুছুন
  2. আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নিরামিষের (শাকসবজি) চেয়ে আমিষ (মাছ-মাংস) খেতেই বেশি ভালোবাসেন। এটা সত্যি যে, খাবারে আমিষ বেশ সুবিধার। আর প্রোটিনের উৎসও বটে। যা শরীর গঠনে সাহায্য করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন উল্টো কথা। নিরামিষ জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের পক্ষেও ভালো।

    ফলমূলে রয়েছে নানা প্রাকৃতিক শর্করা, যা শক্তিবর্ধক। তেমনি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ফল। নিরামিষ জাতীয় খাবারে ত্বক কোমল হয়। যারা নিরামিষভোজী, তাদের খাদ্য তালিকায় ফলমূল বেশি থাকে। আর এটি কারও অজানা নেই যে, ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে পানি। যা ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করে। নিরামিষ জাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, যা শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে।

    অন্যদিকে আমিষের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কি বলছে? এক সমীক্ষায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ৩০ হাজার মহিলার ওপর গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে যারা আমিষ গ্রহণ করেন তারা অধিকহারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। পক্ষান্তরে নিরামিষভোজীরা হৃদরোগ থেকে অধিক সুরক্ষা পায়। কারণ, মাছ-মাংসে ফ্যাট থাকে। এর অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ফলে, এর কারণে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের মতোও মরণব্যাধি রোগ হতে পারে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম মাংস গ্রহণে শরীর থেকে মল আকারে বের হতে ৩-৪ দিন লাগে। বেশি সময় থাকার কারণে শরীরে মাংস পচে বিষক্রিয়া করে, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের মতো রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়াও আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণে আমাদের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। এসব খাবার শরীরকে দ্রুত ক্লান্ত করে তোলে।by QOURA,google.

    উত্তরমুছুন
  3. অনেক পুরাতন পোস্ট জানিনা এখনো রিপ্লাই দেন কি না তাও কমেন্ট করছি।

    কিছু দিন যাবত প্রায় বিদেশি পরিচালিত এক বিশেষ হিন্দু সম্প্রদায়ের খাদ্য নিয়ে ধাস্টেপনা সহ্য করতে না পেরে আমি অনলাইন এ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আপনার পোস্ট টা পেলাম।
    গীতার তিন ধরনের খাদ্য বর্ণনা সম্পর্কে আপনার সাথে আমিও একমত কিন্তু বাকি যেমন রামায়নের মাসাহার ইত্যাদির যে উল্লেখ করেছেন তার আসল শ্লোক গুলো উধৃত করে দিলে খুব ভালো হয়।
    আমার কাছে খুব বেশি বই না থাকার কারণে আপনাকে এই অনুরোধ করছি।

    উত্তরমুছুন
  4. আমাদের সাত্তিক খাবার অর্থাৎ নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা উচিত

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব

পয়েন্ট টু পয়েন্ট : মুসলমানদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব ফটো হিসেবে এই প্রবন্ধের সাথে যেটা যুক্ত করেছি , তার জবাব দেওয়া ই আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য। তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক: ফটোপোস্টের শুরুতেই লিখা হয়েছে , “ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই , কোন প্রতিমূর্তি নেই , কোন প্রতিকৃতি নেই , কোন রূপক নেই , কোন ফটোগ্রাফ নেই , তাঁর কোন ভাস্কর্য নেই। ” এর রেফারেন্স হিসেবে লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ , অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ এবং যযুর্বেদ অধ্যায় ৩২ , অনুচ্ছেদ ১৯। ” এবার দেখা যাক , সত্যিই সেখানে কী লিখা আছে এবং তার প্রকৃত অনুবাদটা কী ? রেফারেন্স হিসেবে প্রথম বইয়ের নাম লিখা হয়েছে , “ শ্বেতাসত্র উপনিষদ ”, কিন্তু এর নাম প্রকৃতপক্ষে “ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ”, লিখেছে তো কোনো এক মুসলমান , তার কাছ থেকে আপনি আর কত শুদ্ধ বানান আশা করতে পারেন ? রেফারেন্সের বাকি অংশে লিখা হয়েছে- “ অধ্যায় ৪ , পরিচ্ছেদ ১৯ ”, অধ্যায় ৪ ঠিক থাকলেও এই উপনিষদে অনুচ্ছেদ বলে কিছু হয় না , এটি হবে আসলে শ্লোক নং ১৯। শুধু এই রেফারেন্সেই নয় , প্রতিটি রেফারেন্সেই দেখবেন কিছু না কিছ

হিন্দুদের এত দেবতা, আসলে কোনটা বড় ?

হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? এবং ইসলাম নাকি সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম ! উপরের এই দুটো প্রসঙ্গসহ মুসলমানদের করা আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে জানতে চেয়ে ছিলো Pritam Das নামের আমার এক ফেসবুক বন্ধু। শুরুতেই দেখে নিন সেই প্রসঙ্গগুলো- মুসলমানরা বলে যে , একটা হাতির মুখ মানুষের শরীরে কি করে বসানো যায় ? কী যুক্তি আছে এটার পেছনে ? আর সেইটাকে তোমরা হিন্দুরা আবার পূজাও করো! আবার সেই গনেশের একটা কলা গাছ বউও আছে। তারপর হুনুমান কী করে উড়তে পারে ? কী করে একাই একটা লংকা জ্বালিয়ে দিতে পারে ? এছাড়াও বলে যে ইসলাম নাকি পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম , হিন্দু ধর্ম অনেক পরে এসেছে। পৃথিবী কবে শেষ হবে তা নাকি ওদের কোরানে লেখা আছে। আর মাঝে মধ্যে প্রায় জিজ্ঞেস করে হিন্দুদের এত দেবতা , আসলে কোনটা বড় ? কোনো না কোনো তো একটা বড় দেবতা হয়েই যায়। সবাই তো এক দেবতা পূজা করে না। কেউ কেউ তো আলাদা পূজা করে , তাহলে হিন্দুদের মধ্যে দেবতা নিয়ে একতার অভাব। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি... এবার দেখুন আমার জবাব: মুসলমানরা হিন্দুদেরকে ধর্ম বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে বিব্রত করে , ঠিকঠাক সেই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে না

বেদ এ ‘‘পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত’’- =>এছাড়া মা- ছেলে দূষ্কর্ম, এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?”

“ রিগবেদ ---- অধ্যায় - ৩ , খন্ড - ৩১ , শ্লোক : ১ - ২ ‘‘ পিতা তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত ’’- => এছাড়া মা - ছেলে দূষ্কর্ম , এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে ?” ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছে Md Alhaz Hosain নামের এক মুসলমান আমার এক পোস্টের কমেন্ট বক্সে। বেদ এ্রর এই বাণীতে আসলেই কী বলা হয়েছে , সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন আমার এই পোস্টে : ফেসবুকে মুসলমানদের কমেন্ট মানেই গালাগালি , খিস্তি। এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে , মুসলমানরা যুক্তি বোঝে না। কারণ , যারা যুক্তি বোঝে তারা যুক্তি দিয়ে কথা বলে , প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে তাদের গালি - গালাজের প্রয়োজন হয় না। এজন্য তথ্য রেফারেন্স দিয়ে লেখার পরও যারা সেসবে নজর না দিয়ে গালাগালি করে তাদের কমন্টেকে আমি রাস্তার পাগলা কুত্তার ঘেউ ঘেউ বলেই মনে করি , তাই সেগুলোকে কোনো গুরুত্বই দিই না। কিন্তু আজকে যে কমেন্টটির উত্তর দিচ্ছি , সে বেশ ভদ্রভাবেই কথাগুলো তুলে ধরেছে ; তাই তার লেখার জবাব দিচ্ছি , যদিও পাগলা